২৮ মার্চ ২০২০, শনিবার, ১২:৫০

কর্র্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি

পিএইচডিতে জনপ্রতি খরচ ২ কোটি টাকা

জনবল কমলেও ব্যয় বাড়ছে ৬৯ কোটি টাকা; রাষ্ট্রীয় অর্থে ১৩০০ জনবলকে ডিগ্রি প্রদান; মাস্টার্স করতে খরচ জনপ্রতি ৫১.৫২ লাখ টাকা

বিসিএস ক্যাডারভুক্ত জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুগ্মসচিব ও উপসচিব মর্যাদার এক হাজার ৩০০ জন কর্মকর্তা বিদেশ থেকে এইসব ডিগ্রি এবং প্রশিক্ষণ নেবেন। কিন্তু তাদের এসব ডিগ্রি অর্জনে মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি বলে পরিকল্পনা কমিশন থেকে আপত্তি তোলা হয়েছে। সক্ষমতা অর্জনের চলমান এই প্রকল্পে সংশোধনী এসে মাথাপিছু ব্যয় অনেক বেড়েছে। জনপ্রতি পিএইচডি অর্জনে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। জনবল কমলেও ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের কাছে দেয়া প্রস্তাবনা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেয়া সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সকল ক্যাডারের মাষ্টার্স, পিএইচডি এবং স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সরকার বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পটি হাতে নেয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০০ জন কর্মকর্তাকে মাস্টার্স, ৫০০ জন যুগ্মসচিবকে বিদেশে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ, ৫০০ জন উপসচিবকে ২১ দিনের বিদেশে প্রশিক্ষণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট ৩০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ, ১০টি সেমিনার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা। চলমান এই প্রকল্পের জন্য খরচ অনুমোদন দেয়া হয় ২৪০ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটি দুই বছর পার করতেই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেখানে জনবলের সংখ্যা কমানো হয়েছে সেখানে অর্থব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর দুই বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হলো ৩৬ শতাংশ এবং বাস্তব ৩৮ শতাংশ। এখন ব্যয় ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যয় দাঁড়াবে ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩০০ জনের মাস্টার্স করার জন্য ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১০৫ কোটি টাকা। এখন সেখানে জনবল কমিয়ে ২৮৫ জন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৪১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ফলে প্রথমে জনপ্রতি মাস্টার্স করতে ব্যয় ছিল ৩৫ লাখ টাকা। এখন সংশোধনীতে এই খরচ জনপ্রতি ৫১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করা হয়েছে।

৫০০ জন যুগ্মসচিবকে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। ফলে জনপ্রতি প্রশিক্ষণে খরচ সাড়ে সাত লাখ টাকা। কিন্তু এখন একজন কমিয়ে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৯ কোটি পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এতে মাথাপিছু খরচ বেড়ে হলো সাত লাখ ৮২ হাজার টাকা।

অন্য দিকে ৫০০ জন উপসচিবকে ২১ দিনের প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। জনপ্রতি প্রশিক্ষণ খরচ সাড়ে ছয় লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবনায় এখন ছয়জন কমিয়ে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৬ কোটি ৮৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ফলে মাথাপিছু খরচ দ্বিগুণ বেড়ে হলো ১৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

আর ১৪ জন কর্মকর্তা পিএইচডি নেবেন। এতে করে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। এখানে মাথাপিছু ব্যয় হবে পিএইচডি করতে দুই কোটি টাকা। ৬০ জন উপসচিব যুক্তরাষ্ট্রের হারভার্ড কেনেডি স্কুলে প্রশিক্ষণ নেবেন। এতে আট কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এখানে জনপ্রতি ব্যয় হবে ১৪ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ৩০ জন কর্মকর্তাকে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। কিন্তু এখন কর্মকর্তার সংখ্যা ৪০ জন করে ব্যয় বাড়িয়ে দুই কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফলে প্রথমে যেখানে মাথাপিছু খরচ ছিল তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা, সেটা এখন দ্বিগুণ হয়ে ছয় লাখ ৬৮ হাজার টাকায় উন্নীত হলো। একইভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১২ জনের জন্য ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু এখন জনবল না বাড়লেও ব্যয় বাড়িয়ে এক কোটি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।

সিনিয়র সচিব বা সচিবদের রিফ্রেশার্স কোর্স করানোর জন্য ৭৫ জনের জন্য ১০ কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সংশোধনীতে জনবলের সংখ্যা ১২ জন কমিয়ে আট কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখানে প্রথমে জনপ্রতি ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা, নতুন করে এই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অতিরিক্ত সচিব ২৪৪ জনের বিদেশে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে মাথাপিছু ব্যয় বরাদ্দ ১১ লাখ টাকার বেশি। মোট ব্যয় এখানে ২৭ কোটি তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

এই খরচের ব্যাপারে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটি। প্রথমে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিদেশে তাদের ব্যয়ের সাথে আগামীতে যারা যাবেন তাদের ব্যয়ের কিছুটা হলেও পার্থক্য হবে। তবে আমরা যে হিসাব দিয়েছে, তা পিইসিতে পর্যালোচনা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন কেউ-ই বিদেশে যেতে চাচ্ছেন না। ফলে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্থগিত আছে। অন্য দিকে বিদেশে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রশিক্ষণ বন্ধ আছে।

এই প্রকল্পের ব্যাপারে মতামত দিয়ে পরিকল্পনা কমিশন প্যামস্টেক উইংয়ের ড. সেলিনা আক্তার বলেছেন, মাস্টার্স করার ক্ষেত্রে যে ৪০ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এটা যৌক্তিক নয়। ডিপ্লোমা করার ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকা জনপ্রতি অনুমোদিত ছিল। কিন্তু এখানে ইতোমধ্যে জনপ্রতি ব্যয় করা হয়েছে ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা; যা অনুমোদনের চেয়ে বেশি।

আর উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে ২১ দিন প্রশিক্ষণের পর আবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নেয়ার খাতটি কেন? এই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক মাসের প্রশিক্ষণে যেখানে জনপ্রতি সাড়ে ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল, সেটা ২১ দিন করে মাথাপিছু আট লাখ টাকা করার যৌক্তিকতা নেই। এ ছাড়া একজনকে পিএইচডি নিতে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছেÑ এটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/491612