১৮ মে ২০২০, সোমবার, ৩:১১

করোনা পরবর্তী অর্থনীতিতে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসতে পারে

করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সব সেক্টর ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সেই সঙ্গে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের। শিল্প-বিনিয়োগ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পর্যটন, এয়ারলাইন্স, রপ্তানি খাতসহ সব খাতে করোনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হতে বসেছে সব ব্যবসা-বাণিজ্য। সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চললেও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংক খাত। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নের দায়িত্বও পড়েছে ব্যাংকগুলোর উপর। এতে করোনা পরবর্তীতে অর্থনীতিকে সচল করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণ, ঋণ আদায় করতে হবে। এই সময়ে খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মুনাফা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সংকটে পড়বে ব্যাংকখাত।

সবমিলিয়ে করোনাকালীন ও করোনা পরবর্তী ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসছে দেশের অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং এ থেকে কাটিয়ে ওঠাই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নানা পরিকল্পনা ও নির্দেশনাও আসছে সরকার থেকে। ঘোষিত হয়েছে মোটা অংকের প্রণোদনা প্যাকেজ। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সরকার অনেকটা কঠিন অবস্থার মুখো-মুখী হবে। যদিও এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। সীমিত পরিসরে খুলেছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। তবে এই মন্দা অবস্থায় তা কতটা টেকসই হবে তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

অর্থনীতির সার্বিক বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম খান মানবজমিনকে বলেন, এই অবস্থায় সরকার দেশের অর্থনীতির ওপর একটা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে থেকে আমাদের ব্যাংক খাতে চরম অস্থিরতা ছিলো। এখন এই মুহুর্তে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এবং এই অবস্থা বেশি দিন চললে এই খাতে আরো বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এরমধ্যে আবার সরকার জুন পর্যন্ত একটা ছাড় দেয়ার কথা বলছে। এটারও কিন্তু বড় প্রভাব পড়বে। যেখানে ব্যাংক আবার বলছে আমরা ছাড় দিতে রাজি আছি। কিন্তু এটাতে যে ক্ষতি হবে সেটা যদি সরকার ভর্তুকি দেয় বা মিটিয়ে দেয় তাহলে ব্যাংকিং সেক্টরে যে চাপ পড়বে সেটা কিন্তু কমে আসবে। এখন আমরা যেটা দেখছি যে, ব্যাংকিং সেক্টর কিন্তু দেশের সব সেক্টরের সঙ্গে নির্ভরশীল। এ অবস্থায় সামনে আমাদের বাজেট আসছে। এখানেও একটা বড় ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এখন এটা নির্ভর করছে তার ওপর যে এই অবস্থা দেশে কতদিন পর্যন্ত থাকবে। এটা দেখতে হবে এবং জীবন না জীবিকা সেটাও একটা প্রশ্ন। এজন্য আমরা বলছি যে জীবন ও জীবিকা দু’টিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন এটাকে সামনে রেখেই কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিকে, ব্যবসা-বাণিজ্য ছোট আকারে কিছু কিছু করে খুলে দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার যদি একেবারে সবকিছু লকডাউন করে দেয় তাহলে কিন্তু সবকিছু বন্ধই থাকবে। আর এভাবে যদি আর একমাসও কাটে তাহলে কিন্তু দেশের অর্থনীতি অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমরা যদি লকডাউন থেকে বের হয়ে আসতে না পারি তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও বিপদের সম্মুখীন হবে। একজন্য লকডাউন খুলে দিয়ে আমাদের কিছু পলিসি গ্রহণ করতে হবে। তা নাহলে শুধু দেশের নয় সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিতে অন্ধকার নেমে আসবে। এজন্য আমরা বলছি কিছু পলিসি গ্রহণ করতে। এই ভাইরাসটির সংক্রমণ কিভাবে রোধ করা যায় সেদিকে আমাদের বেশি নজর দেয়া উচিৎ। এছাড়া স্বাস্থ্যগত কিছু নিয়ম-কানুন মেনেই কিন্তু চলতে হবে। জীবন বাঁচাতে স্বস্থ্যগত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকার নয় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে, সেটা বাসা হোক আর অফিস হোক। এখন যদিও কোন ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আসেনি। এখন এ অবস্থায় আমাদের এই বাস্তবতা ভেবেই কিন্তু আমাদের অর্থনীতিকে খুলতে হবে। এটাও আমরা যদি ঠিকভাবে না খুলি তাহলে হবে না। আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি যে অনেক প্রতিষ্ঠান খোলার পড়েও তারা টিকতে পারেনি? সেগুলোকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক এই সভাপতি আরো বলেন, এ অবস্থায় প্রণোদনা প্যাকেজ বলেন বা ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে এটাতো লাগবেই। এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় হলো যে, ট্যাক্সের ব্যাপারে যদি একটু ছাড় দেয়া যায়। সেই ট্যাক্সের টাকা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি এবং সেটা দিয়ে আমরা যদি কর্মসংস্থানটা ধরে রাখতে পারি তাহলে কিন্তু অনেকটা সুবিধা হয়। এভাবে যদি ইন্ডাইরেক্টলি কিছু প্রণোদনা দেয়া যায়, সেই সঙ্গে আরো কিছু পদক্ষেপ সরকার নিলে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের সহজ হবে।

তিনি বলেন, সরকার একটা প্রণোদনা দিয়েছেন। কিন্তু এটা যদি সঠিকভাবে মানুষের কাছে না যায় তবে সুফলতো আসবেই না বরং দেশের সার্বিক অর্থনীতিতো খারাপ হবেই আবার ব্যাংকিং খাতে আরো বড় ধ্বংস নেমে আসবে। তাই এই প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় লক্ষ্য রেখে দিতে হবে। যারা ঋণ খেলাপি, যারা লোন নিয়ে আর দিচ্ছে না তাদেরকে এই প্রণোদনার আওতায় আনা যাবে না। তবে সার্বিকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অন্যান্য দেশ যেভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে সেই খান থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=227046