১৩ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:৫৩

নগরীর ভোটার না হওয়ায় ত্রাণও পাচ্ছেন না

ঢাকা শহরে তিন লাখ হকার বেকার

ঢাকা শহরের প্রায় তিন লাখ ভাসমান ও স্থায়ী হকার বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের মধ্যে চলমান সাধারণ ছুটিতে হকাররা ফুটপাতে বসে ব্যবসাবাণিজ্য করতে না পারায় তাদের আয়ের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশির ভাগ হকার অভাব-অনটনে রয়েছেন। তারা খাদ্যাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জানা গেছে, ঢাকা শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক যে ত্রাণসহায়তা দেয়া হচ্ছে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড চেক করে দেয়া হচ্ছে। যেই এলাকায় ত্রাণ দেয়া হয় সে এলাকার ভোটার হলেই কেবল ওই সব মানুষকেই ত্রাণসহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হকারদের একটি বড় অংশ ঢাকার বাইরের ভোটার হওয়ায় ত্রাণসাহায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওয়ার্ডভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে পরামর্শ না করে তালিকা করায় ত্রাণসহায়তা পাওয়ার আওতায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না দিন খেটে দিন এনে খাওয়া এবং নি¤œ আয়ের মানুষের অনেকেই। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব হকারদের ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কটে পড়ার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা শহরের তিন লাখ হকারের মধ্যে আড়াই লাখ হকার ফুটপাথে পসরা বসিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এর মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, নয়াপল্টন, সদরঘাট, মালিবাগ, ফার্মগেট, সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেটের আশপাশে, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গাবতলী, মিরপুর, বনানী, কাকলি ও উত্তরা এলাকায় হকারদের পদচারণা বেশি। এদের কেউ কেউ একটি ঝুড়িতে করে নানা রকমের ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার কেউ কেউ একটি ঝুড়িতে করে জুতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এদের অনেকেই ছোট ছোট চৌকিতে করে নানা রঙের পোশাক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকেই বেল্ট, ঘড়ি, মোজা, মানিব্যাগ, স্কুল ব্যাগ ও হাত ব্যাগ, সিট কাপড়সহ নানা আসবাবপত্র বিক্রি করে সংসার পরিচালনা করে থাকেন। এ ছাড়া রাজধানীতে ভাসমান যে প্রায় ৫০ হাজার হকার আছেন তাদের অনেকেই বাসের মধ্যে পানি, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, বাদাম, পেয়ারা, আমড়া, শসা, গাজর, চিপস, টুথব্রাশ, বইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আবার কেউ কেউ রাজধানীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ভ্যান গাড়িতে করে বাদাম, ভুট্টা, শিমের বিচি, ডিম, ছোলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

হকার ব্যবসায়ীদের মতে, তাদের প্রতিদিন আয় হতো ৩০০ থেকে ১৫ শ’ টাকা পর্যন্ত। ভাসমান হকারদের আয় একেবারে কম, যা দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীর মতো জায়গায় বসবাস করা অনেক কষ্টের। আর সরকারি জায়গায় রাস্তার পাশে বসে অনেকটা স্থায়ীভাবে ব্যবসাবাণিজ্য যারা করেন তাদের আয় একটু বেশি হওয়ায় মোটামুটি স্বচ্ছলভাবে পরিবার নিয়ে চলতে পারেন। তবে এই মহাদুর্যোগের মধ্যে তাদের সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গত ২৫ মার্চ থেকে রাজধানীর সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী হকার্স লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এস এম জাকারিয়া হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজধানীতে প্রায় তিন লাখ হকার ব্যবসাবাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সব ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই প্রতিদিনের রোজগার দিয়ে প্রতিদিনের সংসার চালাতেন। এখন হকারদের সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কোনো আয় রোজগার না থাকায় অনেকেই কষ্টে আছেন, মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, ঢাকা সিটিতে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তাও হকাররা পাচ্ছেন না। কারণ ত্রাণ দেয়ার সময় ভোটার আইডি কার্ড চেক করে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। আর এজন্য যেসব হকার ঢাকার ভোটার নন তারা ত্রাণসহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই দুর্যোগের সময় এসব কিছু বিবেচনা না করে সবাইকেই ত্রাণসহায়তা দেয়া উচিত। এস এম জাকারিয়া হানিফ বলেন, এসব কর্মহীন মানুষকে সরকারিভাবেও অনুদান দিয়ে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণের জন্য যে তালিকা করা হয়েছে সেই তালিকায় প্রকৃত অভাবী মানুষ যুক্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিন আনে দিন খেটে খাওয়া মানুষ ও নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সকল অভাবী মানুষ যাতে দুবেলা দুমুঠো খেতে পারেন সরকারের সে ব্যবস্থা করা উচিত। দেশের বিত্তবানদেরও এই মহাদুর্যোগের মধ্যে অসহায় মানুষকে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/495383