জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচরের সভারচর গ্রামে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে সেতু : নয়া দিগন্ত
২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার, ৩:৩৫

ভয়ঙ্কর রূপে নদীভাঙন

উত্তরাঞ্চলে পানি বাড়ছে : কমছে সিলেটে

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদীর ব্যাপক ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। শরীয়তপুরের জাজিরায় নদীভাঙনে নতুন করে ১৯৭টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। রাজবাড়ীতে এক দিন কমার পর গতকাল আবার বাড়তে শুরু করেছে পদ্মা নদীর পানি। জামালপুরে পানির তোড়ে ব্রিজ ভেঙে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মির্জাপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ ও বগুড়ায় নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে পরিস্থির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। টানা ১৫ দিন বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর গতকাল শনিবার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। নীলফামারীতে তিস্তার পানিও কিছুটা কমেছে।

নওগাঁয় পরিস্থিতির আবার অবনতি : গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি গতকাল শনিবার দুপুরে জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে আগেই ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে আবার প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি।

গত মঙ্গলবার থেকেই নওগাঁয় টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। একই সময়ে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে নদীর উজানের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে। এ কারণে আত্রাই নদ দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল বেড়েছে। এর ফলে ছোট যমুনাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে।

মির্জাপুরে বন্যার আরো অবনতি : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। মির্জাপুর পৌরসভা ও উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চার শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকেছে। প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২২টি ক্লিনিক, দু’টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী ভারতেশ্বরী হোমসসহ কমপক্ষে ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে বেশির ভাগ এলাকার মানুষের সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে মানুষ নৌকা ব্যবহার করছে।

১৫ দিন পর সুরমার পানি বিপদসীমার নিচে : সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ১৫ দিন পর গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার নিচে নেমেছে। সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবাহিত দীর্ঘতম নদী। এ নদীর পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা ও সিলেট শহর পয়েন্টে। কানাইঘাটের লোভাছড়ার কাছে লোভা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে সুরমা। উজানে ভারী বৃষ্টি হলে লোভা থেকে সুরমায় পানির প্রবাহ বাড়ে। গত ৭ জুলাই প্রথম দফা পাহাড়ি ঢলে সুরমার পানি বাড়ে। এরপর ৯ জুলাই থেকে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পানি কমতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় ১২ দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার থেকে নেমে শনিবার সকাল ৬টা ও ৯টার দুটো পরিমাপে দুই ধাপে পানি কমে দুপুর ১২টায় ১২ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাউবোর নদ-নদী পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, প্রায় পক্ষকাল গড়িয়ে সুরমার পানি ভাটা ধরায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা দেখা দিলো।

এ দিকে সুরমার দু’টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা থেকে নেমে গেলেও সিলেট অঞ্চলের আরেক বৃহৎ নদী কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি এখনো বিপদসীমা থেকে নামেনি। গতকাল দুপুরে ফেঞ্চুগঞ্জে পানি ৯ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। তবে এই নদীর অন্য তিনটি পয়েন্টে যথাক্রমে উৎসমুখের অমলসিদ, বিয়ানীবাজারের শেওলা ও মৌলভীবাজারের শেরপুর পয়েন্টে দিয়ে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নীলফামারীতে তিস্তার পানি কমছে : নীলফামারী জেলায় তিস্তা নদীর পানি কমছে। গতকাল শনিবার বিকেলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবো সূত্র জানায়, ২১ জুলাই তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ২২ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই সময় পানি বাড়ায় জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে এসব গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ তৃতীয় দফায় পানিবন্দী হয়ে পড়ে।

জামালপুরে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ব্রিজ

জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জামালপুরের পয়েন্টে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। যেকোনো নৌকা দেখলেই বন্যার্ত মানুষ মনে করছে ত্রাণের নৌকা। এ দিকে জেলার ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভারচর গ্রামে বন্যার পানির তোড়ে একটি ব্রিজ ভেঙে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গোয়ালেরচর ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। অন্য দিকে এ পর্যন্ত নৌকাডুবিতে দু’জনসহ মোট ১৫ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৪ লাখ টাকা, সাত হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ছয় লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তা প্রয়োজনের চেয়ে একেবারেই অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছে দুর্গতরা।

দেওয়ানগঞ্জে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে নদ-নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল, বাড়িঘর, পথঘাট, জনপদ সব পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদী বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তৃতীয় দফা বন্যায় উপজেলার পথঘাট, পুল, কালভার্ট তীব্র পানির স্রোতে ধসে যাওয়ায় দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়েছে। উপজেলার এমন কোনো কাঁচা-পাকা সড়ক নেই যেখানে ক্ষতি হয়নি। বর্ষণ, বন্যা, পাহাড়ি ঢল, নদীভাঙন ও করোনা সব মিলিয়ে অশান্তিতে রয়েছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাবাসী। তৃতীয় দফায় বন্যার পানি বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে মানুষের যোগাযোগ সঙ্কট, দুঃখ-দুর্দশা, খাদ্যাভাব, গো-খাদ্যসঙ্কট, শিশুখাদ্যসঙ্কট, আবাসনসঙ্কট, পানিবাহিত রোগব্যাধিসহ নানা সমস্যা।

