৩০ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১২:৪৭

করোনার ভয়ংকর থাবা সর্বগ্রাসী রূপ নিচ্ছে

* ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল
* মারা গেলেন স্পেনের রাজকুমারী
* যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আক্রান্ত ১৫ হাজার
* ইউরোপের প্রায় সব দেশ লকডাউন
স্টাফ রিপোর্টার: চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁিড়য়েছে ৩২ হাজার ১৩৯ জন। এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার৫৩৬ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৬ জন। ইতালিতেই ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। স্পেনে সেই সংখ্যাটা ৫ হাজারের বেশি। আর আক্রান্তের দিক দিয়ে সবার ওপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের বাইরে ২শ’ টি দেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। চীন থেকে ছড়ালেও এখন করোনা ভাইরাস মহামারী কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপ। মহাদেশটির ইতালি মৃত্যু সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করে ভাইরাসটি কতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।

বিশ্বে ইতালিতেই এখন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এখন মোট মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে মেডিকেল টিমের সদস্য রয়েছেন ৫১ জন। গতকাল একদিনেই মারা গেছেন ৮৮৯ জন। এছাড়া একদিনে নতুন আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৯৭৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯২ হাজার ৪৭২ জন। মৃতের সংখ্যায় ইতোমধ্যে চীনকে ছাড়িয়ে ইতালির পরেই স্থান নিয়েছে স্পেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৮৩২ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৯০ জনে। ফ্রান্সের অবস্থাও বেশ নাজুক। মৃত্যু ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন।

এছাড়া আক্রান্তের দিক থেকে মহামারীর নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই আসছে নতুন আক্রান্তের খবর। আক্রান্তের দিক থেকে ইতোমধ্যে সবার উপরে অবস্থান করছে দেশটি। গত দিনে করোনাভাইরাসে নতুন যতজন আক্রান্ত হয়েছেন তার এক তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে নতুন ১৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২২ হাজার আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ২ হাজার ৪৭ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

করোনার কারণে ইউরোপের প্রায় সব দেশ লকডাউন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘরবন্দী। এরকম লকডাউন চলছে এশিয়া ও আফ্রিকাসহ অন্যানা মহাদেশেও। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসও। প্রাণসংহারী করোনার কারণে নাজুক অবস্থা এশিয়াতেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে। ইরানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯সহ সেখানে মৃত্যু হয়েছে আড়াই সহস্রাধিক মানুষের। প্রতিদিন আরও হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির অনেক আইনপ্রণেতা করোনায় আক্রান্ত। এরমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও রয়েছেন। প্রতিবেশী ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ২৪ জন মারা গেছেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ২১ দিন দেশ লকডাউন করে রেখেছে মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। পাকিস্তানে আক্রান্তের প্রায় ১৫শ পেড়িয়েছে। মারা গেছেন ১২ জন। করোনা ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশেও। ইতোমধ্যে
বাংলাদেশে ৪৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার বন্দীর কারামুক্তি : যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে করোনা ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের মুখে কয়েক হাজার কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন শীর্ষে। সেখানে এক লাখেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেখানকার কারাগারগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ২০টি কারাগার যেসব শহর ও কাউন্টিতে অবস্থিত সম্প্রতি সেগুলোর ওপর জরিপ চালিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে দেখা গেছে, গত ২২ মার্চ থেকে ২২৬ কয়েদি ও ১৩১ জন স্টাফ নিশ্চিতভাবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি বিচারপতি, পাবলিক ডিফেন্ডার, প্রসিকিউটর ও কখনও কখনও রাজনৈতিক আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউ জার্সির প্রধান বিচারপতি কারাগারে মৃত্যু ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে এক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে গত সপ্তাহ থেকে প্রায় ৪৫০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির কর্তৃপক্ষ। এই বন্দিরা ২৮ হাজার ৩০০ মানুষকে হত্যা করেছিল। এর মধ্যে দুই হাজার ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই হত্যা করা হয়েছিল। গত শুক্রবার নিউ ইয়র্কের কর্তৃপক্ষ রাজ্যের কারাগারগুলো থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তির জন্য ছোটখাট প্যারোল লঙ্ঘনকারী এক হাজার ১০০ জনকে শনাক্ত করেছে। নিউ ইয়র্কের মেয়রের একজন মুখপাত্র কলবি হ্যামিলটন জানিয়েছেন, শিগগিরই আরও কয়েকশ’ কয়েদিকে মুক্তি দেওয়া হবে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি কমপক্ষে এক হাজার ৭০০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে যাদের ৩০ দিনেরও কম সাজা বাকী রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা ক্লারা কাউন্টি কর্তৃপক্ষ সাজা প্রদানে বিলম্ব ও অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে ৪০০ জনকে মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত এর মধ্য দিয়ে বন্দির সংখ্যা কমাতে চাইছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। টেক্সাসের হ্যারিস কাউন্টিতেও বন্দি সংখ্যা অন্তত ৫০০ কমানো হয়েছে। কিছু কাউন্টিতে ছোটখাট অপরাধের জন্য পুলিশ
লোকজনকে গ্রেফতারের বদলে তাদের তলব করছে। তবে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বাইরে থেকে আগত অফিসারদের নিয়মিত বদলানোর ফলে কারাগারগুলোতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল : ইতালিতে প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৮৮৯ জন। এর আগে দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক ৯৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা শনিবার জানায়, দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৩ জনে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, এই সময় পর্যন্ত ইতালিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৯২ হাজার ৪৭২ জন। এর মধ্যে মাত্র ১২ হাজার ৩৮৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এদিকে শনিবার ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনে প্রাণহানি ঘটেছে ৮৩২ জনের। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৯০ জনে। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।

