৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১২:৫৭

নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রতি সাড়ে ৯ মিনিটে একজনের মৃত্যু

নিউ ইয়র্ক সিটির হাসপাতালগুলোতে দ্রুত বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার। শুধু ২৭ মার্চ রাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। প্রতি সাড়ে ৯ মিনিটে একজনের মৃত্যু ঘটছে। এক দিন আগে এই হার ছিল প্রতি ১৭ মিনিট। ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে নগরীতে। সর্বশেষ নিউ ইয়র্ক সিটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৩ জনে। মহামারী করোনাভাইরাসে এখন সিটির ৩০ হাজার মানুষ আক্রান্ত। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঠাসা করোনা রোগীতে। অনেক পরিবারে একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত। মৃতদের তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী। প্রতিদিন বাড়ছে এ সংখ্যা। বাংলাদেশী কমিউনিটির সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ অনেকেই ভুগছেন করোনায়। হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশির ভাগ রোগী।

সর্বশেষ পরিসংখ্যানে সাড়ে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে বিশ্বে করোনা রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজারের বেশি। করোনার উৎসস্থল চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার। আর ১০ হাজার মানুষের প্রাণ হারানোর দেশ ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে এ পর্যন্ত ৯২ হাজার। এই দুই দেশের চেয়েও এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ১ লাখ ২৩ হাজার করোনা আক্রান্ত মানুষ নিয়ে দেশটি অবস্থান করছে পৃথিবীর শীর্ষ স্থানে।

যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২২২৯ জন। মহামারী সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে নিউ ইয়র্ক রাজ্যে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ৩৩৫ জন। আক্রান্তের এ সংখ্যা গোটা দেশের ৪৬ শতাংশ, যাদের সবার কেভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ। এই মুহূর্তে বড় সমস্যা হচ্ছে করোনাভাইরাস টেস্ট ও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি রয়েছে এমন রোগীকে শুধু ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। ফলে অনেক রোগী চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে ফিরছেন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় করোনাভাইরাস টেস্ট হয়ে উঠছে কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর স্বল্পতার কারণে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।

প্রায় দুই কোটি নিউ ইয়র্কবাসীর জন্য ছোট-বড়, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতাল রয়েছে ১৮০টির মতো। হাসপাতালে বেড আছে ৫৩ হাজার। আইসিইউ আছে ৩ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নগরী নিউ ইয়র্ক। ৯০ লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। সরকারি ১১টি এবং বেসরকারি ৫১টিসহ ৬২টি হাসপাতাল আছে নিউ ইয়র্ক সিটিতে। প্রতি ১ লাখ মানুষের সেবায় ৩৪৫ জন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন নগরীতে।

১৭৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বেলভিউ সবচেয়ে পুরনো হাসপাতাল। নিউ ইয়র্ক রাজ্য এবং নগরীর জনসংখ্যা অনুপাতে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সব পরিকল্পনা ও হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে ভয়াবহ মহামারী করোনা। তছনছ করে দিয়েছে গোটা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা। গত ২৪ মার্চ একদিনে সিটির এলমহারষট হাসপাতালে ১৩ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। তারপরও থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল।

এ দিকে হাসপাতাল বেড ও আইসিইউ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন গভর্নর এন্ড্রো কুম্যো। করোনার গতি এভাবে অব্যাহত থাকলে আগামী তিন সপ্তাহে জরুরি ভিত্তিতে ৩০ হাজার ভেন্টিলেটরসহ ১ লাখ ৪০ হাজার হাসপাতাল বেড প্রয়োজন হবে বলে মনে করছে আলবেনি প্রশাসন। এজন্য গভর্নর সহায়তা চেয়েছেন ফেডারেল সরকারের নিকট। ইতোমধ্যে প্রায় ৮ হাজার ভেন্টিলেটর সংগৃহীত হয়েছে। সেনাবাহিনী ম্যানহাটানের জ্যাকব জেভিট সেন্টারে ১ হাজার বেডের আপৎকালীন একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে। সোমবার ১ হাজার বেড সম্পন্ন নেভি শিপ কমফোর্ট নিউ ইয়র্ক হারবারে পৌঁছবে। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির চার বরোতে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করতে। চিকিৎসাসেবা থেকে অবসর নেয়া বিভিন্ন পর্যায়ের ৬২ হাজার মানুষ গভর্নর অফিসে নাম লিখিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করে। চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকস, টেকনিশিয়ানসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সবাই জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে লিপ্ত করোনার বিরুদ্ধে। সময়মতো ভেন্টিলেটরের অভাবে মানুষের জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়ে কাঁদছেন অনেকে। ইমার্জেন্সি রুমে অপেক্ষায় থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন কেউ কেউ। হাসপাতালের মর্গ ভরে গেছে লাশে লাশে। বাইরে অপেক্ষায় ভ্রাম্যমাণ লাশবাহী গাড়ি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/492112