১০ মে ২০২০, রবিবার, ৫:১৬

বকেয়া ও শতভাগ বেতন দাবি

গাজীপুর ও সাভারে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

বকেয়া ও শতভাগ বেতনের দাবিতে শনিবার গাজীপুর, কালিয়াকৈর ও সাভারে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তারা লাঠি মিছিল ও কারখানা ভাংচুর করেন। গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা এলাকার দুই পোশাক কারাখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। টিয়ার শেল ও বুলেট ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে, ৪ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সাভার ডিইপিজেডের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এদিকে, শুক্রবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সম্পর্কে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাজীপুর : গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দিন জানান, ২ দিনের জন্য বন্ধ লুইটেক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানার ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে বেলা ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, শুক্রবার বেতনের দাবিতে জিরানী এলাকার ডরিন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শনিবার থেকে লে-অফ ঘোষণা করলে সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে আশপাশের বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে অন্য শ্রমিকদেরও আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈর উপজেলার কবীরপুর, বাড়ইপাড়া হিজলহাটি এলাকায় শনিবার সকালে শতভাগ বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা কালিয়াকৈর-নবীনগড় সড়কের বাড়ইপাড়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে লাঠি মিছিল নিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালান। মিছিলের সময় এটিএম বুথ ও বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা চালান। এ সময় কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানান, আশুলিয়ার কবীরপুর ও উপজেলার হিজলহাটি এলাকার নাপা অ্যাপারেল পলমল গ্রুপের শ্রমিকরা গত মাসের শতভাগ বেতনের দাবি করেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকার ঘোষিত ৬০ ভাগ দেয়ার কথা বললে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন। পার্শ্ববর্তী আশুলিয়া এলাকা থেকে একদল শ্রমিক এসে জিরানী এলাকার ডরিন কারখানা, নর্দান ফ্যাশন, কবিরপুর পলমল, বাড়ইপাড়া মাহমুদ জিন্স ও পলমল কারখানা এবং কালিয়াকৈরে নর্দান কারখানা বন্ধের চেষ্টা চালান। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা চলে যান।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, সরকারের ঘোষিত বেতন-ভাতার বিষয়টি আমরা মানি না। আমাদের গত মাসের বেতন শতভাগ দিতে হবে। শতভাগ বেতন না দিলে কারখানায় আমরা কেউ কাজ করব না। বাড়ইপাড়া এলাকার পলমল কারখানার উৎপাদন কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, আমাদের কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিল। কিন্তু কবীরপুর জিরানি এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আমাদের কারখানাসহ সব কারখানা বন্ধের জন্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমরা আমাদের কারখানা একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে শ্রমিকদের ছেড়ে দেই।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আলমীগর হোসেন মজুমদার বলেন, পার্শ্ববর্তী আশুলিয়া থানার পলমল ও ডরিন গ্রুপের শ্রমিকরা কালিয়াকৈর পলমল কারখানা শ্রমিকদের নিয়ে কারখানা বন্ধ করতে এসেছিলেন। ওই শ্রমিকরা সড়কে ভাংচুর চালালে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। এদিকে পলমল কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা চলে যান।

সাভার : সাভারে ডিইপিজেডের এ-ওয়ান বিডি লিমিটেডের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ডিইপিজেডের মূল ফটকের সামনে এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা আশুলিয়া থানা ও আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। কারখানার কর্তৃপক্ষ ১১শ’ শ্রমিকের ৪ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করছে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে সকাল থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখান থেকে শ্রমিকদের পুলিশ সরিয়ে দেয়। তবে বাপাইল বাস স্ট্যান্ড প্রদক্ষিণ করে শ্রমিকরা আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রাখবেন বলে জানান। জানতে চাইলে সাভার ডিইপিজেডের (বেপজা) জিএম বলেন, চলতি মাসের ১৯ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। এজন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রোববার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও মালিকপক্ষের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেয়া নিয়ে আলোচনা হবে।

ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) : বকেয়া বেতনের দাবিতে ফতুল্লায় কুতুবআইল এলাকার ক্যাডটেক্স গার্মেন্টের ডাইং বিভাগের শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শ্রমিকদের মারধরে কারখানার ৫ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে ১৫ শ্রমিক আহত হন। শুক্রবার রাতে কারখানার গেট আটকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের অভিযোগ, ক্যাডটেক্স গার্মেন্টের ডাইং বিভাগে কর্মরত দুই শতাধিক শ্রমিকের ৩ মাসের বেতন দেয়নি। একাধিকবার তারিখ দিয়েও কারখানা মালিক বেতন পরিশোধ করেননি। বেতন না দিয়ে কারখানার মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে মালিক পক্ষ। এ খবর পেয়ে তারা কারখানায় অবস্থান করেন। কিন্তু পুলিশ ডেকে তাদের মারধর করা হয়েছে। ক্যাডটেক্স গার্মেন্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারির অর্ধেক বেতন দিয়েছেন। মার্চ ও এপ্রিলের বেতনও তারা পাবে। এর মধ্যে কাজ না থাকায় মার্চে কারখানা বন্ধ ছিল। তবে এপ্রিলে কারাখানা খুলেছে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষ কিছু কাপড় অন্যত্র বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে পুলিশ ধাওয়া করেছে মারধর করেনি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/305671