অন্যদিকে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে সবার ওপরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার রাত পর্যন্ত দেশটিতে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৬৮ জন মানুষের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন এক হাজার ৭০৯জন।

সুইজারল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫৭ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন সুইজারল্যান্ডে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৭ জন। রোববার দেশটির জনস্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। সুইজারল্যান্ডে একদিনে নতুন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ২১৩ জন। রোববার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৩৬ জন। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে শনিবার সবচেয়ে ভয়াবহ দিন পার করেছে স্পেন। এদিন দেশটিতে ৮৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা তাদের জন্য এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

স্পেনে একদিনে রেকর্ড ৮৩৮ মৃত্যু : করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর শনিবার সবচেয়ে ভয়াবহ দিন পার করেছে স্পেন। এদিন দেশটিতে ৮৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা তাদের জন্য এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। সেখানে এখন পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৫৩৮ জন মারা গেছেন। করোনায় মৃত্যুসংখ্যায় বর্তমানে স্পেনের ওপর একমাত্র ইতালি। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকেও খুব বেশি পিছিয়ে নেই তারা। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৭৯৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সেখানে একদিনের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ছয় হাজারেরও বেশি।

স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ অনাবশ্যক কর্মীদের আগামী দুই সপ্তাহ বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা যথারীতি বেতন পেয়ে যাবেন, তবে পরবর্তী কোনও সময়ে কাজ করে এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্পেন সরকার। দেশটির রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেই বললেই চলে। কেউ বাইরে বের হলেই কারণ জানতে চাচ্ছে পুলিশ। অপ্রয়োজনে বের হলে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। গত ১৪ মার্চ থেকে দেশটির সব স্কুল, বার, রেস্টুরেন্ট, অনাবশ্যক পণ্য বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। মহামারির কারণে সপ্তাহ তিনেক ধরে প্রায় অবরুদ্ধ রয়েছে গোটা স্পেন।

মারা গেলেন স্পেনের রাজকুমারী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার মারা গেছেন স্পেনের রাজকুমারী মারিয়া টেরেসার। এতে রাজপরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে এই প্রথম কোনও রাজপরিবারের সদস্যের প্রাণ গেলো। ফেসবুকে মারিয়া টেরেসোর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন তার ভাই প্রিন্স সিক্সতো এনরিকে ডি বারবন, ডিউক অব আরানজুয়েজ। তিনি জানান, মারিয়া টেরেসার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর শুক্রবার প্যারিসে তার মৃত্যু হয়েছে। ওইদিনই মাদ্রিদে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। প্রিন্স হাভিয়ার ও ম্যাডেলিন ডি বারবনের ছয় সন্তানের অন্যতম মারিয়া টেরেসা ১৯৩৩ সালের ২৮ জুলাই প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দু’দিনে দ্বিগুণ মৃত্যু : গত এক সপ্তাহে যুত্তরাষ্ট্রে রীতিমতো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইতোমধ্যেই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বের যে কোনও দেশের চেয়ে বেশি, দ্রুত বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনাও। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানেই দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবারও যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা এক হাজারের মতো ছিল। কিন্তু শনিবার এসে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজারেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। শনিবার সেখানে অন্তত ২২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্যটিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭২ জন, আক্রান্ত ৫৩ হাজারেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারিতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্কুল অব মেডিসিনের এক ডেটা অ্যানালিস্ট। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগামী জুন মাস পর্যন্ত করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ চলতে পারে। এতে মারা যেতে পারেন অন্তত ৮১ হাজার মানুষ।

