৮ জুন ২০২০, সোমবার, ১১:০৮

লাখো মানুষের কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কা

আবাসন খাত টিকিয়ে রাখতে বাজেটে নীতি সহায়তা দাবি

করোনাভাইরাসে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে দেশের আবাসন খাত। স্থবির হয়ে পড়েছে নির্মাণ ও অবকাঠামো খাত। এই খাতের সঙ্গে জড়িত সাড়ে চার শর বেশি উপখাত ক্রান্তিকাল পার করছে। ফলে কাজ না থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন এই খাতের প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক। এ ছাড়া বিভিন্ন কম্পানিতে আছে ছাঁটাই, চাকরি হারানো ও বেকারত্বের শঙ্কা। তাই আসন্ন বাজেটে এই খাতের জন্য নীতিসহায়তা চেয়েছেন উদ্যোক্তারা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, করোনার কারণে লকডাউন পরিস্থিতি আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই কাজ বন্ধ। সংশ্লিষ্ট কারিগরি জনবল ও শ্রমিকরা যেমন কাজে নেই, তেমনি নির্মাণ উপকরণ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ কাজ আবার কবে নাগাদ চালু হতে পারে, তাও ঠিকমতো বলা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে আবাসন খাতের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) লিয়াকত আলী ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্মাণ ও আবাসন খাতের প্রধান উপখাতগুলো হলো সিমেন্ট, রড, বালু, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, টাইলস, রং, পাইপ ফিটিংস, স্যানিটারি। এসব পণ্য একসময় আমদানিনির্ভর হলেও এখন প্রায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে কিছু কিছু পণ্য বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। দেশের প্রায় ২০ হাজার ফ্ল্যাট প্রতিবছর বেচাকেনা হতো। এটা এখন প্রায় বন্ধ। এর বার্ষিক লেনদেন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।’

বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আবাসন ও নির্মাণ খাতের ওপর আমাদের রি-রোলিং শিল্প জড়িত। কভিড-১৯-এর ফলে নির্মাণ খাত স্থবির হয়ে পড়ার পাশাপাশি আমাদের সমস্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অবকাঠামো খাতে ৭০ শতাংশ কাজ ছিল সরকারি, এসবও বন্ধ হয়ে আছে। তাই বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে আবাসন খাতে প্রধান উপকরণ স্টিল শিল্প।’

সংকট উত্তরণে আসন্ন বাজেটে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ জানান, এই খাতের সঙ্গে জড়িত ১০ লাখ ভাঙ্গারির জীবন যেমন বিপন্ন হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে তিন মাসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এই শিল্প আগামী চার বছরের উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না, এই নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সরকারি উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে লিয়াকত আলী আরো বলেন, আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ২৬৯টি শিল্প উপখাতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার প্রতিষ্ঠানও পড়েছে মারাত্মক হুমকিতে।

করোনায় বিপর্যয়ের মুখে সিমেন্টশিল্প উল্লেখ করে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিমেন্টশিল্পকে বাঁচাতে আগামীতে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি এআইটি পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে নেওয়া দরকার। এ ছাড়া কাঁচামালের ওপর অগ্রিম কর বাতিল করা দরকার। করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা এবং ক্লিংকার আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বা প্রতি টনে ২০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আবাসন খাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে আবাসন খাতকে উৎপাদনশীল খাতের মর্যাদা দিয়ে ঋণ বিতরণের বাধা দূর করা এবং ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় আলাদা পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করারও তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের লোকসান না করিয়ে কিভাবে ফ্ল্যাটের দাম কমানো যায় তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে—এমন পরামর্শ দিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের কম দামে ফ্ল্যাট বানানোর সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য সরকারকে বিভিন্ন ছাড় দিতে হবে। অর্থনীতির সূত্রানুসারে কম দামে ফ্ল্যাট পেলে সাধারণ ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী হবে। আবাসন খাতের স্থবিরতা কেটে যাবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2020/06/08/920444