ফাইল ফটো
২০ মে ২০২০, বুধবার, ৩:৩১

করোনাভাইরাসের প্রভাব

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ সংকট প্রকট

পিকেএসএফের চাহিদা ৪ হাজার কোটি টাকা, পেয়েছে ৫০০ কোটি টাকা; এমআরএ চেয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, পেয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা

করোনাভাইরাসের প্রভাবে কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় মাঠ পর্যায়ের ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত ২২ মার্চ থেকে তারা ঋণের কিস্তি আদায় করতে পারছে না।

ব্যবসাবাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে অনেক গ্রাহক দিতে পারছে না সঞ্চয়ের কিস্তি। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে টাকার জোগান আসছে না। এদিকে অনেক গ্রাহক সঞ্চয়ের টাকা তুলে নিচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো থেকেও তারা নতুন করে কোনো টাকার জোগান পাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে তহবিলের তেমন সংকট না থাকলেও ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ সংকট প্রকট হয়েছে। সংকটের কারণে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন ভাতা পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) সার্কুলার জারি করে কর্মীদের বেতান ভাতা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করেছে।

মাঠ পর্যায়ের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন ও গ্রাহকের সঞ্চয়ের ৮০ শতাংশ অর্থই থাকে মাঠ পর্যায়ে ঋণ হিসাবে বিতরণ করা। এগুলো তারা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে কিস্তি হিসেবে আদায় করে ওই অর্থে আবার নতুন ঋণ প্রদান করে। আদায় করা অর্থ থেকেই প্রতিষ্ঠানের খরচ নির্বাহ করা ও গ্রাহকের সঞ্চয়ের অর্থের অংশ ফেরত দেয়া হয়।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় গত ২২ মার্চ এমআরএ একটি সার্কুলার জারি করে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করে দিয়েছে। ওই সময়ে ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য কোনো গ্রাহককে চাপ দেয়া যাবে না। তবে কেউ দিতে চাইলে সেটা নেয়া যাবে। এদিকে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ, সঞ্চয়ের টাকা তুলতে চাইলে তা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এমআরএ’র নিবন্ধন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ৮০০ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে। প্রতি মাসে তারা গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। এর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ আদায় হয়। এ হিসাবে মাসে ১১ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ আদায় হয়। কিস্তি আদায় বন্ধ থাকায় এসব অর্থ আদায় হচ্ছে না। ব্যবসাবাণিজ্য স্থবির থাকায় গ্রাহকরা এখন কিস্তি দিতে পারছে না।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত আকারে চালু হওয়ায় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ শুরু করেছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে আর্থিক সংকটে পড়ে তারা আগের সঞ্চয়ও তুলে নিতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থের সংকট থাকায় তারা নতুন ঋণ দিতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির পরিচালক ও করোনায় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক মনিটরিং সেলের আহবায়ক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন বলেন, করোনার প্রভাবে মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যদের আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের কিস্তি আদায় করে তা দিয়ে আবার ঋণ দিত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারা কিস্তি আদায় করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, সংকট মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। তারা এ অর্থ ৯ শতাংশ সুদে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করবে। এ কার্যক্রম অচিরেই শুরু হবে।

সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে তহবিলের জোগান দিতে এখন ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। এ টাকা দিয়ে দুই থেকে তিন মাস ঋণ বিতরণ করা গেলে পরবর্তীতে কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে নতুন ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া চলমান রাখা সম্ভব হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চেয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে। প্রয়োজন হলে এ তহবিলের আকার আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ২০২টি প্রতিষ্ঠানকে তহবিলের জোগান দেয় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। তারা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে সরকারের কাছে চেয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত সরকার দিয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের কাছে ৮৫০ কোটি টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) কাছে চেয়েছে ১৬০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের বলেন, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় এখন জরুরিভিত্তিতে প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে টাকা পৌঁছাতে হবে। তারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, পিকেএসএফ এখন পর্যন্ত এসব তাদের সদস্য সংস্থাগুলোকে ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিলসহ মাঠে রয়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। প্রায় দেড় কোটি পরিবারকে ১০ হাজার শাখার মাধ্যমে তারা নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে ব্র্যাক বিতরণ করেছে ২৫০ কোটি টাকা। এছাড়া আশাও ঋণ বিতরণ করছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/308786/