কাজিপুরে তিন শতাধিক মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ পানির নিচে

কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার তিন শতাধিক মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে এবার ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে না। বন্যার কারণে এখনো এসব মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। গতকাল শনিবার বন্যাকবলিত নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মনসুরনগর, মাইজবাড়ী ও শুভগাছা ইউনিয়ন পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণকালে ইউএনও জাহিদ হাসান সিদ্দিকী, উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী ও পিআইও এ কে এম শাহ আলম মোল্লা এ তথ্য জানান। দুর্গম চরাঞ্চলের ৯টি ইউনিয়নের ২৯৫টি মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। যেসব এলাকায় মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ পানির নিচে রয়েছে সেসব এলাকার রাস্তায়, বন্যানিয়ন্ত্র বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তারা।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ধরলা নদীর পানি সামান্য কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন জনপথ। তীব্র হয়ে উঠছে খাদ্য, খাবার পানি, গো-খাদ্যের অভাব। কাঁচা-পাকা অনেক সড়ক পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। দীর্ঘ দিন পানি স্থায়ী হওয়ায় মানুষের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলারা এ সঙ্কটময় সময়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ডিসি অফিস সূত্র জানায়, জেলায় দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৭৫ সেন্টিমিটার, ধরলা সদর পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং তিস্তা-কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, চলমান বন্যা পরিস্তিতিতে পানিতে ডুবে ১৮ জন মারা গেছে। তার মধ্যে ১৬ জন শিশু। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে, ত্রাণতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

রৌমারীর গরুর হাটে হাঁটু পানি

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, রৌমারীতে বন্যা এবার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বানের পানির প্রচণ্ড চাপে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার শতভাগ মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এসব মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু সড়কসহ নানা উপায়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ দিকে রৌমারী উপজেলায় গরু-মহিষের প্রধান হাট রৌমারীর গরুর হাট এবার তিন কোটি টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে রাজু আহাম্মেদ খোকা হাটের দায়িত্ব পান। কিন্তু হাটের ইজারা গ্রহণের পর থেকে শুরু হয় মহামারী করোনা। সরকারি বিধিমোতাবেক অনিদির্ষ্টকালের জন্য গরুর হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বিপাকে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতা ও হাট ইজারাদার। এ অবস্থায় রৌমারী হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনার রেশ কাটতে না কাটতেই ভয়াবহ বন্যা নেমে আসে। পুরো গরুর হাট হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। কোরবানি ঈদের কারণে সীমিত আকারে গরুর হাটের অনুমতি পেলেও ইজারাদারের প্রতি সপ্তাহে গচ্চা যাচ্ছে প্রায় তিন লাখ টাকা। এত বিপুল গচ্চায় চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন হাটের শেয়ার হোল্ডাররা। ফলে সরকারি ইজারা মূল্য থেকে ৪৬ দিন বন্ধকৃত হাটের টাকা আনুপাতিক হারে কর্তন চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছেন ইজারাদার।

এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, ইজারাদারের আবেদনখানা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে যে, বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া না হলেও কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে ভাবছে। এর পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের নীতিমালায় হাটবাজারগুলো চলবে।

পদ্মার ভাঙনে জাজিরার ১৯৭ পরিবার গৃহহীন

শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, পদ্মার প্রবল ভাঙনে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মঙ্গলমাঝির ঘাটসংলগ্ন ওকিলউদ্দিন মুন্সিকান্দি, আলমখার কান্দি ও পৈলান মোল্যাকান্দি গ্রামে গত কয়েক দিনে ১৯৭ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ দিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৪টি পৌরসভা ও জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ৫০টি গ্রামের প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীর বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতেও প্রায় ২০টিরও বেশি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি আরো ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বানের পানিতে তলিয়ে গিয়ে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রায় ১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। প্লাবিত এলাকায় খাদ্য, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বানভাসিরা তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু রাস্তা ও ব্রিজে আশ্রয় নিয়েছেন। ঢাকা- শরীয়তপুর মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়ে সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যেকোনো সময় মঙ্গল মাঝির ঘাট ও কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের সাথে জেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এ দিকে পানিবন্দী কিছু কিছু এ
লাকায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সিংড়ায় আত্রাই নদীর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দিকে আত্রাই নদীর পানি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সিংড়া পৌর শহরের বাজার এলাকার পানি নিষ্কাশনের ড্রেন দিয়ে উল্টো বাজারেই প্রবল বেগে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকে বন্যাদুর্গতদের জানমাল রক্ষার্থে শনিবার সকাল থেকে পৌর শহরের পেট্রোবাংলা, গোডাউনপাড়া, সোহাগবাড়ী ও বাজারের বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী মানুষের খোঁজখবর নেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক ও পৌর মেয়র মো: জান্নাতুল ফেরদৌস।

