২৪ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১:০০

করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি

দেশের করোনা পরিস্থিতি খুব দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা শনাক্ত এবং মৃত্যু। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন আরও ৮৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৭ জনে। এছাড়া একদিনে দেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৭২৭ জন। এতে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন। এ অবস্থায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও চলমান বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে। তা নাহলে পরিস্থিতি শোচনীয় অবস্থায় যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সারা দেশে করোনা ভাইরাসে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে গেলে আবারও লকডাউন ঘোষণা হতে পারে।
গতকাল বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৬৮ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৮ হাজার ২৫৬ জনের। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এর আগে মঙ্গলবার দেশে করোনায় ৭৬ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া আরও ৪ হাজার ৮৪৬ জনের করোনা শনাক্তের কথাও জানানো হয়।
জুন মাসে ৬০ হাজার ৬৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন বিভাগে করোনা পরিস্থিতির অনেক অবনতি ঘটেছে। বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুরে শনাক্তের হার বেড়ে গেছে এই এক সপ্তাহে। শুধু রাজশাহীতে সাপ্তাহিক হিসেবে শনাক্তের হার কমেছে। এ ছাড়া, কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে সিলেট। এক সপ্তাহে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে খুলনায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে বলা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মৃত্যুও। অনলাইন ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, জুনে ৬০ হাজার ৬৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন বিভাগে করোনা পরিস্থিতির অনেক অবনতি ঘটেছে। বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুরে শনাক্তের হার বেড়ে গেছে এই এক সপ্তাহে। শুধু রাজশাহীতে সাপ্তাহিক হিসেবে শনাক্তের হার কমেছে। এ ছাড়া, কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে সিলেট। এক সপ্তাহে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে খুলনায়।
রোবেদ আমিন বলেন, এ অবস্থায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও চলমান বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে। তা নাহলে পরিস্থিতি শোচনীয় অবস্থায় যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অনেক বেড ও আইসিইউ খালি আছে। তবে, সীমান্ত এলাকার হাসপাতালগুলোর চিত্র ভিন্ন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে অনেক বেশি। কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা বাড়ছে।
টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৪৩ জনকে সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজারের টিকা ২৪০টি ডোজ দেয়া হয়েছে প্রথমদিনে। আরও টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। কয়েক মাসের মধ্যে টিকা সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার আশা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’
ডেঙ্গুর বিষয়ে সাবধান করে দিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, জুনে ১২২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণে ডায়রিয়া পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছিল, তা এখন স্থিতিশীল। বান্দরবানের আলীকদমে পরিস্থিতি ভালোর দিকে।
রোবেদ আমিন বলেন, ইদানীং সাপের দংশনের ঘটনা বাড়ছে। দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টি ভেনম সরবরাহ করা হচ্ছে। ৭০টি উপজেলায় হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের কর্নার সাজানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে সব উপজেলায় এ কাজ সম্প্রসারিত করা হবে। এ ছাড়া, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের জন্য ট্রেনিং মডিউল তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকায় লকডাউন জরুরি বলে মনে করছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোতে ঘোষিত লকডাউন যদি নিশ্চিত করা যায়, তবে, ঢাকায় লকডাউনের জরুরি প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে, ওইসব জেলা থেকে মানুষের প্রবেশ ঠেকানো না গেলে ঢাকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো লকডাউন দেওয়ার দরকার হতে পারে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ঘাটতি পূরণের বিষয়টি এখন কী অবস্থায় আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে, এখনো হাতে পাচ্ছি না। অল্টারনেটিভ টিকা পেলেও এ সমস্যার সমাধান করা যাবে। বিদেশগামী শ্রমিকদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি, তাদের অন্য কোনো টিকার ডোজ দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করা হবে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে রাজধানীর আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। প্রয়োজনে লকডাউন এলাকা বাড়ানো হবে, এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এমতাবস্থায় সারা দেশে আবারও সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হবে কিনা প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, আমরা আপাতত ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলার সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখছি। যদি সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি এবং ঢাকার পরিস্থিতি নাজুক হয়, তাহলে শুরুতে ঢাকায় লকডাউনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে এসব এলাকার কোনো গণপরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে না।
এদিকে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৮ হাজার ২২৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২১৪ জন। এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩৯১ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ৮৭৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৫ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন তিন কোটি ২৭ হাজার ৮৫০ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৯০ হাজার ৬৯১ জনের। আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৯৭ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ২ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ১০ হাজার ৮২৯ জন। এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৯ হাজার ২৯৩ জন।
আক্রান্তের তালিকায় রাশিয়া ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, ইতালি নবম ও কলম্বিয়া দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১তম।

https://dailysangram.com/post/456504