২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৩:৪১

করোনাভাইরাস

৭২,০০০ সক্রিয় রোগীর খবর কেউ রাখে না

দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ১৭৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৮৭৪ জন। এর বাইরে থাকা রোগীরা সক্রিয় রোগী হিসেবে সরকারি তালিকাভুক্ত। এই সক্রিয় রোগীদের মাত্র সাড়ে চার হাজার জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজারের কিছু বেশি। এর বাইরে থাকা ৭২ হাজারেরও বেশি রোগীর খোঁজ রাখছে না কেউ। এই রোগীরা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন এমনটা বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

তবে এই রোগীদের কে কোথায় আছেন। তাদের গতিবিধি সম্পর্কে কেউ খবর রাখছে না। তাদের চিকিৎসার বিষয়েও সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। এই রোগীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এমন যাদের তথ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয় না তাদের মৃত্যুর হিসাবও সরকারি তথ্যে আসছে না। বর্তমানে শুধুমাত্র উপসর্গসহ যেসব রোগী কোভিড নির্ণয় কেন্দ্রসমূহে আসেন, তাদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কমিউনিটিতে যে সমস্ত মানুষের উপসর্গ আছে কিন্তু রোগনির্ণয় কেন্দ্রে আসছেন না, তাদের খুঁজে বের করে টেস্টের আওতায় আনার সুপারিশ করেছিল জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি। কিন্তু তাও আমলে নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া চিহ্নিত রোগীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের সুপারিশ থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ে কিছুটা এই কাজ হলেও ঢাকায় একেবারেই হচ্ছে না।

৭২ হাজার ৪২৭ জন করোনা রোগী কোথায়- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা মানবজমিনকে বলেন, তারা বাসায় আছেন। অনেক রোগী উপসর্গহীন। ৮০ শতাংশ রয়েছেন, যাদের মৃদু উপসর্গ। তাই তারা বাসায় আছেন। তাদের হাসপাতালে আসার প্রয়োজন হয়নি। করোনার পরীক্ষা কমে যাওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফি নির্ধারণ অবশ্যই একটি কারণ। অনেকে সচেতন নয়। এখন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা না করানোর কারণে প্রকৃত রোগীরা আসছেন। এজন্য শনাক্তের হার বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাহীনতা, গলাকাটা খরচসহ নানা কারণে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশের হাসপাতালগুলো মানুষের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেগুলো কখনওই পূর্ণ হয়নি। হাসপাতালগুলোর মোট শয্যার চারভাগের প্রায় তিনভাগই ফাঁকা পড়ে আছে।

২৫শে জুলাই করোনা নিয়ে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সাধারণ শয্যা রয়েছে ১৫ হাজার ১৮২টি। এতে রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৩০২ জন এবং খালি আছে ১০ হাজার ৮৮০টি। সারা দেশে আইসিইউ শয্যা ৫৩৩টি, রোগী ভর্তি আছেন ২৮৩ জন এবং খালি আছে ২৫০টি। অর্থ্যাৎ সবমিলিয়ে মোট শয্যার সংখ্যা ১৫ হাজার ৭১৫টি। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫৮৫টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে এবং ফাঁকা আছে ১১ হাজার ১৩০টি শয্যা।

এদিকে, দেশে এ পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ১৭৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন দুই হাজার ৮৭৪ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন। মোট আক্রান্ত থেকে মৃত ও সুস্থদের বাদ দিলেও বর্তমানে অ্যাকটিভ করোনা রোগীর সংখ্যা ৯৬ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি মাত্র ৪ হাজার ৫৮৫ জন। ভর্তিকৃত রোগী বাদ দিলে থাকে ৯১ হাজার ৬২৯ জন। অর্থ্যাৎ বাকি ৯১ হাজার ৬২৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিচ্ছেন না হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। এদের থেকে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের রোগীদের বাদ দিলেও থাকে ৭২ হাজার ৪২৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ২০২ জন। তাহলে প্রশ্ন হলো এই ৭২ হাজার ৪২৭ জন করোনা রোগী কার নিয়ন্ত্রণে। কোথায় আছেন? অন্যদিকে করোনার জন্য নির্ধারিত ১১ হাজার ১৩০ শয্যাই ফাঁকা রয়েছে।

ঢাকা মহানগরের সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৭ হাজার ৪টি এবং আইসিইউ ২৮১টি। সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৬০ জন। শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ৮৪৪টি। ঢাকা মহানগরের আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৭১ জন, খালি আছে ১১০টি। ঢাকা মহানগরে শয্যা মোট খালি আছে ৪ হাজার ৯৫৪টি।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৭৬২টি এবং আইসিইউ ৩৯টি। সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ৩৩১ জন, খালি আছে ৪৩১টি। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২২ জন এবং খালি আছে ১৭টি। সারা দেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যার সংখ্যা ৭ হাজার ৪১৬টি এবং আইসিইউ ২১৩টি। সাধারণ শয্যায় ভর্তি আছেন এক হাজার ৮১১ জন এবং শয্যা খালি আছে ৫ হাজার ৬০৫টি। সারা দেশের অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ৯০ জন এবং খালি পড়ে আছে ১২৩টি। সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩২৬টি, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংখ্যা ৩০৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা ১১২টি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=236808