২৮ মার্চ ২০২০, শনিবার, ১২:২৪

করোনার পরীক্ষায় এলো পরিবর্তন

দুই চিকিৎসকসহ আরো চারজন আক্রান্ত; সর্বাধিক মৃত্যুহার বাংলাদেশে; পটুয়াখালীতে সুন্দরবন-১৪ লঞ্চ কোয়ারেন্টিনে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা জানতে নমুনা পরীক্ষায় পরিবর্তন এনেছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গতকাল শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রথম দিকে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন অথবা করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসেন, শুধু তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এখন কেবল তারা নয়, বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে আসাদেরও নমুনা পরীক্ষা করছে আইইডিসিআর। এ ছাড়া ৬০-এর বেশি বয়স এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন এমন কারো যদি করোনার লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নিউমোনিয়া রোগীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, কী কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে সেটা ডায়াগনসিস করা যায়নি এমন রোগীদের নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে যেতে হয় এমন মানুষের উপসর্গ দেখা দিলে, তাদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

দুই চিকিৎসকসহ আরো চারজন আক্রান্ত : নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দুই চিকিৎসকসহ আরো দু’জন গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কোনো মৃত্যু নেই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বয়স ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। চিকিৎসক দু’জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার সাথে জড়িত ছিলেন। আক্রান্ত চারজনের সবাই বেশ সুস্থ আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর।

গত ২৫ মার্চ সর্বশেষ ষাটোর্ধ্ব একজন মৃত্যুবরণ করেছিলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এরপর গত দুই দিন কোনো মৃত্যু নেই। নতুন আক্রান্ত চারজনের মধ্যে দু’জনের কোমরবিডিটি (আগে থেকেই ভুগছেন কিছু অসুখে) রয়েছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমাদের সীমিত পরিসরে কিছু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে (একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রমণ)। আমরা চেষ্টা করছি যারা এভাবে সংক্রমিত হচ্ছেন তারা কিভাবে এবং কাদের থেকে সংক্রমিত হয়েছেন তা খুঁজে বের করতে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংস্পর্শে যারা যারা এসেছেন বলে মনে হয় তাদের মধ্যে লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে পরীক্ষার আওতায় আনছি।

চিকিৎসকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কেউ কমিউনিটি থেকে সংক্রমিত হয়েছেন। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত এমন চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের সবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছি।

যে চারজন নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের একজন ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, একজন ৩১ থেকে ৪০ বছর, একজন ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং অপর একজন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী।

যারা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে গেছেন তাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা জরুরি বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তাদের অবশ্যই সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে সবার স্বার্থে। তাদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনে রাখা জরুরি। তাদের মধ্যে যাদের উপসর্গ রয়েছে তারা সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

আগের দিনের মতো অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ইতোমধ্যে আইইডিসিআর ছাড়া ঢাকার শিশু হাসপাতাল, মহাখালীর আইপিএইচ এবং চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশন ডিজিজ ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে এখন আরো বেশি করে পরীক্ষার ব্যবস্থা হলো। আইইডিসিআরে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে দাফন-কাফনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আইইডিসিআর তত্ত্বাবধানে মৃতদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হয়। মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে না যায় সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। যে গোসল করান তাকে একটি পিপিই পরিয়ে দেয়া হয় যেন তিনি সংক্রমিত না হতে পারেন। পরে ধর্মীয় রীতি মেনেই শেষ কাজটি করে থাকি। এর আগে আমরা মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করি তার মধ্যে ভাইরাসটি রয়েছে কি না।

ভাইরাস পরীক্ষার কিট সম্পর্কে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ১০ হাজার কিট আমাদের হাতে এসেছে। বৃহস্পতিবার চীন আমাদের এক হাজার আটটি কিট দিয়েছে। চীন একই সাথে আমাদের কিছু পিপিইসহ (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট) কিছু ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়েছে। এ থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা যাবে আরো সূক্ষ্মভাবে।

