৪ জুলাই ২০২০, শনিবার, ৩:০২

বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটে পূর্ব দোলাইরপাড়বাসী

বিশুদ্ধ খাবার পানি পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রাজধানীর পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ ঢাকা ওয়াসা পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে যে পানি দেয় তা সরাসরি পানের উপযুক্ত নয়। আগে ওয়াসার পাম্প থেকে বিনামূল্যে পানি নেয়ার সুযোগ থাকলেও এখন তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবর্তে পাম্পে স্থাপিত এটিএম বুথ থেকে পানি কিনতে হচ্ছে। এতে বাড়ির লাইনের বিল দেয়ার পাশাপাশি পানি কিনতে আবার বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

রাজধানীর পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটে ভুগছেন। ওই এলাকায় ওয়াসার যে পাইপ লাইন রয়েছে তা ১৫ বছরের পুরনো। সম্প্রতি সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকেও একটি লাইন সেখানে দেয়া হয়েছে; কিন্তু তার সুবিধা সব এলাকাবাসী পাচ্ছেন না। খালের দক্ষিণ পাশে ঢাকা ওয়াসার একটি পাম্প রয়েছে। বাসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় এলাকাবাসী দীর্ঘ দিন ধরে এ পাম্প থেকে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে যেত। এ জন্য তাদেরকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হতো; কিন্তু ঢাকা ওয়াসা এখন পাম্প থেকেও বিনামূল্যে পানি দেয়া বন্ধ করেছে। এর পরিবর্তে সেখানে একটি এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে পানি নিতে টাকা দিয়ে কার্ড তৈরি করতে হচ্ছে এবং লিটার প্রতি ৪০ পয়সা দিয়ে পানি কিনতে হচ্ছে।

৩ নম্বর গলির বাসিন্দা মো: নবিউল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসা পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাসায় যে পানি দেয় তা দুর্গন্ধ ও কালো রঙের। এ পানি সরাসরি কখনোই পান করা যায় না। চোখে পানি দিলে চোখ জ্বলে। সম্প্রতি সায়েদাবাদ থেকে যে লাইন দিয়েছে সে পানিতেও চোখ জ্বলে। এখন পাম্পে এটিএম বুথ দিয়েছে, যেখান থেকে টাকা দিয়ে পানি কিনতে হচ্ছে। এক দিকে আমরা বাসার লাইনের জন্য টাকা দিচ্ছি আবার এখান থেকেও টাকা দিয়ে পানি কিনতে হচ্ছে। এটা ওয়াসার কেমন বিচার! তাদের উচিত বাসায় খাবার উপযোগী পানি দেয়া।

এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ওয়াসার পাম্প আমাদের বাসার পাশেই; কিন্তু এ পাম্প থেকে দনিয়া এলাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আর আমরা পাচ্ছি সায়েদাবাদের পানি। সে পানিতে দুর্গন্ধ। এ পানি সরাসরি পান করা যায় না। এখন আবার নতুন করে কার্ড সিস্টেম করেছে। পাম্প থেকে পানি কিনে নিতে হচ্ছে। কিন্তু আপনি কতটুকু পানি কিনে নিতে পারবেন? বাসায় গোসল, সবজি ধোয়াসহ আরো কত কাজ রয়েছে। কিন্তু সেসব কাজ ময়লা পানি দিয়ে করতে হচ্ছে। এতে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।

এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এ এন এম নুরুল হুদা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে এলাকায় পাম্প স্থাপন করিয়েছি। এত দিন মানুষ বিনামূল্যে পাম্প থেকে পানি নিয়ে যেত। এখন ওয়াসা পানি বিক্রি শুরু করেছে। তাদের নিষেধ করেছি; কিন্তু শোনে না। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য তারা এটা করছে। তিনি বলেন, এলাকায় ওয়াসার পানির দু’টি লাইন রয়েছে। ১৫ বছরের একটি পুরনো লাইন রয়েছে, যা বেশ গভীরে। এটির পানি বেশি দুর্গন্ধ। বিশেষ করে ৩ নম্বর গলির বাসিন্দারা বেশি সমস্যায় রয়েছেন।

একইভাবে ঢাকা ওয়াসা বিভিন্ন পাম্পের পানি বিনামূল্যে সংগ্রহ করার সুযোগ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে এটিএম বুথ স্থাপন করেছে, যেখান থেকে বাসিন্দাদের পানি কিনে খেতে হচ্ছে। এ ভোগান্তি থেকে মানুষকে রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছেন সায়েদাবাদ ওয়াপদা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, ওয়াসার লাইন থেকে পানি নিয়ে আমি মানুষকে বিনামূল্যে সরবরাহ করি। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মানুষ পানি নিতে আসে। আগে লোক কম হলেও এখন আশপাশের পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিড় বেড়েছে। সম্পূর্ণ মানবসেবার উদ্দেশ্যে তিনি এ কাজটি করেন বলে জানান।

এ প্রসঙ্গে ওয়াসার পরিচালক (টেকনিক্যাল) মো: সহিদ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, পূর্ব দোলাইরপাড় এলাকায় পানির লাইন কেটে অনেকে বাসাবাড়িতে লাইন নেন। এতে সুয়ারেজ লাইনের সাথে মিশে পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য আমরা ওই এলাকায় অনেকবার অভিযান করেছি; কিন্তু মানুষ সচেতন নয়। আগে এলাকাবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ওই এলাকার সায়েদাবাদ থেকে লাইন দেয়া হয়েছে, যে পানি অনেক ভালো। আর এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়েছে, যাতে মানুষ বিশুদ্ধ পানি পেতে পারে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/512882