৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৩৭

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতায় ২২ হাজার কোটি টাকার বাজেট কাটছাঁট

সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতার কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট ২২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। ফলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা থেকে কমে পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। শতকরা হিসাবে বাজেটের আকার কমেছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে সংশোধনের পরও বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই রাখা হয়েছে। অবশ্য বছর শেষে বাজেট এই সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে রাজস্ব আয় কমানো হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট রয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এটি কমিয়ে এখন তিন লাখ ৬০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এনবিআর বহির্র্ভূত রাজস্ব আয়ের (এনটিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজটি চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বছরের শুরুতে বলেছিল, চলতি বছর রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে সংস্থাটি গত সপ্তাহে শঙ্কা ব্যক্ত করেছে এই ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে। কারণ করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে আগামীতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরো কমে যাবে।

সংশোধিত বাজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় অনেকটা শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। ফলে এবারকার বাজেট আরো বেশি কাটছাঁট করার প্রয়োজন পড়ত এবং সেটি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল না। কিন্তু আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে নন-এনবিআর খাত। কারণ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ প্রথমবারের মতো এবারই এখাতে এসে যোগ হবে। যার পরিমাণ আমরা প্রাক্কলন করেছি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই পরিমাণ অর্থ পাবো বলে আশা করছি। এই প্রাপ্তি কিছুটা হলেও বাজেট ঘাটতি সহনীয়পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করবে।

এদিকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার ৬৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আদায় সম্ভব হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি ৩৭ হাজার ৪৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৪ শতাংশ, যা কখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

এর আগে গত ১৯ মার্চ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করা হয়। মূল দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি থেকে বৈদেশিক সহায়তা অংশের এই টাকা (৯৮০০ কোটি টাকা) বাদ দিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়ায় এক লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। আর স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার তহবিল থেকে বরাদ্দ ধরা হয়েছে আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।

বিভিন্ন বছরের বাজেট ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছিল প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে যা ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেট কাটছাঁটের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আর ১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/492360