২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৩:৩৭

তারকা হোটেলের ক্ষতি ছাড়াবে ৭ হাজার কোটি টাকা

করোনার আঘাতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল শিল্পখাত। হোটেলে অতিথি নেই। এরই মধ্যে অনেক হোটেল বন্ধের কথা জানিয়ে মালিকরা বলছেন, তারকা হোটেলগুলোর এরই মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরেই এই ক্ষতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে বেশির ভাগ হোটেলের অতিথি সংখ্যা ২-৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা স্মরণকালের সর্বনিম্ন। অনেক হোটেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এ খাতের সাথে জড়িত তিন লাখের বেশি মানুষ এবং তাদের পরিবার জীবনঝুঁকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় হোটেলগুলোর পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এই হোটেল খাতকে বাঁচাতে ছয়টি দাবি জানিয়েছে তারা।

চলমান অবস্থায় হোটেলগুলোর পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয় জানিয়ে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন (বিহা) সভাপতি এইচ এম হাকিম আলীর ভাষ্য, করোনা মহামারীর আঘাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হোটেল শিল্পখাত। ‘জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৪.৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক হোটেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ হোটেলের অতিথি সংখ্যা ২-৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা স্মরণকালের সর্বনিম্ন।

তার দাবি, ইতোমধ্যে করোনায় ২৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে চলতি বছরেই হোটেলগুলোর ক্ষতি ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দুঃসহ এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শেষ ভরসা হিসেবে এই খাত বাঁচাতে তিনি সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অপর দিকে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, বাংলাদেশে করোনাকালে বেকার হয়ে পড়ার হুমকির মুখে রয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারী।

বিহার ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির কো-চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান জানান, এই খাতটিকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে তারা সরকারের কাছে ছয় দফা সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য হোটেল এবং রিসোর্টের বিপরীতে বিদ্যমান ঋণের লভ্যাংশ/সুদ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করা। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল এবং রিসোর্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ওপর অর্পিত ৯ শতাংশ লভ্যাংশ/সুদ হারে পরিশোধের সময়সীমা ৩ বছরমেয়াদি করা এবং ঋণ বিতরণের তারিখ থেকে এক বছর গ্রেস পিরিয়ড রেখে পরবর্তী দুই বছরে পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করা।

সরকারি আদেশ অনুযায়ী, লকডাউনে ছুটিতে যাওয়া হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০০ কোটি টাকা মাসিক বেতন ভিত্তিতে তাদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা।

আবাসিক হোটেলগুলোর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ইউটিলিটি বিল ইলেকট্রিক/ওয়াসা এবং গ্যাস বিল মওকুফ করা। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার আওতাধীন আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টের হোল্ডিং ট্যাক্স ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত মওকুফ করা। আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে কর কর্তন মওকুফ করা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সভাপতি মনসুর আহমেদ জানান, ঢাকা শহরেই হোটেল রিজেন্সি, রেডিসন ব্লু, লা মেরিডিয়ান, ওয়েস্টিন, সোনারগাঁও, ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো অসংখ্য পাঁচ তারকা হোটেল আছে। এক-একটা হোটেলে কত বিশাল ইনভেস্টমেন্ট। এর সাথে রেস্টুরেন্ট আছে কয়েক হাজার। রেস্টুরেন্টের কর্মকর্তাদের বেতনসহ বিশাল অঙ্কের ফাইন্যান্সিয়াল চার্জ গুণতে হয় প্রতিদিন।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, ঢাকার অভিজাত এলাকায় কিছু হোটেল-রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও ৯৫ ভাগ হোটেল বন্ধ। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকরাও বিপাকে রয়েছেন। যে যেভাবে পারছেন, শ্রমিকদের সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন জানান, করোনায় হোটেল মালিকরাও বিপদে পড়েছেন। হোটেল শ্রমিকদের প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মালিকরা কোনো প্রণোদনার আওতায় আসেননি। তাদের মতে, ঢাকা মহানগরের হোটেল রেস্তোরাঁয় ৬০ হাজার কর্মচারী রয়েছেন। করোনায় দুই মাস ধরে বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন কর্মচারীরা।

একাধিক হোটেল মালিক জানান, করোনার শুরু থেকে হোটেল বন্ধ থাকায় তাদের আয় একেবারেই বন্ধ। ফলে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বাসাভাড়া পর্যন্ত দিতে পারেননি। এত দিন অনেকে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছিলেন। এখন আর পারছেন না। কর্মচারীদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ঢাকা মহানগর হোটেল শ্রমিক লীগের সভাপতি মো: আল আমিন জানান, করোনার শুরু থেকে বেশির ভাগ হোটেল বন্ধ। তাই তাদের প্রায় ৬০ হাজার হোটেল কর্মচারীর কাজ নেই, বেতন নেই। সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনা দেয়ার কথা বলা হলেও তারা প্রণোদনার কোনো অর্থ পাননি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/517809