মৃত্যুর মিছিল ফ্রান্সেও, একদিনে ৩১৯ প্রাণহানি : ইতালি আর স্পেন নয়, মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে ইউরোপের আরেক ‘উন্নত’ দেশ ফ্রান্সেও। গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে আরও ৩১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ২ হাজার ৩১৪ জনে। খবর আলজাজিরা। শনিবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নতুন করে ৩১৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে; যা গতদিনের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। করোনায় বিপর‌্যস্ত দেশটি আক্রান্তদের সেবা দিতে দেশজুড়ে নিবিড় পরিচর‌্যা কেন্দের (আইসিইউ) বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

তবে এটা প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যারা মারা যাচ্ছেন, তাদেরকেই এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী সপ্তাহ থেকে তারা এই তথ্য তালিকায় বাড়ি কিংবা বিভিন্ন আবাসন কেন্দ্রে মৃত্যুর সংখ্যাও নথিভূক্ত করবে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ফ্রান্সে নতুন করে ৪ হাজার ৬১১ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৪ থাকলেও আজ তা বেড়ে হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৭৫। করোনা মোকাবিলায় সরকারের কৌশল সংক্রান্ত রুপরেখা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপ্পে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি খোলাসা করে কিছু বিষয় বলতে চাই। এই লড়াইয়ের সবেমাত্র শুরু। এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিন আরও কঠিন হবে। পরের ১৫ দিনে তা কমতে শুরু করবে।’

মদিনায় আরও কয়েকটি শহর লকডাউন : লকডাউন করা হচ্ছে পবিত্র মদিনা নগরীর কয়েকটি শহর। নগরীর আস শুরাইবাত, বনী যুফার, কুরবান, আল জুময়া, আল ইসকান, বানী খুদরা এলাকাসমূহ এই লকডাউনের আওতাভুক্ত থাকবে। সৌদির সরকারি এক ঘোষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় ২৮ মার্চ ভোর ছয়টা থেকে ২৪ ঘণ্টা এই কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে। এই সময় উল্লিখিত এলাকাগুলোতে ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে জরুরি চিকিৎসাসেবা ও মুদিপণ্য কেনাকাটার জন্য খুব নিয়ন্ত্রিতভাবে ওই সময়ের মধ্যে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। এ ছাড়া পেশার খাতিরেও যারা পূর্বে কারফিউ বা লকডাউনের আওতামুক্ত ছিল তারাও নিয়ন্ত্রণাধীনভাবে এলাকাসমূহে চলাচল করতে পারবেন।

এদিকে সৌদি আরবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। গত ২৫ মার্চ দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. মুহাম্মদ আল আবেদ আলী জানান, নতুন করে ১৩৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে; যার বেশিরভাগই রাজধানী রিয়াদে। রিয়াদে ৮৩ জনকে শনাক্ত করা হয়। এছাড়া দাম্মামে ১৩ জেদ্দায় ১০ এবং কাতিফ ও মদিনাতে ৬ জন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। নাজরানে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ জন। দুজন করে আক্রান্ত হয়েছেন আভা ও আরারে। এছাড়া দাহারান ও জুহাইলে একজন করে করোনা রোগী শানাক্ত করা হয়।

এদিকে করোনা বিস্তারে সমগ্র সৌদি আরবজুড়ে কারফিউয়ের হুকুম জারি করেছেন বাদশাহ সালমান। কারফিউয়ের সময়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তবে তা শুধু রাজধানী রিয়াদ এবং পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এগুলো বাদে অন্যান্য অঞ্চলে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময় কারফিউ জারি থাকবে। গত ২৩শে মার্চ থেকে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেন বাদশাহ সালমান। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ওষুধের দোকান, সুপারমার্কেট অর্থাৎ বাকালা এবং খাবারের দোকান ছাড়া অন্যান্য সব দোকান ও অফিস-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ২৫শে মার্চ এক ঘোষণায় রিয়াদ, মক্কা ও মদিনা শহরের জন্য কারফিউ এর সময়ে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন সময় অনুযায়ী এই তিন শহরে দুপুর ৩টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিশেষ এই কারফিউ জারি থাকবে। কারফিউ চলাকালীন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

http://dailysangram.info/post/411722