৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৫৯

ব্যবসা-বাণিজ্যে হাহাকার

চট্টগ্রামে করোনার ধকল বাড়ছেই

চীনে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠাচ্ছে তারা। বর্তমানেও চীনা কাঁচামাল বন্দরে মুজদ আছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আরো বেশ কয়েকটি জাহাজে কন্টেইনারভর্তি শিল্প কাঁচামাল পৌঁছার সিডিউল রয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণে আমদানি কাঁচামাল এখন বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

কেননা চীনা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রফতানির প্রচুর অর্ডার চালান আগেই প্রস্তুত হয়ে মজুদ পড়ে আছে। তাছাড়া উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও অনেক অর্ডার। যার প্রধান রফতানি গন্তব্য আমেরিকা এবং ইউরোপীয় বাজার। সেসব অঞ্চলই করোনাভাইরাস মহামারীতে ভয়াবহ সংক্রমিত। রফতানি অর্ডার বাতিল হচ্ছে একের পর এক। যার ৯০ শতাংশই ইউরোপ আমেরিকার মূল বাজার। সেখানে আগামী এক থেকে দেড় মাসে পরিস্থিতির উন্নতি যদি না হয় তাহলে তৈরিপোশাক, নিটওয়্যার, টেক্সটাইলসহ অনেক ধরনের শিল্প-কারখানায় উৎপাদন টানা বন্ধ রাখা ছাড়া বিকল্প নেই।

শুধু তাই নয়। ইতোমধ্যে উৎপাদিত রফতানি চালানগুলোও সিজন ফেইল করার সম্মুখীন। তাহলে রফতানি জাহাজীকরণ এভাবেই বন্ধ থাকবে। কারখানাগুলোতে স্টক লটের পাহাড় উঁচু হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে একের পর এক আমদানিকৃত শিল্প কাঁচামালের জট শুধুই বাড়তে থাকবে। বেসরকারি আইসিডিগুলোও (অফডক) পড়ছে জটে। কী ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের রফতানি বাণিজ্য তা এ মুহূর্তে কল্পনা করাও কঠিন। যা সরাসরি আর্থিক ক্ষতির অঙ্কে দাঁড়াবে হাজার হাজার কোটি টাকা।

গতকাল দেশের রফতানি পরিস্থিতি এবং চীনের শিল্প কাঁচামাল আমদানিতে উল্টো ‘বিপত্তি’ সম্পর্কে ইনকিলাবকে ওই চিত্র তুলে ধরেন বিজিএমইএ’র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও শিপিং সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এবং সংগঠনটির সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি চিটাগাং চেম্বার নেতা নাসির উদ্দিন চৌধুরী এবং বন্দর-শিল্প-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে সংশ্লিষ্ট আরও ৫ জন প্রতিনিধি।

তারা আরও জানান, বন্দর সচল। তবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, বন্দরনগরী চট্টগ্রামব্যাপী করোনার ধকল দিন দিন বাড়ছেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। চারদিকে ধস আর হাহাকার। তাও অনির্দিষ্টকাল। সওদাগরী পাড়া খাতুনগঞ্জ, ব্যবসা-বাণিজ্যের নাভি আগ্রাবাদ জনশূণ্য। ১৯৭৬ সালে জন্মস্থান কালুরঘাট থেকে শুরু হওয়া দেশের গার্মেন্ট খাতের বিপর্যয়ের ধাক্কা চট্টগ্রামে পড়েছে আরও ভয়াবহ আকারে। সাড়ে ৩ শ’ কারখানা বন্ধ। কাজ নেই। রফতানির বাজার আটকে থাকা পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ও মালিক-শ্রমিকদের বসে থাকা ছাড়া কী উপায়? মালিকরা স্টকলটের হিসাব শুরু করেছেন। লোকসান বাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়।

গতকাল চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ইনকিলাবকে জানান, শিল্প-কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি থেকে শুরু করে স্থানীয় শিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে করোনা মহামারীর প্রভাব কিভাবে, কতদূর মাত্রায় পড়ছে- সকল খাতওয়ারি তার একটি পর্যালোচনা ও হিসাব-নিকাশ (এসেসমেন্ট) গত রোববার থেকে শুরু করেছি। গার্মেন্ট, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী, সবধরনের প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্য, সেবাখাতের পণ্য, শাক-সবজি ইত্যাদি সবকিছুই রফতানির পথ এবং বাজার এ মুহূর্তে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিটি খাত, উপখাতই ক্ষতিগ্রস্ত। তা বিস্তৃত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আপদকালীন জরুরি বিবেচনায় চেম্বার শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ ইউটিলিটি সার্ভিসগুলোর বিল আদায় আগামী জুন মাস পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া ও সময় বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত সবধরনের মালামালের অতিদ্রুত কোয়ারেন্টাইন টেস্ট, রেডিয়েশন পরীক্ষণসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শিথিল এবং পোর্ট ডিউজ জুন পর্যন্ত আপাতত মওকুফের দাবি দিয়েছি। কাস্টম হাউসকেও গতিশীল করা প্রয়োজন।

কেননা দেশের লকডাউন পরিস্থিতিতে সড়ক মহাসড়ক বন্ধ থাকায় ট্রাক-লরি, ট্রেইলার, কাভার্ড ভ্যানের অভাবে বন্দরমুখী রফতানি পণ্য পৌঁছানো এবং আমদানি মালামাল ডেলিভারি পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আটকে গেছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/279522