হটলাইনে ব্যাপারে তিনি বলেন, হটলাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়েও হটলাইন রয়েছে। আপনারা সেখানে আপনারা কথা বলুন।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা হাসপাতাল থেকেই সংগ্রহ করা হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নমুনাগুলো সংগ্রহ করে আমাদের পৌঁছে দেবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইইডিসিআর আগে থেকেই যেভাবে নমুনা সংগ্রহ করত তা অব্যাহত থাকবে। আমরা যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব এবং এদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে এবং যাদের নিউমোনিয়া থাকলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আইইডিসিআরে দু’টি হান্টিং নম্বর রয়েছে। এ নম্বরগুলোতে ফোন দেয়ার জন্য অধ্যাপক ফ্লোরা আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ এ দু’টি নম্বরে ফোন দিলে অন্য যে নম্বরগুলো খালি থাকবে সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। ফলে ফোনদাতা খুব সহজেই কথা বলতে পারবেন আইইডিসিআরের সাথে। নম্বর দু’টি হলো ০১৯৪৪৩৩৩২২ এবং ১০৬৫৫।
সর্বাধিক মৃত্যুহার বাংলাদেশে

করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান করা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য ওয়ার্ল্ড ওমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃতের হার বিশ্বে সর্বাধিক। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ জন আর মৃতের সংখ্যা পাঁচজন। মৃতের এই হার ১০.৪১৭ শতাংশ; যা বিশ্বে সর্বাধিক। গত বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। সেখানে মৃত্যু হার ১০.১৯ শতাংশ। সর্বাধিক আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুহার ১.৫১৬, প্রথম আক্রান্ত চীনে মৃত্যুহার ৪.০৪ শতাংশ। এ ছাড়া ইরানে ৫.৫৯৭, স্পেনে ৭.৫৫, জার্মানিতে ০.৬০৮, ফ্রান্সে ৫.৮১৭, যুক্তরাজ্যে ৪.৯৫৮, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২.৭৫ আর পাকিস্তানে ০.৭৫ শতাংশ।

বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে অনেকে অবশ্য আশার বাণীও শোনাচ্ছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা হিসাব-নিকাশে ভুল হওয়ার কারণেই এটা হচ্ছে। করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের সঠিক পরীক্ষা নিশ্চিত করে আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলে করোনা রোগে মৃত্যুহার বাংলাদেশে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

৩৬ স্টাফসহ সুন্দরবন-১৪ লঞ্চ মাঝ নদীতে কোয়ারেন্টিনে

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী আসায় সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের সুপারভাইজার, মাস্টার, সুকা ৩৬ জন স্টাফকে আগামী ১৪ দিন লঞ্চেই পটুয়াখালীর মাঝ নদীতে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত রায় ও গোলাম সরওয়ার। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে খানিক দূরে লঞ্চে বসেই এ আদেশ প্রদান করেন তারা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত রায় জানান, জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশে রাতে লঞ্চঘাটে অভিযান পরিচালনা করার সময় ঘাটসংলগ্ন মাঝ নদীতে নোঙর করা অবস্থায় আলোবাতি বন্ধ করা সুন্দরবন-১৪ লঞ্চটি দেখতে পেয়ে ট্রলারে সেখানে যাই। পরে লঞ্চের স্টাফদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লঞ্চটি বিনা অনুমতিতে এবং বিধিবহির্ভূতভাবে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী আসে। পরে ঘাট থেকে কিছু দূরে মাঝ নদীতে নোঙর করে রাখে। তিনি জানান, আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতে ঢাকাফেরত যাত্রী বা লোকদের কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকায় ওই লঞ্চের সব স্টাফকে লঞ্চেই কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে লঞ্চের যাত্রীরা আগেই নেমে যায়।

পটুয়াখালী নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান জানান, লঞ্চটি পটুয়াখালী আসছে এমন খবর পেয়ে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে অভিযানে অংশ নেই।

লঞ্চটি পটুয়াখালী ঘাটের কাছাকাছি এলে প্রশাসনের অভিযানের খবর আঁচ করতে পেরে আচমকা আলোবাতি বন্ধ করে নদীতে নোঙর করে রাখে।

