১৩ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:৫৬

চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ জাহাজ জট

ইয়ার্ডগুলোতে কনটেইনারের স্তূপ

কার্যত লকডাউন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য ডেলিভারিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বন্দরে ভয়াবহ জাহাজ জট ও বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল যেমনি বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে আমদানি ব্যয়।

বন্দর সূত্র জানিয়েছেÑ চট্টগ্রাম বন্দর জেটি ও বহির্নোঙ্গর মিলে গতকাল ১১৬টি কর্মক্ষম জাহাজ থাকলেও কাজ হয়েছে ৬০টি জাহাজে। বাকি ৫৬টি জাহাজ অলস বসে ছিল। বন্দর সূত্র জানিয়েছেÑ গতকাল বন্দরে কনটেইনারবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ ছিল ৩৮টি। এর মধ্যে জেটিতে নোঙ্গর করা ১০টি কনটেইনারবাহী জাহাজে আমদানি-রফতানিবাহী কনটেইনার ওঠানামা হলেও ২৮টি জাহাজ বহির্নোঙ্গরে অলস বসে ছিল।

বন্দর সূত্র জানায়, আগে যেখানে বহির্নোঙ্গরে পৌঁছার পর পরই সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজ জেটিতে বার্থিং পেতো, বর্তমানে বার্থিং পেতে এসব জাহাজকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জেটিতে নোঙ্গররত ১০টি জাহাজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব জাহাজের কোনো কোনোটিকে ৫-৭ দিন পর্যন্ত বার্থিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এ ছাড়া গতকাল বন্দরে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ ছিল ২৯টি, যার মধ্যে ৯টি জাহাজ অলস বসে ছিল। খাদ্যশস্যবাহী ৭টি জাহাজ থাকলেও কাজ হয়েছে ৫টি জাহাজে। ১৩টি তেলবাহী ট্যাংকারের ১১টিই অলস বসেছিল, বাকি ২টিতে কাজ হয়েছে। এর বাইরে সিমেন্ট ক্লিংকার বোঝাই ২৭টি, চিনি বোঝাই ১টি এবং লবণ বোঝাই একটি জাহাজ বন্দরে নোঙ্গররত ছিল।

এ দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট জাহাজ জট ও কনটেইনার জটে পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একেকটি জাহাজ বন্দরে একদিন অতিরিক্ত সময় অপেক্ষার জন্য ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত মাশুল গুনতে হয়, যা ভোক্তাদের ওপরই বর্তায়।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে সরকার কর্তৃক প্রায় এক মাসের সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং গণপরিবহন বন্ধ করায় পুরো দেশ কার্যত অঘোষিত লকডাউনে। দেশের ও বহির্বিশ্বের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। পাশপাশি আমদানি পণ্য ছাড় এবং রফতানি পণ্য জাহাজীকরণ নিশ্চিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজও চালু রাখা হয়েছে সার্বক্ষণিক। ব্যাংক থেকে বিএল নেয়াসহ জরুরি আমদানি-রফতানির সুবিধার্থে যেসব শিপিং এজেন্ট, মেইন লাইন অপারেটর, ফিডার অপারেটরের জাহাজ বন্দরে আসছে তাদের অফিসও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে।

কিন্তু দেশ কার্যত অঘোষিত লকডাউনে যাওয়াতে একদিকে শিল্প কারখানাগুলোর প্রায় সবই বন্ধ ঘোষণা, হাতেগোনা কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা চালু থাকলেও বেশির ভাগ বন্ধ থাকা, দেশের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বিপুল পণ্য মজুদ থাকলেও ক্রেতার অভাবে পণ্য বিক্রি না হওয়া সব মিলিয়ে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বন্দরে সমুদ্রগামী জাহাজের গমনাগমন রয়েছে স্বাভাবিক। ফলে বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী- চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইই্উএস। বিপরীতে গতকাল রোববার বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিল ৪৬ হাজার ১১৬ টিইইউএস।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে বলেন, বন্দরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন টার্মিনাল ও ইয়ার্ড মিলে ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সাইজের একক হিসেবে)। আমরা ২৪ ঘণ্টা বন্দর সচল রাখলেও শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় ডেলিভারি কমে গেছে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৪৮ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। গতকাল রোববারও হাজার খানেক কনটেইনার ডেলিভারির এসাইনমেন্ট ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ডেলিভারি কমলেও এখন পর্যন্ত জাহাজ আগমন কমেনি। ফলে এ অবস্থা চলতে থাকলে ইয়ার্ডে স্থান সঙ্কটে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিকল্প হিসেবে আরো ৪-৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার বন্দর সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/495369