১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫২

কঠোর লকডাউনে যানজট!

সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চলাচল নিয়ন্ত্রণে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসেছে পুলিশের চেকপোস্ট। এসব পোস্টে পুলিশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া চেকপোস্ট অতিক্রম করতে দেয়া হচ্ছে না। যারা অকারণে বাসা থেকে বের হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে সকাল থেকে নগরীর চেকপোস্টগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এছাড়া গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে রাজধানীর হোটেল রেডিসনের সামনের সড়ক থেকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। সেই জট পৌঁছে যায় এয়ারপোর্ট সড়ক পর্যন্ত।
রেডিসনের সামনে থাকা পুলিশ চেকপোস্টে প্রতিটি গাড়ি চেক করা হয়েছে। প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কোথা থেকে এসেছে। একটি করে গাড়ি চেক করতে গিয়ে রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়কে তৈরি হয়েছে বিশাল যানজট।

চেকপোস্টে থাকা এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অফিস খোলা রাখায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উপর থেকে চাপ আছে, প্রতিটি গাড়ি চেক করে ছাড়তে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন করলে অফিসে যাচ্ছে, এক্সপোর্ট ডিউটির গাড়ি, ডাক্তার বা নার্সের গাড়ি, টিকা নিতে যাচ্ছে, এমন সব কারণ বলেন সবাই। ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে, কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে কড়াকড়ি থাকলেও দ্বিতীয় দিন গতকাল মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টে খুব একটা কড়াকড়ি দেখা যায়নি। তবে কোথাও কোথাও গাড়ি থামিয়ে ‘মুভমেন্ট পাস’ আছে কিনা চেক করছে পুলিশ। তবে পুলিশি চেকপোস্টের কারণে রাজধানীর মধ্যবাড্ডা, গুলশান-১ এর পুলিশ প্লাজা থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত এবং রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে যানজট পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখা গেছে। মগবাজার, মৌচাক ও মালিবাগ, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, শ্যামলি মোড়েও ছিল একই চিত্র।

জরুরি কাজে অফিসমুখী যাত্রীদের ছেড়ে দেয়া হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যারা বের হয়েছেন, তাদের পড়তে হচ্ছে পুলিশের জেরার মুখে। যারা জরুরি সেবা দিতে অফিসে যাচ্ছেন তাদের বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই পুলিশের। অন্যদের ক্ষেত্রে মুভমেন্ট পাসকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।

গতকাল অবশ্য সড়কে নামা রিকশা নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি পুলিশ। টহলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল বলেন, রিকশায় অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছে। ব্যাংক ও কিছু অফিস খোলা থাকায় অনেকে অফিসে যাচ্ছেন। তাই আমরা এই সময়টাতে রিকশা চলাচলে কিছুটা ছাড় দিচ্ছি।

সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলি, শ্যামলী, আসাদগেট, মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র গাবতলি ও শাহবাগে কিছুটা কড়াকড়ি রয়েছে। তবে লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকসহ জরুরি যেসব অফিস খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা রাস্তায় নেমে অফিসে পৌঁছাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কর্মীদের অফিসে নিয়ে যেতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হলেও বাস্তবে দেখা গেছে অফিসে পৌঁছানোর উপায় কর্মীদেরই খুঁজে বের করতে হয়েছে। দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না। রিকশা চললেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া রিকশাওয়ালারা ভাড়াও হাঁকছেন অনেক বেশি।

রাস্তায় গাড়ির চাপ না থাকায় বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা থাকলেও পুলিশের চেক পোস্টের কারণে কোনো কোনো সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেসব সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে। গাবতলি চেকপোস্টে থাকা পুলিশের এসআই ইকবাল মাহমুদ বলেন, গত বুধবাররের চাইতে গতকাল গাড়ির চাপ বেড়েছে। মুভমেন্ট পাস নিয়ে অনেকেই জরুরি কাজের চাইতে ব্যক্তিগত কাজে বেশি বের হতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে মামলা ও সচেতন করা হয়েছে।

ফার্মগেট চেকপোস্ট পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গতকাল পাস নিয়ে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রাস্তায় যারা বের হয়েছেন বেশির ভাগেরই পাস রয়েছে। শাহবাগ চেকপোস্টে এসআই আশিষ রায় বলেন, মুভমেন্ট পাস ছাড়া আমরা কাউকে যেতে দিচ্ছি না। তবে জরুরি চিকিৎসা সেবা কাজে নিয়োজিতদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/374181