২০ মে ২০২০, বুধবার, ৩:৩০

কড়াকড়ির মধ্যেই ঢাকা ছাড়ছে হাজারও মানুষ

ঈদ সামনে রেখে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে করোনার মহামারীর মধ্যেই রাজধানী ছাড়ছে হাজারও মানুষ। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে বসানো পুলিশের চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে নানা অজুহাতে হেঁটে ছোট ছোট যানবাহনে করে ছুটছে মানুষ। মঙ্গলবার ঘরমুখো মানুষের যেন ঢল নামে।

অনেককে আবার প্রধান সড়ক এড়িয়ে বিকল্প পথেও ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়।

সরকারের ১৪ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাজধানীর চার পাশের চেকপোস্টগুলোতে পুলিশকে সক্রিয় দেখা গেলেও মানুষের নানা অজুহাতের সামনে অনেক সময় অসহায় দেখা যায় পুলিশকে। গাড়ি চলাচল বন্ধে পুলিশের কঠোরতার মধ্যেই ঘরমুখো বেপরোয়া মানুষকে হেঁটে চেকপোস্ট অতিক্রম করতে দেখা যায়।

চেকপোস্ট পেরিয়ে কিছুটা সামনে গিয়েই পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ট্রাকে করে ঢাকা ত্যাগ করতে দেখা যায়। রাজধানীর কল্যাণপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, উত্তরা হাউস বিল্ডিং, টঙ্গী, আশুলিয়া এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর, সাইনবোর্ড, বাবুবাজার ব্রিজ সর্বত্রই একই চিত্র চোখে পড়ে।

গত ১৪ মে মন্ত্রিপরিষদ ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে সাধারণ ছুটি বর্ধিত করে। নির্দেশনায় বলা হয়, সাধারণ ছুটির এই সময়ে কেউই কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এ সময়ে সডকপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে এবং মহাসড়কে মালবাহী জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া অন্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় এবং এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচলও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করবে।

পরে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সেও বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে ও বর্ধিত ছুটি উদযাপনের জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই হতে দেয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সবাইকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ওইদিন থেকেই সক্রিয় হয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু এসবের মধ্যেই রোববার থেকে ঢাকা ছাড়তে উদগ্রীব হয়ে ওঠে মানুষ, যা মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানী থেকে বের হওয়া পণ্যবাহী ফিরতি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, এমনকি মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতে দেখা যায় মানুষকে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে ঘরমুখো মানুষের যেন ঢল নামে।

এছাড়া মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, গাবতলী বাসটার্মিনালের কাছে আমিনবাজার ব্রিজে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকা থেকে বের হওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে সাভারে যারা অফিস করার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন তারা আটকা পড়েন। ফলে আমিনবাজার ব্রিজ থেকে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। এ সময় মানুষকে দলে দলে হেঁটে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায়। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে চেকপোস্ট পেরিয়ে অন্য যানবাহনে ঢাকা ছাড়েন।

আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট, মোগড়াপাড়া, বন্দরের মদনপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় ও সাইনবোর্ড এলাকায় আটটি চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ বিপুলসংখ্যক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত যানবাহন ফেরত পাঠানো শুরু করে। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া কয়েক হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘুরিয়ে দেয়। তারা নানা অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম যুগান্তরকে জানান, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেউ যাতে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকায় প্রবেশ বা ঢাকা থেকে বের হতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মহাসড়কে পাঁচটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তিনি জানান, যৌক্তিক কারণ ছাড়া নানা অজুহাতে যেসব গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করছে তাদের ঘুরিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনাঘাট, লাঙ্গলবন্দ, কাঁচপুর, সাইনবোর্ডসহ নারায়ণগঞ্জ অংশে আটটি চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনের বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে সরকারি নির্দেশনার বাইরে যাতে কোনো ব্যক্তিগত যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে না পারে সে বিষয় তদারকি করা হচ্ছে। আপাতত ৩০ মে পর্যন্ত সরকারি আওতার বাইরে নিষিদ্ধ করা কোনো গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ এবং ঢাকা থেকে বের হতে দেয়া হবে না। পরে সময় বাড়ানো হলে সে অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/308781