১৭ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১১:২৮

ইন্টারনেট সেবায় অচলাবস্থা গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : জুনায়েদ আলম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। করোনা মহামারির কারণে তাকে ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে। তিনি জানান, তার উত্তরার বাসায় ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট দুটোই ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সকালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় খুব সমস্যা হয়। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বারবার সংযোগ আসে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জুম কিংবা ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ- দুই মাধ্যমেই ক্লাস করতে খুব সমস্যা হয়। বিকল্প হিসেবে দুটি মোবাইল অপারেটরের সিমকার্ডেই ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়া আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের পরীক্ষার উদাহরণ দিয়ে ইন্টারনেটের গতিতে ‘এক নম্বর’ দাবি করা অপারেটরের নেটওয়ার্কেও এ সংযোগ এত দুর্বল থাকে যে, জুম প্ল্যাটফর্মে ‘ইন্টারনেট কানেকশন আনস্টেবল’ দেখা যায়, সংযোগ পাওয়া যায় না। একইরকম অভিযোগ করেন পেশায় প্রকৌশলী মাসুদুল হক। তিনি জানান, সরকারি ভয়েস কলে কথা বলতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক মিনিটের মাথায় কল ড্রপ হয়। আবার ইন্টারনেট সংযোগে গেলে নি¤œগতি আর ‘ফ্লাকচুয়েশন’ (বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন) হওয়ার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে কখনও খুব ভালো, আবার কখনও নেটওয়ার্কই থাকে না। আবার রাউটারে নেটওয়ার্ক ফুল দেখালেও প্রকৃতপক্ষে ব্যান্ডউইথ শূন্য থাকে। ফলে কোনো সাইটে ঢোকাই যায় না।

শুধু এ দু’জন নন- প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় প্রায় সব গ্রাহককেই। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের মতামত নেন। তাদের বিবেচনায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সাধারণ গ্রাহকই একই ধরনের অভিযোগ করেন। বিষয়টি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে এবং সংস্থাটির গণশুনানিতেও বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকসেবার মান বাড়েনি।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেড়েছে জনসাধারণের ইন্টারনেট ব্যবহার। অফিস-আদালতে কর্মের সময়সীমা সংকুচিত হওয়ায় এখনো বেশিরভাগ কাজ করতে হচ্ছে অনলাইনে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন পুরোদমে চলছে অনলাইন ক্লাস। তাছাড়া শপিং এবং বিনোদনের মাধ্যমও হয়ে উঠেছে অনলাইনভিত্তিক। করোনার কারণে শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ইন্টারনেট সেবায় নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে ডাটা প্যাকেজের ব্যবহারও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে গ্রাহকরা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে ডাটা প্যাকেজ কিনলেও ইন্টারনেট সেবার ব্যাপক ধীরগতি এবং ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ স্বল্পতার কারণে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকক্ষেত্রে ফোরজি’র ইন্টারনেটে টুজি’র সেবাও মিলছে না। জানা গেছে, ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধিতে কাজ করে সেই স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ প্রয়োজনের অর্ধেকও নেই মোবাইল কোম্পানির অপারেটরদের। গেল দুই বছর ধরে মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যাও সেভাবে বাড়েনি। বিটিআরসি দুই বছর আগে চারটি কোম্পানিকে টাওয়ার ব্যবস্থাপনার লাইন্সেস দিলেও তিনটি কোম্পানি এখনো কাজই শুরু করেননি। ফলে ইন্টারনেট সেবায় চলছে অচলাবস্থা। পরিস্থিতির কারণে এমন অচলাবস্থার মধ্যেও প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক বেড়েছে। কিন্তু বাড়ছে না ইন্টারনেটের গতিবেগ অবস্থা, কমে যাচ্ছে ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ। ২০২০ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিজিটাল সেবার মান নিশ্চিতকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকায় শেষ দিকে।

