ফাইল ছবি
৪ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৩:০৬

আইএমইডির প্রতিবেদন

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে গোড়ায় গলদ

ডিপিপি তৈরিতেই পরিকল্পনায় ঘাটতি * ৩ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পে গতি নেই। মেয়াদ রয়েছে আর ১ বছর। অথচ ৩ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ২৬ শতাংশ। ধীর গতির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরিতেই পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল। এছাড়া বাস্তবায়ন পর্যায়ে ছিল বিভিন্ন সমস্যা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নজনিত। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। পাশাপাশি দরপত্র আহ্বানে সিদ্ধান্তহীনতা, বিতরণ লাইনের রাইট অব ওয়ে সংক্রান্ত জটিলতা এবং জনবলের ঘাটতিও দায়ী।

‘ওয়েস্ট জোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আপগ্রেডেশন’ শীর্ষক প্রকল্পে এ অবস্থা বিরাজ করছে। বাস্তবায়ন দেরি হওয়ায় যথাসময়ে প্রকল্পের সুবিধা থেকে যেমন গ্রাহকরা বঞ্চিত হবেন, তেমনি ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণের খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি) রহমত উল্লাহ মো. দস্তগীর শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনটি এখনও আমার হাতে আসেনি। তাছাড়া এ বিষয়গুলো কোম্পানির এমডি বলতে পারবেন। আমি হঠাৎ করে কিছুই বলতে পারব না। তবে প্রকল্পের গতি বৃদ্ধির নানা উদ্যোগ আমাদের রয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ৪১টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী ও উন্নত করার মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এটির ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ওই সময় পর্যন্ত (জুন ২০১৯) প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ছিল মাত্র ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ কারণে পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময় ব্যয়ও বেড়েছিল প্রকল্পটির । এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নিজম্ব তহবিল থেকে ৫০ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সার্বিক ভাবে ডিপিপি তৈরির সময়ই পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল। ফলে কোনো কাজই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া একজন প্রকল্প পরিচালক দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলেও এ প্রকল্পের বাইরে তাকে আরও দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। একই ব্যক্তি একাধিক দায়িত্ব পালন করায় প্রকল্পের কাজে যথাযথ মনোনিবেশ করতে পারেননি। ফলে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি প্রকল্পের একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। প্রকল্পে ঝুঁকি বিষয়ে বলা হয়েছে, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে যে কোনো মেরামত বা সম্প্রসারণ কাজের সময় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হবে। এ পদ্ধতি চলমান থাকলে ভবিষ্যতে গৃহীত প্রকল্পের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ের কারণে অতিরিক্ত ব্যয় লাগতে পারে। প্রকল্পে ৬২ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও ১৯ জন কর্মরত রয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন বিলম্বের একটি অন্যতম কারণ। বর্তমানের প্রকল্পটির যে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে তা মেয়াদকালের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মেয়াদের মধ্যে কোনোভাবেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।

পরিবীক্ষণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, চলমান প্রকল্প পরিবীক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে এর মধ্যে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করা। সেই সঙ্গে সমস্যা সমাধানে কি কি করণীয় সেসব বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা। আমরা সেই কাজটি করছি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/322408/