১৪ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ৩:২৭

একদিনেই শনাক্ত ১৮২ জন: দেশে করোনার সামাজিক সংক্রমণ চলছে

মোট শনাক্ত ৮০৩ মৃত্যু ৩৯ * লকডাউন আরও কঠোর করতে হবে

দেশে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ চলছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আক্রান্ত যেসব লোক বিভিন্ন স্থানে গেছেন তাদের মাধ্যমে রোগটি সামাজিকভাবে ছড়িয়েছে। লকডাউন কঠোরভাবে পালিত না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক রোগী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ জনের দেহে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

এতে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৩। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা ৩৯ জন। এই সময়ে আরও তিনজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে এ পর্যন্ত মোট ৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সোমবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য জানান। বুলেটিনে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তুতির বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য তুলে ধরেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণের অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। নিষেধাজ্ঞার পরও এ দুটি এলাকা থেকে মানুষ অন্য এলাকায় যাচ্ছে এবং তাদের অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ ধরা পড়ছে। তিনি বলেন, আমি গতকাল বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সব জায়গায় দেখা গেছে, যেখানে সংক্রামিত হয়েছে, যারা সংক্রামিত করেছেন তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গিয়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে, বিশেষ করে ওই এলাকাগুলোতে। কিন্তু এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, লকডাউনটা মানুষ পুরোপুরি মেনে চলছে না। বাজারে জটলা পাকিয়ে আছে, অনেক লোকজন ঘোরাফেরা করছে। এটি পরিহার করতে হবে। যেখানে ঘোরাফেরা করবে, সেখানেই সংক্রমিত হবে। ইতোমধ্যে আপনারা জানেন, আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) চলছে। সেটি যেন না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা দেশবাসীর সেবায় এগিয়ে এসেছেন। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ঢাকা শহরের মধ্যে যে হাসপাতালগুলো আমরা নেব, তার মধ্যে ৫০০ শয্যার শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৭০০ শয্যার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল- এগুলোতে আইসিইউ আছে। এগুলো ভালো হাসপাতাল। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল যেগুলো আছে, তারা এগিয়ে আসছেন, তাদেরও আমরা তালিকাভুক্ত করে নিচ্ছি। মন্ত্রী জানান, প্রতিটি জেলার মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যারা করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করাতে আগ্রহী, তাদেরও অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরনো বার্ন ইউনিট, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের পুরনো একটি অংশকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট, ফুলবাড়িয়া এলাকার রেলওয়ে হাসপাতাল ও নয়াবাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতালও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-বিআইটিএডিতেও করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সারা দেশে ৭ হাজার ৬৯৩টি আইসোলেশন শয্যা এবং ১১২টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি এবং ১৭ শতাংশ বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন আরও ৫ হাজার ৬৮৪ জন। এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮৫ হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে এবং ২ হাজার ১৮৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনমুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫ জন এবং এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন মুক্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৭৬ জন। আর আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৭ জন। সারা দেশে সব জেলা-উপজেলায় ৪৮৮টি প্রতিষ্ঠানে ২৬ হাজার ৩৫২ জনের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইন নম্বরে (১৬২৬৩) ৫৩ হাজার ১৮০টি কল এসেছে, ৩৩৩ নম্বরে কল এসেছে ৩৭ হাজার ৭২২টি এবং আইইডিসিআরের (১০৬৫৫; ০১৯৪৪৩৩৩২২২) নম্বরে ফোনকল এসেছে ৩ হাজার ২০৯টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ হাজার ১১১টি করোনা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ফোনকল এসেছে। এসব নম্বরে এ পর্যন্ত মোট কল এসেছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৭৪০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৬২৫ জন চিকিৎসক এবং এক হাজার ৩১৪ জন নার্স কোভিড-১৯ চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই সময়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্থবন্দরগুলো দিয়ে আরও ২৯৭ জন দেশে প্রবেশ করেছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ২২৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৭২২ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। যেসব প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের পরীক্ষা চলছে সেগুলো হল- আর্মডফোর্সেস ইন্সটিটিউট অব ফ্যাথলজি, বিএসএমএমইউ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, আইসিডিডিআরবি, আইদেশী, আইপিএইচ, আইইডিসিআর, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন, বিআইটিআইড চট্টগ্রাম, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ এবং শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ বরিশাল।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/298119/