এদিকে মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে গ্রাহকদের স্বার্থে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইন্টারনেটের গতিসম্পন্ন সেবা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্য, সাংবাদিক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসানের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এই রিট করেন। এতে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীকে বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা মারাত্মক ভোগান্তিতে আছেন। গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ খরচ নেয়া হয় সে তুলনায় সেবার মান হতাশাজনক। মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সে অনুযায়ী সেবা দেয়নি। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, দেশের ইন্টারনেট গতি এতটাই দুর্বল যে, দেশের অনেক জায়গায় মানুষ ইন্টারনেটের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের যে টাকা দিয়ে নেট কেনা হয় তার মেয়াদ শেষ হলে ব্যবহার করা যায় না। অথচ নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো ধীরগতি। বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ অভিযোগ জমা হয় বিটিআরসিতে, কিন্তু গ্রাহকরা এখনও ভোগান্তির শিকার। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার পরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় এ রিট দায়ের করা হয় বলে জানান আইনজীবী।

সূত্র মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প। তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়নের সূত্রে বাংলাদেশ এখন ইন্টারনেট সুপারহাইওয়েতে প্রবেশ করেছে। চলমান করোনাকালীন বিশ্ববাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিষেবা এখন একটি বিকল্পহীন মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারীর লকডাউন, শাটডাউনেও ঘরে বসে জরুরী পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, তথ্য আদানপ্রদান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনসহ নৈমিত্তিক সবকিছুই এখন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিষেবার মান, স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও নিরাপত্তা এখন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু:খজনক বাস্তবতা হচ্ছে, ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের নির্ভরতা যতই বাড়ছে, এ খাতের সেবার মান, অস্বচ্ছতা এবং বিড়ম্বনা নিয়ে মানুষের অভিযোগ ও সংক্ষোভ ততই বেড়ে চলেছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে মোবাইলফোন অপারেটর ও আইএসপি কোম্পানীগুলো চটকদার বিজ্ঞাপনের ঢালি সাজালেও আদতে মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বিশ্বে ইতিমধ্যেই পঞ্চম প্রজন্মের দ্রুতগতির ইন্টার সহজলভ্য হয়ে উঠলেও দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। আরো দুই বছর আগেই দেশে থ্রিজি থেকে ফোরজি ইন্টারনেট পরিষেবার নিশ্চয়তা দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট খরচ আদায় করা হলেও এখনো দেশের অধিকাংশ এলাকায় টুজি পরিষেবাও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোরজি’র দামে টুজি গতির ইন্টারনেট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বর্তমান সরকার গর্ব করে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের কথা বললেও এ খাতে সেবার মানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়েও নিচে। বিশ্ব যখন ফাইভজির অভিজ্ঞতা লাভ করছে, সেখানে আমাদের দেশের ইন্টারনেট প্রোভাইডার ও মোবাইলফোন অপারেটররা থ্রিজি মানের সেবাও দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের অভিযোগ-ভোগান্তির সমাধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যেন কেউ নেই। ৪ বছর আগেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ এক মেগাবাইট থেকে কমপক্ষে ৫এমবিপিএস করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। বিশ্ববাস্তবতার নিরিখে তা ছিল সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তখনো দেশে থ্রিজি ইন্টারনেট চালু হয়নি। তবে সরকারের সেই সিদ্ধান্তের সাথে বাস্তবের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন কথিত ফোরজি’র যুগে এসেও ব্রডব্যান্ড গ্রাহকরা গতি পাচ্ছেন তিন এমবিপিএস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোটি কোটি মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে। ব্যাংকিং, শপিং, শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক যোগাযোগের বিকল্প ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এ সময় এর শ্লথ গতি সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অথচ গতি ও সেবার মান না বাড়লেও নানা অজুহাতে ব্যান্ডউইথ মূল্য বাড়াচ্ছে সার্ভিস প্রোভাইডাররা। ইন্টারনেটের ঝুলন্ত তার অপসারণে বিটিআরসির নির্দেশনা দীর্ঘদিন ধরে অমান্য করায় সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন ও বিটিআরসি’র তরফ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজ অব্যাহত রাখায় আইএসপি সংগঠনের তরফ থেকে সেবা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়। এ খাতে সরকার শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবার গতি ও মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেও মোবাইলফোন ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সেবার মান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।

