৭ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:৫০

২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রায় ৫ হাজার

২০২০ সালে সর্বমোট ৪ হাজার ৯২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৬৯ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৫ হাজার ৮৫ জন। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০২০ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে এ তথ্য জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, ১১টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টালের তথ্য, শাখা সংগঠনগুলোর রিপোর্ট এবং অপ্রকাশিত ঘটনার তথ্য থেকে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে এসময় জানান তিনি। এছাড়া অপ্রকাশিত দুর্ঘটনা ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর মৃত্যুর তথ্যও এই পরিসংখ্যানে যোগ করা হয়েছে।

২০২০ সালে মাসওয়ারি দুর্ঘটনার হিসাব করলে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ৪৪৭ দুর্ঘটনায় ৪৯৫ জন নিহত এবং ৮২৩ জন আহত, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৬৫ দুর্ঘটনায় ৪৩৭ নিহত এবং ৭৬২ আহত, মার্চে ৩৭৯ দুর্ঘটনায় ৪৫৪ নিহত এবং ৭৬৭ আহত, এপ্রিলে ১৩২ দুর্ঘটনায় ১৩০ নিহত এবং ১২০ আহত, মে মাসে ১৯৬ দুর্ঘটনায় ২৪২ নিহত এবং ২০৬ আহত, জুনে ২৬০ দুর্ঘটনায় ৩৩০ নিহত এবং ২৩৩ আহত, জুলাইয়ে ২২০ দুর্ঘটনায় ২৮৪ নিহত এবং ১৯৭ আহত, আগস্টে ৩৪০ দুর্ঘটনায় ৪৮৩ নিহত ও ৪২৩ আহত, সেপ্টেম্বরে ২১৬ দুর্ঘটনায় ২৫০ নিহত ও ৪০৪ আহত, অক্টোবরে ২৩০ দুর্ঘটনায় ২৬২ নিহত ও ৩৮৭ আহত, নভেম্বরে ২৬২ দুর্ঘটনায় ৩১৬ নিহত এবং ৩৭২ আহত এবং ডিসেম্বরে ৩৬৩ দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত এবং ৩৯১ জন আহত হন। এছাড়া অপ্রকাশিত তথ্য ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর মৃত্যুর হিসেবে পুরো বছরে আনুমানিক ৬৮২ দুর্ঘটনায় ৮২৮ জন নিহত হন।

এসময় দুর্ঘটনা রোধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করা, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত ৬ দফা নির্দেশনামা দ্রুত বাস্তবায়ন করা, টাস্কফোর্স দাখিল করা ১১১টি সুপারিশনামা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা করা,লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বাড়ানো, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, একই রাস্তায় বৈধ ও অবৈধ এবং দ্রুত ও শ্লথ যানবাহন চলাচল, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট এবং অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন না হওয়া ইত্যাদিই এই বিপুল সংখ্যক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে পরিসংখ্যানে।

নিসচার প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে বেশি ৪৪৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪৯৫ জন নিহত ও ৮২৩ জন আহত হন। আর এপ্রিল ও মে মাসে সবচেয়ে কম যথাক্রমে ১৩২ ও ১৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর পেছনের কারণ হিসেবে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশে লকডাউন থাকায় দুর্ঘটনা কম হয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন লিখিত বক্তব্যে জানান- ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ এলাকায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এলাকায় কম দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি দাবি করেন, এসব এলাকায় চালকরা তুলনামূলক কম গতিতে নিয়ন্ত্রণে রেখে যানবাহন চালানোর কারণে দুর্ঘটনা কম হয়েছে। সড়ক আইনের সঠিক বাস্তবায়ন হলে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদের সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ ও সদস্য আজাদ প্রমুখ।

https://dailysangram.com/post/439780