২৪ জুন ২০২০, বুধবার, ১:৪৫

দুর্দিনে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান

লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না ; লাইসেন্স নবায়নের নীতিমালা শিথিল

করোনাভাইরাসের মধ্যে কোনো লেনদেন না হওয়ায় দুর্দিনে পড়েছে খোলা বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান মানিচেঞ্জার। পর্যটন, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে যাতায়াত প্রায় দীর্ঘ চার মাস বন্ধ থাকায় কদর কমে গেছে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর। এতে লাইসেন্স নবায়নের অন্যতম শর্ত বার্ষিক লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না তারা। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স নবায়নের শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছে, আপাতত লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ২৩৫টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামেই বেশি। প্রতি বছরই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এ জন্য দেয়া আছে কিছু শর্ত। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত কোনো মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান বছর ৫ লাখ ডলারের বেশি লেনদেন করতে না পারলে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। আর দেশের অন্য স্থানগুলোর জন্য ন্যূনতম লেনদেনের সীমা রয়েছে সাড়ে তিন লাখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের প্রধান উৎস হলো পর্যটক, বিদেশে চিকিৎসার জন্য রোগী, শিক্ষার্থী ও হজযাত্রীরা। করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে। এমনকি বছরের বড় একটি লেনদেন হয় হজ মওসুমকে কেন্দ্র করে। ফি বছর বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক হজযাত্রী পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য সৌদি আরব যান। কিন্তু করোনার কারণে এবার তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বেশির ভাগ মানিচেঞ্জারেই তেমন কোনো লেনদেন নেই। নেই রাজধানী অতি ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিলকেন্দ্রিক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যবসা। এর ফলে বছরে লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশের বড় একটি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, মানিচেঞ্জার ব্যবসায় এমন দুর্দিন তার গত ৩৫ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে দেখেননি। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। সারা দিনে একজন গ্রাহকও আসছেন না। এতে অনেকেই মূলধন ভেঙে অফিস ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করছেন। অনেকেই এরই মধ্যে কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন। ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় কেউবা ভাড়া অফিস ছেড়ে দিয়েছেন। এমনি পরিস্থিতিতে লেনদেন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূরের কথা টিকে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

অপর একজন মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গত তিন মাস ধরে লেনদেন শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। কোনো গ্রাহক আসছে না। জমানো মূলধন ভেঙে দুই মাসের অফিস ভাড়া পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এখন আর ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না। সামনে কত দিন এ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকবে তাও বলা যাচ্ছে না। এমনি একটি অনিশ্চয়তার মুখে তিনি ভাড়া অফিস ছেড়ে দিয়েছেন। কাজ না থাকায় কর্মচারীদেরও অফিসে আসতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। আরেক বন্ধুর অফিসে কোনো মতে চেয়ার-টেবিল রেখে বাসায় অবস্থান করছেন।

মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দুর্দিনের মধ্যে লেনদেনের শর্ত শিথিল করার জন্য উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গতকাল শর্ত শিথিল করে সার্কুলার জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হযেছে, লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শর্ত শিথিল না করলে অনেকেই লাইসেন্স নবায়ন করতে পারতেন না। ফলে লাইসেন্স হারাতে হতো অনেকেরই।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/510599/