১ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ৯:৩৪

করোনার প্রভাবে শাহজাদপুরের অর্ধলক্ষ তাঁত শ্রমিক বেকার

করোনার প্রভাবে সারা দেশ লকডাউন ঘোষণার প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পখ্যাত শাহজাদপুরের হাজার হাজার তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পরেছে এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক। একমাত্র উপার্যনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শ্রমিক পরিবারের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। তিন বেলা তিন মুঠো খাবার জোগার করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অনেক। শাহজাদপুরের হস্ত চালিত তাঁতে প্রায় বছরে ৭০ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদিত হয় যা অভ্যান্তরীন চাহিদার ৪০ ভাগ মিটিয়ে থাকে। বাংলাদেশের তাঁত সমৃদ্ধ জেলা হিসাবে পরিচিতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় রয়েছে হাজার হাজার তাঁতী পরিবার।

শাহজাদপুরের তাঁতীদের তাঁত কারখানায় উৎপাদিত বস্ত্র দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী হয়ে থাকে । তাঁত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে এ উপজেলার লক্ষাধিক নারীÑপুরুষ বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত। ঘরে বসে না থেকে কেউ তাঁতে কাপড় বুনিয়ে, কেউ চরকায় সূতা কেটে, কেউ সূতা প্রসেসিং করে, কেউ ড্রাম মাষ্টারী করে , নির্বাহ করে থাকে জীবন জীবিকা।শাহজাদপুরের অর্থনীতিরও সিংহভাগ অর্জিত হয় এই তাঁত শিল্পকে ঘিরেই। করোনার প্রভাবে কারখানা মালিকগণ কারখানা বন্ধ করে দেয়ায় শ্রমিকরা অলস বসে খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। সরে জমিনে ঘুরে উপজেলার তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা খুকনী, কৈজুরী, জামিরতা, ডায়া, রুপপুর,তালতলা, হামলাকোলা, পুঠিয়া, পোরজনা, পাড়কোলা, গাড়াদহ এলাকার তাঁত কারখানাগুলি বন্ধ দেখা যায়। অথচ কয়েকদিন আগেও তাঁতের খট খট শব্দ আর শ্রমিকদের কলরবে মুখরিত ছিল তাঁতীপাড়া। এখন তাঁতীপাড়াগুলোতে পিনপতন নিরাবতা লক্ষ করা গেছে। তাঁতীদের চোখে মুখের বেদনার ছাপ। ডায়া পূর্বপাড়া গ্রামের তাঁত শ্রমিক সাগর আলী (৪৮) জানালেন, গত ২০ বছর ধরে তিনি তাঁতে কাপড় বুনে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পাঁচ সদস্যের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। হঠাৎ করোনার কারণে কারখানা বন্ধ হওয়ায় এখন তিনি বেকার। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পরছে। কেউ এ পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। কবে নাগাদ এ অবস্থা কাটবে জানা নেই তাঁর। পুঠিয়া গ্রামের তাঁত শ্রমিক সাহেদ আলী (৩৬) জানান, তাঁত বন্ধ চলমু কেমনে ? পরিবারের বোঝা আর বহন করতে পারছিনা। আমরা না খেয়ে থাকলেও দেখার মত কেউ নেই। সরকারি বেসরকারি কোন সাহায্য আমাগো কপালে জুটবনা।

এ ব্যাপারে হামলাকোলা গ্রামের বৃহৎ তাঁত কারখানা মালিক আব্দুল মান্নান জানান, সরকারি নির্দেশ মেনেই কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্ষতি আমাদেরও হচ্ছে। শ্রমিকদের এই দুর্দিনে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থসহ ত্রানসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ।

http://dailysangram.info/post/411919