নারায়ণগঞ্জের জামতলায় মৃত আফতাব উদ্দিনের নামাজে জানাজা দিচ্ছেন মাত্র চারজন মানুষ : নয়া দিগন্ত
১৩ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:৫৩

নারায়ণগঞ্জে স্বাভাবিক মৃত্যুতেও লাশ দাফনে লোক পাওয়া যাচ্ছে না

মৃত্যু সংবাদ প্রচার হয় না মসজিদের মাইকে

নারায়ণগঞ্জের মসজিদগুলোতে এখন আর মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা হয় না। স্বাভাবিক মৃত্যুতেও লাশ দাফন কাফন এবং জানাজা নামাজ দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। করোনা আতঙ্কে অনেক মানুষ তাদের স্বজনদের মৃত্যুর খবর পেলেও দেখতে যায় না। এমনকি প্রতিবেশীর মৃত্যুর খবরে কেউ উঁকি দেয় না। করোনার কারণে ভেঙে পড়েছে সামাজিক সৌজন্যবোধ। দিন যতই যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে করোনা আতঙ্ক আরো বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে ৯ জনের মৃত্যুও এবং ৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। আইইডিসিআর এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জকে করোনা ক্লাস্টার নগরী ঘোষণা দিয়েছে।

একসময় পাড়া-মহল্লায় মৃত্যুবরণ করলে প্রথমেই মৃত্যুর সংবাদটি স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে প্রচার করা হতো। মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হতো মৃত্যুর সংবাদ। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হতো জানাজা নামাজের সময় ও স্থান। প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীদের মৃত্যুসংবাদ স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণার খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি লাশ দাফন কাফন ও নামাজে জানাজায় আগের মতো লোকজন উপস্থিত থাকছে না।

জানা গেছে, ফতুল্লায় মোকলেছার (৫৫) নামে এক ডাইং কারখানার শ্রমিক শবেবরাতের রোজা রাখা অবস্থায় হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠে নিজ ঘরেই মারা যান। গত শুক্রবার দুপুরে ফতুল্লার সস্তাপুর গাবতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তানের আহাজারিতে বাড়িওয়ালাসহ আশপাশের কারো মনই গলেনি একটু সহযোগিতার হাত বাড়াতে। শুক্রবার দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাশ নিয়ে ঘরেই বসে ছিলেন মৃত শ্রমিকের পরিবার।

পরে যুগান্তরের ফতুল্লা প্রতিনিধি আলামিন প্রধানের উদ্যোগে রাত ১১টায় স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। মৃত মোকলেছার নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার খাতামধুপুর ঠনঠনিপাড়া গ্রামের তফেল মামুদের ছেলে। তিনি ফতুল্লার সস্তাপুরর এলাকায় নূর ইসলামের বাড়িতে স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে একটি ডাইং কারখানায় কাজ করতেন।

নিহতের স্ত্রী লাইলী জানান, তার স্বামী মোকলেছার শবেবরাতের তিনটি রোজা রেখেছেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রেখেই ডাইং কারখানায় কাজ করেছেন। শুক্রবার তৃতীয় রোজা রেখে ছিলেন, এ দিন কারখানা বন্ধ ছিল তাই বাসায় ছিলেন তিনি। হঠাৎ দুপুরে স্ত্রীকে ডেকে বলেন, তার বুকব্যথা করছে, এ কথা বলেই তিনি বিছানায় শুয়ে পড়েন। এরপর অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তখন কান্নাকাটি করে বাড়িওয়ালাকে ডাকাডাকি করলেও করোনাভাইরাসে মারা গেছে ভেবে আতঙ্কে কেউ আসেনি।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও নাহিদা বারিক জানান, মৃতের পরিবারের কাছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহযোগিতা করা হবে। তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাস থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তবে পাশের কেউ বিপদে পড়লে তাকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করতে হবে। জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন সঙ্গীতশিল্পী হিরো। সারারাত রাস্তায় পড়ে থাকে তার লাশ। করোনা আতঙ্কের কারণে কেউই এগিয়ে আসেনি। পরে স্থানীয় প্যানেল মেয়র আফরোজা হাসান বিভা পুলিশের সহায়তায় লাশ দাফন কাফন ও নামাজে জানাজার ব্যবস্থা করেন।

গত ৮ এপ্রিল শহরের জামতলা এলাকায় বাসায় মারা যান ৭০ বছর বয়সী আফতাব উদ্দিন, তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার পর তার লাশটি ছুঁয়ে দেখেননি পরিবারের সদস্যরা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ চারজনকে নিয়ে লাশের নামাজে জানাজা ও দাফন কাফন করেন। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, আফতাব উদ্দিন ঠাণ্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। করোনা আতঙ্কের কারণে কেউ এগিয়ে আসেননি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/495392