করোনাকালীন বাস্তবতা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকার সবসময় ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছে। অথচ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি এশিয়ার গড় গতির ছয়ভাগের একভাগ। এমনকি আফ্রিকার সাব-সাহারান অনেক দেশের চেয়েও ধীরগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিষেবার গতি ও মানবৃদ্ধি কল্পে সরকারকে আরো দৃঢ় ও শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তারা।

সূত্র মতে, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চলতি বছরের শুরুতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ছিল সর্বোচ্চ ৯০০ জিবিপিএস। বছর শেষে সেই ব্যান্ডউইথের ব্যবহার দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০০ জিবিপিএসে। ব্যান্ডউইথের সরবরাহ ও পর্যাপ্ত আর টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর মানও বেশ ভালো। তারপরও মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড উভয় ক্ষেত্রেই সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না গ্রাহকরা। এ সম্পর্কে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও বলছেন, গ্রাহকসেবার মান নিয়ে অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। তার মতে, মোবাইল অপারেটররা পর্যাপ্ত বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করলেই গ্রাহকসেবার মান এখনকার চেয়ে অনেক উন্নত হবে। ব্রডব্যান্ড সেবার মান বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালাসহ একাধিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন চলছে এবং খুব কম সময়েই এর সুফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

কেন গ্রাহকসেবার মান বাড়ে না- জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, মূল কারণ হচ্ছে গ্রাহকসেবার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কারও কাছেই আসলে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে না। কারণ তারা মনে করছেন, গ্রাহকরা ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ সেবা পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যদি মোবাইল অপারেটররা গ্রাহক অনুপাতে পর্যাপ্ত বেতার তরঙ্গ ব্যবহার না করে, তা হলে তার কারণটা খুঁজতে হবে। শুধু অপারেটর কিংবা শুধু বিটিআরসিকে দায়ী করলেই হবে না। বেতার তরঙ্গের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বাস্তব অবস্থার বিচারে জাতীয় পর্যায় থেকেই একটি যুক্তিযুক্ত নির্দেশনা কিংবা নীতি আসতে হবে। তিনি বলেন, ব্রডব্যান্ড সেবায় ইদানীং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের ডিপিআই ব্যবস্থার সক্ষমতা ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে না। কারণ দেশে যত ডাটা ট্রাফিক প্রবেশ করে, তা ডিপিআই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। এর ফলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহকের বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

গ্রাহকসেবার মানের অবস্থা খারাপ কেন এ প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশ না শর্তে একটি মোবাইল অপারেটরের শীর্ষ টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীর জানান, মোবাইল অপারেটরদের পর্যাপ্ত বেতার তরঙ্গ ব্যবহার না করার বিষয়টি সত্য। সাধারণভাবে উন্নত দেশগুলোতে এক মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ করে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে সেখানে গ্রামীণ তার বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী ফোনপ্রতি ২০ লাখ গ্রাহকের জন্য এক মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ করেছে। রবি প্রতি ১৩ লাখ গ্রাহকের জন্য এক মেগাহার্টজ এবং বাংলালিংক এক মেগাহার্টজ বরাদ্দ রাখতে পারছে ১২ লাখ গ্রাহকের জন্য। টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যার অনুপাতে বেতার তরঙ্গের পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, টেলিটকের ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় নেটওয়ার্কই নেই। এই টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী বলেন, বেতার তরঙ্গের দাম এত বেশি যে, অপারেটরদের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক হিসাবের বিবেচনায় তা যুক্তিসংগত নয়। তাই প্রয়োজন থাকলেও অপারেটররা বেতার তরঙ্গ কিনতে উৎসাহী হচ্ছে না। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বিপুল পরিমাণ বেতার তরঙ্গ অব্যবহৃত অবস্থায় পুরোপুরি মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকছে। গ্রাহকসেবার মান বাড়ানোর জন্য বেতার তরঙ্গের দাম যুক্তিসংগত হারে নির্ধারণ করা জরুরি বলে অভিমত দেন তিনি।

https://dailysangram.com/post/440839