প্রতীকী ছবি
৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:০৬

করোনার থাবা

ভারতে আটকে পড়েছেন ৬০০ বাংলাদেশি

যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ভাতুড়িয়া গ্রামের ডা. রাসেল কবির বিপ্লব ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে পূর্বনিধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ভারতের চেন্নাই যান গত ১১ মার্চ। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা ও মামা। কথা ছিল ভেলোরের সিএসসি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ২৪ মার্চ দেশে ফিরবেন তারা। কিন্তু করোনার কারণে ভারতে লকডাউন ঘোষণা করায় তাদের তিনজনকে ভেলোরের একটি বেসরকারি গেস্ট হাউসে অবস্থান করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া টাকা-পয়সা ফুরিয়ে আসায় চরম বিপদে পড়েছেন তারা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৪ মার্চ সারাদেশে ২১ দিনের অবরোধ বা লকডাউন ঘোষণা করেন। এর ফলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভারতে আটকা পড়েছেন রাসেল কবির বিপ্লবের মতো অন্তত ছয় শতাধিক বাংলাদেশি। তাদের সেখানে থাকতে নানা অসুবিধা হচ্ছে। অনেকের টাকা-পয়সা ফুরিয়ে আসছে। দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

হোয়াটসঅ্যাপে সমকালের সঙ্গে আলাপকালে সরকারের প্রতি তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করার আকুতি জানিয়ে ডা. রাসেল বলেন, যাওয়ার সময় ভারতীয় ইমিগ্রেশন থেকে তাদের বলা হয়েছিল, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরতে পারবেন তারা। যদিও পরে আর ফিরতে পারেননি। তার মতো অন্তত শতাধিক বাংলাদেশি শুধু ভেলোরেই আটকে পড়েছেন।

যশোরে অবস্থানরত ডা. রাসেলের ছোট ভাই আবদুল্লাহেল বাকী সমকালকে বলেন, তারা দুই ভাই সংসার দেখাশোনা করেন। বাবা, মামা ও ভাই ভারতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে পড়ায় তিনিও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

ভাইয়ের ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসার জন্য গিয়ে ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে আটকা পড়েছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার মূলকান্দি মোল্লাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। সোমবার ইমোতে ফোন করে তিনি জানান, মাঝখানে একবার দেশে এলেও প্রায় চার মাস ধরেই তিনি ভাইকে নিয়ে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে রয়েছেন। লকডাউনের কারণে তিনিসহ সেখানে আটকেপড়া সব বাংলাদেশিই দুর্গতিতে পড়েছেন।

চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়ে আটকেপড়া শতাধিক বাংলাদেশির একটি তালিকা সমকালের কাছে এসেছে। বেশিরভাগ বাংলাদেশিই সেখানে হোটেল দ্য রয়েল হোমস, নিউ সাফা গেস্ট হাউস, আর আর অ্যাপার্টমেন্ট, কে কে রেসিডেন্সি, বিএমএস লাক্সারি হোটেল, আরমান টাওয়ার, দেওল ইন গেস্ট হাউস-১, সি গৌরী গেস্ট হাউস-১, ভাসানকুঞ্জি কৃষ্ণা মোহনলাল অ্যাপার্টমেন্ট, নারায়ণ গেস্ট হাউস, জে জে লজ ও হর্ষ লাক্সারি হোমসে অবস্থান করছেন। তাদের বেশিরভাগই স্বজনদের নিয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। তারা তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

এসব গেস্ট হাউস ও হোটেলে থাকা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তাদের মধ্যে রয়েছেন মেহরাব হোসেন, ধীমান কুমার বণিক, ফয়সাল আহমেদ, এইচএম শাহাদাত, মো. নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ, গাউস আলী, হোসাইন মোহাম্মদ, সুবীর কান্তি নাথ, আতিকুর রহমান, আলী কদর, উজ্জ্বল কান্তি রায়, জনি কুমার ঘোষ, মো. দিদার প্রমুখ। তাদের সবার বক্তব্যই মোটামুটি এক। মূল সমস্যা, টাকা-পয়সা ফুরিয়ে গেছে; কিন্তু দেশ থেকে অর্থসহায়তা নিতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য, দেশে ফিরে তারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে রাজি আছেন। তবু তাদের ফেরত আনা হোক।

শুধু চেন্নাই নয়, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতাসহ ভারতের আরও বেশ কিছু স্থানে আটকে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে যাওয়া জাফর আহমেদের পরিবার আটকা পড়েছেন ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি হোটেলে। পরিবার-পরিজন মিলে তারা ১০ জন একসঙ্গে রয়েছেন, যাদের চারজনই হার্টের রোগী। তাদের সঙ্গে সাত বছরের এক শিশুও আছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেও এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন আটকেপড়া এ বাংলাদেশিদের অনেকে। তবে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন বলছে, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ০০৯১৮৫৯৫৫৫২৪৯৪ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত রোববার তার ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লিখেছেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের তালিকা করছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। দেশে ফিরতে আগ্রহী যেসব বাংলাদেশি এখনও হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, তিনি তাদের যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দূতাবাস ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে। যারা এখনও যোগাযোগ করেননি- আপনারা একসঙ্গে কতজন, কোথায় আছেন, নাম, বয়স, পাসপোর্ট নম্বর, যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে জানান। দিল্লিতে দূতাবাসের টেলিফোন নম্বর ৮৫৯৫৫-৫২৪৯৪ (অথবা মুম্বাই কনস্যুলেট ৯৮৩৩১-৫৯৯৩০)।'

শাহরিয়ার আলম লিখেছেন, 'পূর্ণ তালিকা পেলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। চেষ্টা করা হবে, দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবার চাহিদার বিষয়গুলো দেখভাল করে। আর যারা ফিরে আসতে চান, তাদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে এবং যারা চিকিৎসাধীন, তাদের কুর্মিটোলা বা অন্য হাসপাতালে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার সম্মতি দিতে হবে।'

https://samakal.com/bangladesh/article/200317176