করোনা সন্দেহে ফমেক ছাত্রকে ঢাকায় প্রেরণ

ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে তার পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাকে একটি অ্যাম্বেুলেন্সে ঢাকায় প্রেরণ করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কলেজ অধ্যক্ষ। তবে তার কনোরাভাইরাস পজিটিভ কি না বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: খবিরুল ইসলাম জানান, ২৫তম ব্যাচের ওই ছাত্রকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। তার অবস্থার কথা বিবেচনা করে শুক্রবার রাতেই তাকে ঢাকাস্থ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি জানান, এর আগে হাসপাতালে সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে আসা ১৩ বছরের আরেক শিশুকে বৃহস্পতিবার পাঠানো হয়েছিল। তবে তার করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে।

রামেক হাসপাতালের সেই নার্স করোনায় আক্রান্ত নন
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্স আজিজা সুলতানাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তবে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নিজেই ফোন করে রাজশাহীর গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান। রামেক হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন আজিজা সুলতানা। গত ১৯ মার্চ ঢাকা থেকে বাসে রাজশাহী ফেরেন। এ সময় ওই তার সহযাত্রী ছিলেন একজন ইতালি প্রবাসী। পরদিনই তার সর্দি, কাশি ও জ্বর শুরু হয়। ওই দিনই তিনি রামেক হাসপাতালে যান।

রাজবাড়ীর আরো একজনকে ঢাকায় প্রেরণ

রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তাকে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে তাকে ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসাপাতালে রেফার্ড করা হয়। এ নিয়ে রাজবাড়ী থেকে করোনা সন্দেহে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে ঢাকায় পাঠাল সিভিল সার্জন। এর আগে গত ২১ মার্চ রাজবাড়ীর পাংশা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা দীপক কুণ্ডুকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। অবশ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শরীরে করোনার কোনো উপস্থিতি পাননি চিকিৎসকরা। রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা: নুরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৫৮৭ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫১ জন।

চাঁদপুরে করোনা সন্দেহে একজন হাসপাতালে

চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে করোনা সন্দেহে এক যুবককে আইসলোশনে রাখা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই যুবকের বাড়ি মানিকগঞ্জের দক্ষিণ সহিরপুর গ্রামে। চাঁদপুরে তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। এ দিকে, করোনা আতঙ্কে গোটা চাঁদপুর ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল তেমন একটা নেই। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক চাঁদপুরে ফার্মেসি ও কিছু মুদি দোকান ছাড়া গোটা জেলার সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচলও। চাঁদপুরে বর্তমানে ৩৩১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।

রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি যুবকের করোনা শনাক্ত হয়নি

রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগের করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়া নীলফামারীর সৈয়দপুরের যুবকের শরীরে করোনার উপস্থিতি পায়নি আইইডিসিআর। আজ শনিবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। পরের দিন তার শরীরের নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। এ দিকে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন আরো ১০৪ জন। এ নিয়ে এই বিভাগে মোট হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন এক হাজার ৭৬১ জন।

হবিগঞ্জের ৪ জনের নমুনায়ই করোনার অস্তিত্ব মেলেনি
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের সন্দেহজনক চারজন রোগীর করোনাভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কারো করোনাভাইরাস নেই বলে নিশ্চিত হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ দিকে একজন রোগী এখনো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ৬৪৯ জন রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টিনে। কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে ৪১৩ জনের। সিভিল সার্জন অফিস ও জেলা প্রশাসন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনসহ ৩১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭৭ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনে রাখাদের বেশির ভাগই বিদেশফেরত। এ দিকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো প্রায় রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। করোনা আতঙ্কে সাধারণ অসুস্থতায় লোকজন হাসপাতালে আসা কমিয়ে দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত ১২ জনসহ তাদের পরিবারের ৪৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ মার্চ থেকে জেলায় মোট ৯১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৫ জনের কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যায়নি। বর্তমান জেলায় ৫৫০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ জাহাঙ্গীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ দিকে শৈলকুপা উপজেলার ডাক্তার সুকুমারের বাড়ি লকডাউন এবং তার ড্রাইভার আবদুস সোবাহানকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আবদুস সোবাহান জ্বর, কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে গোপনে বাড়িতে অবস্থান করলে এ ব্যবস্থা নেন শৈলকুপা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পার্থপ্রতিম শীল।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বিদেশফেরত ২৩২ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন যুক্ত হয়েছেন ২৮ জন। ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৯০ জনকে। তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন। গতকাল দুপুরে সিভিল সার্জন ডা: রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন, জেলায় গত ১ ডিসেম্বর থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিদেশফেরতের সংখ্যা ৩২২ জন।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হলো এক হাজার ৪৭১ জন প্রবাসীকে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৮৩৬ জন প্রবাসী। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান জানান, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৬৩৫ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহে সংবাদপত্র হকার ও হোটেল কর্মচারীদের সহায়তা

