১১ মে ২০২০, সোমবার, ৪:৩৯

প্রথম দিনেই লন্ডভন্ড

ঈদ মার্কেট খুলেছে দেশের ৯০-৯৫ ভাগ মার্কেট বন্ধ

দেড় মাস বন্ধ থাকার পর দেশে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ ৮৮৭ জন সংক্রমণের দিন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই খোলা হয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের বেশ কিছু শপিংমল, মার্কেট ও বিপণিবিতান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের সামনে দেখা যায় মার্কেটে মাত্র একটি গেট দিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করায় গাদাগাদি করে মার্কেটে ঢুকছেন ক্রেতারা। মার্কেটের বাইরে হ্যান্ডমাইক হাতে নিরাপত্তা প্রহরীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মার্কেটে প্রবেশের আহ্বান জানালেও সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। ঈদের কেনাকাটার জন্য মার্কেট খোলার প্রথম দিনেই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সামাজিক দূরত্ব। অবশ্য কিছু কিছু মার্কেটে জীবাণুনাশক স্প্রে করিয়ে তবেই মার্কেটে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। কিছু মার্কেটে ক্রেতার ভিড় থাকলেও রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম দেখা গেছে।

গতকাল যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ার আয়েশা মার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নগরীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকার দোকান, উত্তরার কিছু দোকান, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের বেশ কিছু বিপণিবিতান খোলা হয়। নিউমার্কেট সংলগ্ন ক্রোকারিজের মার্কেট খোলা হয়। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা রেখে মার্কেট খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতার সামাজিক দূরত্ব রক্ষা দূরের কথা গাদাগাদি, ঠেলাঠেলি করে ক্রেতাদের মার্কেটে প্রবেশ করতে দেখা যায়। গেইটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হলেও ক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। কয়েকটি মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা কম হলেও আয়শা মার্কেটে দেখা গেল ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। ক্রেতারা হুড়োহুড়ি করে কাপড় পছন্দ করছেন। একই কাপড় একজন দেখে অন্যজনকে দিচ্ছেন। মহিলারা একজনই ৮ থেকে ১০টি করে কাপড় নেড়েচেড়ে দেখে পছন্দের শাড়ি কিনছেন।

ঈদ সামনে রেখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই সরকার ব্যবসায়ীদের কিছু শর্ত দিয়ে দোকান ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়ে ৪ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয়েই দেশের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ শপিংমল ও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-মার্কেট-দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় গতকাল খোলা হয়েছে বেশ কিছু মার্কেট। মার্কেট খেলার পর সকালে ক্রেতা না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। অধিকাংশ ক্রেতাই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্ব না মানায় গতকালই ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের একটি বহুতল মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

শপিংমল খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ব্যবসায়ী নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেয়া হলে বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ক্রেতারা কয়েকটি করে কাপড় দেখে একটি কাপড় কেনেন। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়বে। সে জন্যই বেশির ভাগ ব্যবসায়ী মার্কেট ও দোকান আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়েই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

রাজধানীর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, কোনো মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা কম, আবার কিছু মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। প্রায় সবার মুখে মাস্ক দেখা গেলেও ক্রেতাদের বেশির ভাগই সামাজিক দূরত্ব রক্ষার ধার ধারেননি।

সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে এলিফ্যান্ট রোড পর্যন্ত অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকলেও পাঞ্জাবি ও কিছু কিছু ব্র্যান্ড আইটেমের দোকান এবং জুতার দোকান খোলা হয়। ধানমন্ডিতে আলমাস ও ইউনিমাটের শোরুমে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়। নিউ নিউমার্কেট ওভার ব্রিজ সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটের নিচ তলায় ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে মার্কেটে প্রবেশ করছেন। তাদের হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু এলিফ্যান্ট রোডে অনেককেই বিনে বাধায় দোকানে ভীড় করতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন জানান, রাজধানীর বেশিরভাগ শপিংমল ও মার্কেট বন্ধ থাকলেও পুরান ঢাকার ইসলামপুর মার্কেট, চকবাজার, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ীর আয়েশা মার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট এবং নগরীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকার দোকানগুলো খোলা হয়েছে। তবে ব্যস্ততম গুলিস্তান মার্কেট, বঙ্গবাজার, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, মৌচাক, আনারকলি মার্কেট, নয়া পল্টনের পলওয়েল মার্কেট এবং মিরপুর এলাকার মার্কেটগুলোসহ রাজধানীর বেশিরভাগ শপিংমল ও মার্কেট বন্ধ।

এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নগরবাসীকে সরকার ঘোষিত সময়সূচি ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে নিজ নিজ এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত মার্কেট থেকে তাদের ঈদের কেনাকাটা শেষ করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া প্রতিটি মার্কেট ও শপিংমলের প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক টানেল বা চেম্বার স্থাপন এবং প্রতিটি দোকানে পৃথক তাপমাত্রা পরিমাপক ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।

https://www.dailyinqilab.com/article/290850/