১৪ জুন ২০২০, রবিবার, ৩:৫৭

এখনো পিক টাইম বলতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা

আগামী সপ্তাহে কানাডা সৌদি আরবকে টপকাতে পারে

বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের তিন মাসের মাথায় শীর্ষ ১৮তম স্থানে চলে আসাকে উদ্বেগজনক বলছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং করোনাভাইরাস নিয়ে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকবে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কারণ শীর্ষে থাকা দেশগুলোর তিন-চারটি বাদে বাকিদের শনাক্তের হার নি¤œমুখী। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও ঊর্ধ্বমুখী। এখনই শনাক্তের হার না কমাতে পারলে শীর্ষে থাকা আরো কয়েকটি দেশকে হয়তো টপকে যাবে বাংলাদেশ।

তাহলে কি বাংলাদেশে আক্রান্তের পিক টাইম চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই পিক টাইম বলা যাবে না। কারণ যতক্ষণ আক্রান্ত ঊর্ধ্বমুখী থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা বলা মুশকিল। যখন নি¤œমুখী হবে তখন বলা যাবে ওই সময়টুকু ছিল পিক টাইম। তার মতে, ঘনবসতির এ দেশে এখনো করোনার আক্রান্তের হার কমাতে না পারলে সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেয়া, সর্বশেষ ৩১ মে থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের সব সরকারি- বেসরকারি অফিস-আদালত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও কল-কারখানা খুলে দেয়া হয়। এ ছাড়াও ঈদের আগে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দেশের বিভিন্ন মার্কেট-শপিংমল-বিপণিবিতানে মানুষের কেনাকাটা, গণপরিবহন চালু ও গাদাগাদি করে ঘরমুখো যাত্রার ফলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। এখন আবার ‘পূর্ণাঙ্গ লকডাউন’ আরোপের দাবি উঠেছে। কারণ লকডাউন খুলে দেয়ার ফল ইতোমধ্যে পাওয়া শুরু হয়েছে। এটির ফল পেতে আরো তিন বা চার সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এর প্রকৃত চিত্র জুনের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় করোনা আক্রান্ত শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় গতকাল পর্যন্ত ১৮তম স্থানে অবস্থান করা বাংলাদেশ চলতি সপ্তাহে কানাডা ও সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। চীনের উহান শহরে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাস দেশটিতে প্রায় নির্মূলই হয়েছে বলা যায়। চীনে এখন সংক্রমণ তেমন না হলেও বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, করোনা আক্রান্ত রোগী সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ গতকাল পর্যন্ত ১৮তম অবস্থানে রয়েছে। অন্য দিকে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় ব্রাজিল, তৃতীয় রাশিয়া, চতুর্থ যুক্তরাজ্য, পঞ্চম স্পেন, ষষ্ঠ ভারত, সপ্তম ইতালি, অষ্টম পেরু, নবম জার্মানি, দশম ইরান, ১১তম তুরস্ক, ১২তম ফ্রান্স, ১৩তম চিলি, ১৪তম মেক্সিকো, ১৫তম পাকিস্তান, ১৬তম সৌদি আরব, ১৭তম কানাডার নাম রয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা রোধ করতে না পারলে দ্রুত সময়ে বাংলাদেশ সামনে থাকা আরো দু’টি দেশ কানাডা ও সৌদি আরবকে টপকে যাবে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কানাডায় গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৯৪৩ এবং সৌদি আরবের ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪২ জন। এ দেশ দু’টিতে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এখন নি¤œমুখী। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা নি¤œমুখী না হলে আগামী এক সপ্তাহ কানাডা এবং ১০ দিন পর সৌদি আরবকে টপকে ১৬তম স্থানে পৌঁছাবে বাংলাদেশ, যা খুবই উদ্বেগজনক। তবে ১৫ এবং ১৪তম স্থানে থাকা যথাক্রমে পাকিস্তান ও মেক্সিকোর শনাক্ত এখনো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, করোনায় সংক্রমণের শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশে সংক্রমণের চতুর্থ মাস শেষ হয়েছে। আর ৯টি দেশে করোনা চতুর্থ মাস চলছে। বাংলাদেশ চতুর্থ মাসের প্রথম সপ্তাহ পার করছে। তবে সংক্রমণের তিন মাসের মাথায় ইতালি, স্পেন, জার্মানি, তুরস্ক ও ফ্রান্সে করোনার তাণ্ডব ব্যাপক হারে কমার প্রবণতা দেখা গেছে। এ ছাড়াও শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ইরান, কানাডা ও চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এসেছে। যদিও শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সংক্রমণের পঞ্চম মাসে ভারত ও রাশিয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সংক্রমণের শীর্ষ ১১তম থেকে ২০তম স্থানে রয়েছে তুরস্ক, ফ্রান্স, চিলি, মেক্সিকো, সৌদি আরব, পাকিস্তান, কানাডা, চীন, কাতার ও বাংলাদেশ। এ দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক, ফ্রান্স, কানাডা ও চীনে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ নিয়মিত কমছে। বাকি দেশগুলোতে সংক্রমণের চতুর্থ মাস চলছে, সংক্রমণ বাড়ছে। অন্য দিকে শীর্ষ তালিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক, ফ্রান্স ও কানাডায় বেশ কিছুদিন ধরে সংক্রমণ খুব একটা বাড়ছে না।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ লাখ ১৯ হাজার ১৯৯ জন, মারা গেছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ২৪৯ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/508255/