৮ জুন ২০২০, সোমবার, ১১:০৩

এবার অভাবে শহর ছাড়ছে মানুষ

বিদায় ঢাকা : করোনায় কাজ হারিয়ে ঢাকা থেকে অনেকেই পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন, শিবচরের কবির নামে একজন ছোট ব্যবসায়ী রাজধানী থেকে বিদায় যাত্রা করেছেন এ মিনি ভ্যানে করে। ছবিটি পোস্তগোলা থেকে তোলা : নূর হোসেন পিপুল

এবার অভাবে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। গ্রামে গেলে অন্তত ঘর ভাড়াটা লাগবে না। এই ভরসায় তারা গ্রামের উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে, অনেকের আয় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে নিজে রাজধানীতে থাকলেও পরিবার-পরিজনকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে দাঁড়ালে এমন অসংখ্য পরিবার চোখে পড়বে যারা শহর ছাড়ছে।

রাজধানীর বুড়িগঙ্গা সেতুর দিয়ে গতকাল এমন বেশ কয়েকটি পরিবারকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। ট্রাকভর্তি মালামাল নিয়ে সাথে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছেন তারা। তাদেরই একজন কবির হোসেন। যিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কবির জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে থাকতেন। ওই এলাকাতেই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। মনে করেছিলেন, অল্পতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখছেন মহাবিপদ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন। এখন কিছুটা সময় খুললেও ক্রেতা কম। যা উপার্জন হয় তা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাসা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় থাকার কোনো সঙ্গতি নেই। যে কারণে তারা ঢাকা ছাড়ছেন। গ্রামের বাড়ি শিবচরে গিয়ে বসবাস করবেন তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ঢাকায় আসবেন।

এমন আরেকটি পরিবারের সাথে কথা হয়েছে কাল। এই পরিবারের কর্তা হলেন রাসেল। রামপুরায় বসবাস ছিল তাদের। একটি বায়িং হাউজে চাকরি করতেন তিনি। করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। এখন বেকার অবস্থায় ঢাকায় থাকার কোনোই সঙ্গতি নেই। তাই মাওয়া যাচ্ছেন শ^শুর বাড়ি। আপতত সেখানেই বসবাস করবেন। ট্রাকে মালামাল নিয়ে ঢাকা থেকে চলে যাচ্ছে পরিবারটি।

কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা শামিম তার স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছেন। এমন অনেক পরিবার আছে যারা শহর ছাড়ছে এবং অনেকে শহর ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুগদা এলাকার বাসিন্দা মোকারোফ জানান, অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই; ঢাকায় থাকবেন কিভাবে? তিনি বলেন, গ্রামে গেলে অন্তত বাসা ভাড়াটা তো লাগবে না। শাক-কচু-লতি খেয়েও জীবন ধারণ করা যাবে। মাহমুদা খানম নামের এক গৃহিণী জানান, কম দামের বাসা খুঁজছেন। না পেলে শহর ছাড়তে হবে।

মানবাধিকার কর্মী রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, ঢাকায় কোনো মানুষ থাকবে না। ঢাকা এখনই ফাঁকা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যারা বেসরকারি চাকরি করতেন তাদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে। আবার অনেকে চাকরি করছেন ঠিকই; কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। তাদের ঢাকায় থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, লকডাউনের সময় ঈদের সময় মানুষ যে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো গ্রামের দিকে ছুটেছিল তা নাড়ির টানে নয়, অভাবে। শহর ছেড়ে মানুষ তখন থেকেই চলে যেতে শুরু করেছে।

মানবাধিকার কর্মী রেজা কবিরনয়া দিগন্তকে বলেন, করোনার কারণে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। মধ্যবিত্তরা চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে আছে। সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারায় তারা ঢাকা ছাড়ছে। মধ্যবিত্তরা চরম সঙ্কটে আছে। তারা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না। তারা না সরকারি সহায়তা পাচ্ছে, না চাকরিস্থলে বেতন পাচ্ছে। সরকারের উচিত এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রেজা বলেন, খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ আর এখন শহরে থাকবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/506770/