৮ জুন ২০২০, সোমবার, ১১:০২

ঢামেকের করোনা ইউনিটে আইসিইউ বেড মাত্র ১৪টি : বাড়ছে মৃত্যু

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর জন্য তুলনামূলকভাবে আইসিইউ বেড অনেক কম। এতে হাসপাতালে ভর্তি ও নতুন রোগীদের বেশির ভাগই জরুরি সময়ে আইসিইউ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঢামেকের করোনা ইউনিটে ১৪টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড রয়েছে। সঠিক সময়ে আইসিইউ না পাওয়ায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বলে রোগীর আত্মীয়-স্বজনের অভিযোগ।

জানা গেছে, প্রতিদিন করোনা ইউনিটে আক্রান্ত ও উপসর্গ মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। এদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ জন রোগীর আইসিইউয়ের জন্য অনুরোধ করছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৪৫ জন রোগীর আইসিইউ লাগবে বলে চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিচ্ছেন।

ঢামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে শিশু করোনা ইউনিটসহ তিনটি ইউনিট করা হয়েছে। করোনা ইউনিটগুলোতে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৫৬৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। এদের বেশির ভাগই করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগী। হাসপাতালে বর্তমানে বার্ন ইউনিটকে করোনা সার্জারি ইউনিট করা হয়েছে। আক্রান্তদের সার্জারি দরকার হলে তাদের জন্য এ ইউনিট চালু করা হয়েছে। নতুন ভবনে করোনা ইউনিট করা হয় অন্য কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য। বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় করোনা ইউনিটের আইসিইউয়ের ভেন্টিলেটর সব খুলে নতুন ভবনে সেগুলো লাগিয়ে করোনারোগীদের জন্য ১৪টি আইসিইউ বেড করা হয়। তারপর থেকে সরাসরি করোনারোগীদের জন্য বার্ন ইউনিটের করোনা ইউনিটে কোনো আইসিইউয়ের সাপোর্ট নেই। তবে বার্ন ইউনিটে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদাভাবে ২৪টি হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) রয়েছে। এ ছাড়া শিশু এইচডিইউ ও আইসিইউয়ের ওয়ার্ডকে এইচডিইউ করা হয়েছে।

এ দিকে ১৪টি বেডের আইসিইউ সব সময় রোগীতে পূর্ণ থাকে। তাই আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীর ফাইলে একটি সিল মেরে দেন ‘দুঃখিত বিছানা খালি নেই’। দিনের পর দিন ঘুরেও যদি একটি আইসিইউ পায় তাহলে রোগীর লোকজন যেন একটি সোনার হরিণ পান। আবার অনেক রোগী আইসিইউ না পেয়ে ওয়ার্ডে থাকতে হচ্ছে। সেখানে কেউ অক্সিজেনের মাধ্যমে সুস্থ হচ্ছেন, কেউবা মারা যাচ্ছেন। এভাবেই চলছে করোনা ইউনিটের পরিস্থিতি।

গত ৪ জুন কামরাঙ্গীরচর খলিফা ঘাট এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসেম (৬২) নামে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে নিয়ে তার ছেলে আরিফ নতুন ভবনের ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান। রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লেখেন জরুরি ভিত্তিতে তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। পরে নিয়ম অনুযায়ী ফাইল নিয়ে আইসিইউতে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ফাইলে অপারগতা জানিয়ে একটি সিল দিয়ে দেন। তবু সিরিয়াল খাতায় রোগীর নাম লেখান তার ছেলে। তারপর থেকে অপেক্ষার পালা, অবশেষে আইসিইউ না পেয়ে গতকাল রোববার দুপুরে তিনি মারা যান। এভাবেই আইসিইউয়ের অভাবে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, প্রতিদিনই চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ মিলে ৩০ থেকে ৪৫ জন রোগীর আইসিইউ লাগবে বলে ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের সেন্ট্রাল অক্সিজেনে কাজ না হলেই চিকিৎসকরা আইসিইউয়ের কথা লেখেন। রোগীর স্বজনরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আইসিইউ বিভাগে গিয়ে দেখেন ১৪টি বেডের একটিও খালি নেই। তিনি আরো জানান, এমনও দেখা যায় আইসিইউতে থাকা রোগী স্থিতিশীল হতে এক-দেড় মাস লেগে যায়। আবার দেখা গেছে, কেউ কেউ ১-২ ঘণ্টা পর মারা যাচ্ছেন। বেড সীমিত থাকায় অনেক রোগীর আইসিইউ দরকার হলেও ওয়ার্ডে অবস্থান করতে বাধ্য হন। এ ছাড়া, হাসপাতালের পুরনো ভবনে ৩৫টি আইসিইউ বেড আছে। তবে সেগুলো সাধারণ রোগীদের জন্য। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আরো আইসিইউ দরকার। সরকার যদি দেন তা হলে আমরা ব্যবস্থা করতে পারব। রোগীদের জন্য আইসিইউ অনেক বড় একটি বিষয়। এটি এমন নয় যে কোনো কিছু কিনে এনে লাগিয়ে দিলাম। অবশ্য করোনারোগীদের জন্য আইসিইউয়ের বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/506774/