শেরপুরে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে

শেরপুর সংবাদদাতা জানান, অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আবার সামান্য বেড়েছে। শেরপুর-জামালপুর সড়কের ব্রহ্মপুত্র বীজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার দশমিক ০২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে পানিবন্দী মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ বেড়েছে।

এ দিকে গত দুই দিনে শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের আপেল মাহমুদের ছেলে সজিব (১৫), চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের পূর্ব খাসপাড়া গ্রামের জমসেদ আলীর কন্যা বন্যা খাতুন (১৯), শ্রীবরদী পৌরসভার তাঁতিহাটী মহল্লার আবু শামার ছেলে আলী আকবর (১৮) ও নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের বারমাইশা উত্তরপাড়া গ্রামের পলাশ মিয়া (২৫) বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। গত বুধবার নকলা উপজেলার বানেশ^র্দী ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের বাউসা বিলে মাছ ধরতে গেলে সাপের কামড়ে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামাল মিয়া (৫০) গতকাল শনিবার ভোরে মারা গেছেন।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে শিশুর মৃত্যু

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে পড়ে ৪ বছরের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির নাম হুসাইন আহমদ। সে উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের সিচনী গ্রামের মো: রজব আলীর ছেলে। স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বসতঘরের বারান্দায় বন্যার পানিতে পড়ে স্রোতের টানে তলিয়ে যায় হুসাইন। পরে তার বাবা-মা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ দিকে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৪০টি অসহায় হতদরিদ্র বন্যার্ত পরিবারে ‘বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রেরিত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে জামালগঞ্জ থানার সামনে হতদরিদ্র পরিবারের হাতে শাড়ি, লুঙ্গী, চাল, ডাল, তৈল, শাবান ইত্যাদি ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ সাইফুল আলম।

উপজেলার জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, উত্তর ইউনিয়ন, সাচনাবাজার ইউনিয়ন, ভীমখালী ইউনিয়ন ও বেহেলী ইউনিয়নের ৪০টি বন্যার্ত হতদরিদ্রদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন, থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মো: আমিনুল ইসলাম, এসআই মোশারফ হোসেন ও সোহাগ চন্ত্র সরকার, এএসআই তারেকুল ইসলাম, মহিবুল ইসলাম ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ।

আরিচায় যমুনার পানি আবার বৃদ্ধি

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে আবার ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে অর্থাৎ ১০ দশমিক ৮ স্তরে প্রবাহিত হয়। ফলে পদ্মা-যমুনার শাখা নদী ইছামতি, কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী নদীবাহিত পানিতে শিবালয় উপজেলার সর্বত্র ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ যেন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকই পেটের পীড়ায় ভুগছে। নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর পানিমগ্ন হওয়ায় গবাদিপশু-পাখি নিয়ে লোকজন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। চরাঞ্চল আলোকদিয়ায় ত্রাণ ও গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের কারণে ফেরি-লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি আবার বাড়ছে

রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে ফের বাড়ছে পদ্মার পানি। আর এতে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গত শুক্রবার পদ্মার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমলেও গতকাল শনিবার রাজবাড়ীতে আবার পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। শনিবার বেলা ৩টায় পদ্মার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে; যা শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এক দিন বাদ দিয়ে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর পানি আবার বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এ দিকে পানি বৃদ্ধি ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের এলাকাগুলো নিমজ্জিত হয়েছে। অনেকই বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। যারা পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন, তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তা ছাড়া গবাদিপশুর খাদ্য নিয়েও তারা ভুগছেন। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিসলাস বেগম জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৭০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা বিতরণের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সব দুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হবে।

গোবিন্দগঞ্জ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ওপার থেকে নেমে আসা পানি ও ভারী বর্ষণের কারণে করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করতোয়া নদীর পানি উপচে নদী তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পাশের বিআরডিবি, পাবলিক হেলথ, প্রাণিসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন অফিসসহ একটি আবাসিক কোয়ার্টার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার বাড়িঘর, ফসলি জমি ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া আমন ধানের বীজতলাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

সোনাতলায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

বগুড়া অফিস ও সোনাতলা সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার সোনাতলায় যমুনা নদী বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ও বাঙালী নদী ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ দিকে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ওই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের পাঁচ হাজার ৬৩৮ পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে আরো লক্ষাধিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা ও বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ওই উপজেলার সদর, মধুপুর, তেকানীচুকাইনগর, পাকুল্লা ও জোড়গাছা ইউনিয়নের প্রায় ৩২টি গ্রামের ৫ হাজার ৬৩৮ পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ দিকে পানিবন্দী মানুষগুলো এক দিকে করোনাভাইরাস অপর দিকে বন্যার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছে। পানিবন্দী পরিবারের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। সরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা বিতরণ অব্যাহত থাকলেও নেই বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা। ফলে বিপুল সংখ্যক পরিবারের সদস্যরা অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/517826/