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহের সূর্যকান্ত হাসপাতালে ৫৫ বয়সের এক নারীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে জ্বর ও পাতলা পায়খানা হওয়ায় শুক্রবার বিকেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ দিকে ময়মনসিংহে গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত আরো ৯৭ জনসহ ৮৩৫ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে শুক্রবার ১৪১ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। এখনো একজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪৪১ জন হোম কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

কোম্পানিগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে বসুরহাট পৌর ভবনে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন থেকে আরো ছয় প্রবাসীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পৌরসভার কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৫ জনের মধ্যে ১৬ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। প্রবাস থেকে ফেরতের ১৪ দিন পূর্ণ হওয়ায় এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরনের অসুস্থার লক্ষণ না থাকায় ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১৯ জন। গতকাল পৌরসভার কোয়ারেন্টিন কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য জানা যায়।

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত আরো ১৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলায় মোট দুই হাজার ৫২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ দিকে সাতক্ষীরায় গতকাল দিনভর সেনা, পুলিশ ও আনসার বাহিনী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ে পরিদর্শন যায়। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, সেনা, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ২০টি টিম জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

বাসস জানায়, নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে তিন উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজনকে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই সাতজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ সময়ে ১৪ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৭১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এ জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৫২৯ জন। এ জেলায় এ পর্যন্ত সর্বমোট হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে এক হাজার ৩২৭ জনকে। তাদের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৯৮ জন।

পঞ্চগড়ে আইসোলেশনে থাকা যুবক করোনায় আক্রান্ত নন

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সন্দেহে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা যুবকের শরীরে করোনাভাইরাস নেই বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই যুবকের করোনা সংক্রান্ত নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ গতকাল ওই যুবক করোনায় আক্রান্ত নন বলে নিশ্চিত করেছে। এরপরই ওই যুবককে আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

পাবনায় যুবককে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে

পাবনা ও বেড়া সংবাদদাতা জানান, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এক যুবককে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। গতকাল জুমার নামাজের আগে তাকে আইসোলেশনে নেয়া হয়। একই সাথে তার পরিবারের অন্য ১৬ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। তাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চালসহ অন্যান্য শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। ওই যুবক ট্রেনের বগিতে বগিতে হকারি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন। বেড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, ওই যুবকের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিলন মাহমুদ বলেন, ওই যুবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার শরীরের নমুনা ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। পরীক্ষার আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দুবাইফেরত এক প্রবাসীকে করোনা সংক্রমণ সন্দেহে পরীক্ষার জন্য ফৌজদারহাট জেনারেল হাসপাতালে (আইটিআইডি) পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা শেষে তাকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তার পরিবারের চার সদস্যকেও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শাহিন হাসান চৌধুরী বলেন, ওই প্রবাসীর শরীরে করোনার সংক্রমণ আছে মর্মে সন্দেহ হলে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে গতকাল শুক্রবার পরীক্ষা শেষে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়। এ দিকে গত ১০ মার্চ থেকে চন্দনাইশে মোট ২৮৫ জন বিদেশ থেকে চন্দনাইশে আসেন। তাদের মধ্যে ৮৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এ ছাড়া ১০৫ জনের হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/491593/