ঘূর্ণিঝড় আমফানের গতিপথ
১৯ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১৬

প্রবল গতিতে আমফান

প্রবল গতি অর্জন করেছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আমফান। গতকাল সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মাইল)। সাগরে থাকতেই এর গতি আরো বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে দেশীয় ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কেন্দ্রগুলোর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। তবে স্থলভাগে উঠে আসার আগেই এর গতি কমে যাওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে। বলা হচ্ছে উপকূলে ওঠার সময় এর গতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারে নেমে যেতে পারে। সিএনএন বলেছে, আমফান ইতোমধ্যে আটলান্টিক অঞ্চলের ৪ ক্যাটাগরির হারিকেনের গতিসম্পন্ন হয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফান উপকূলে ওঠার পর গতি দ্রুত কমে গেলেও যা গতিবেগ থাকবে তা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট । উপকূলে ওঠার আগে ও পরে কমপক্ষে ৩০ ফুট (৯ মিটার) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে স্থলভাগের বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ দিকে কানাডা থেকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালের পরে বঙ্গোপসাগরে এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আর সৃষ্টি হয়নি। সিডর ও আইলার গতিও এত ছিল না। সিডরের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন পরিচালিত কো-অপারেটিভ ইনস্টিটিউট অব ম্যাটেরিওলজিক্যাল স্যাটেলাইট স্টাডিজের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় আমফানকে ক্যাটাগরি ৫ মানের গতিবেগসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বলে অভিহিত করা হয়েছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় গতিবেগ কিছুটা কমে ২৫০ কিলোমিটার হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে স্থলভাগে আঘাত করার পূর্বে ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কমে ক্যাটাগরি ৩ মানের ঝড় হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করতে পারে বলে ওই একই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

তবে কিছুটা সুসংবাদও রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি গত রাত ৮টা পর্যন্ত যে অবস্থানে ছিল সেখান থেকে সামান্য দিক পরিবর্তন করে কিছুটা ভারতের দিকে সরে গেছে। তারপরও এখনই আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই কারণ এখনো তা স্থলভাগে আঘাত হানার প্রায় দুই দিন অবশিষ্ট রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় আবারো বাংলাদেশের দিকে ঘুরে আসতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সুপার সাইক্লোন অর্থাৎ প্রবল গতি অর্জন করে। এটা আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশের সুন্দরবন ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘা উপকূলের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে উঠতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল বেলা ৩টায় ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ মঙ্গলবার শেষরাত থেকে আগামীকাল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

এ অবস্থায় মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদসঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদসঙ্কেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৬ নম্বর বিপদসঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদসঙ্কেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ব¡র নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/502928/