২৭ মার্চ ২০২০, শুক্রবার, ৪:১৩

করোনা ভাইরাসের প্রভাব স্থবির ১১ স্থলবন্দর

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত জুড়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সব ধরনের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ভারতের সাথে বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলসহ ১১টি স্থলবন্দর দিয়ে পুরোদমে আমদানি রফতানি হয়ে থাকে। তবে বন্দরগুলো বর্তমানে জনশূন্য ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে দু দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্য।

মালামাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের অধিকাংশ শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ গুলো বন্ধ হয়ে গেছে কাঁচামালের অভাবে। স্থলবন্দর গুলো হচ্ছে, বেনাপোল, হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদ, আখাউড়া, বাংলাবান্ধা, বিবিরবাজার, টেকনাফ, হালুয়াঘাট, বুড়িমারী ও তামাবিল স্থলবন্দর। এসব বন্দর দিয়ে শুধু মাত্র ভারত থেকে ৬ কোটি ৬৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে।

বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মামুন কবীর তরফদার জানান, লকডাউনের কারণে এসব বন্দর গুলোর দু’পারেই বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে। আটকে থাকা পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ’র কাচামালসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মালামাল। তবে বন্দর থেকে কেউ এই মুহুর্তে পণ্য ডেলিভারী নিতে চাইলে আমরা খালাশ দিতে প্রস্তত রয়েছি। তবে ১১টি স্থলবন্দর থেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০ কোটি টাকার আয় করে থাকে বছরে। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর থেকেই আয় হয় ১০০ কোটি টাকা।

শুধু মাত্র বেনাপোল বন্দরের ওপারেই ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে আছে বলে জানান পেট্রাপোল বন্দর সিএন্ড এফ এজেন্টস স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তীক চন্দ্র ।
শুধু মাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়েই বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয় ভারতের সাথে। প্রতিদিন ৫ শতাধিক পণ্য বোঝাই ট্রাক আমদানি হয় বেনাপোল দিয়ে। তবে লকডাউনের কারণে এসব বন্দরগুলোতে কর্মরত ৩০ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তারা অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক নেতা কলি মিয়া জানান।

বর্তমানে দু দেশের বন্দরগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। শুধু মাত্র আনসার সদস্যরা মুখে মাক্স ও হ্যান্ডগেøাবস পড়ে সশস্ত্র পাহারায় নিয়োজিত আছে বন্দর অভ্যন্তরে। বন্দরে জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তারা নিজ নিজ অফিসে বসে দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করছেন।
ভারতের ওপারে পেট্রাপোল, হাকিমপুর, বসিরহা, মালদা, রধিকাপুর, মেখালিগঞ্জস্থল, মুন্দস্থল, থুরা, আগরতলা ও ডাওকি স্থলবন্দরগুলোতে একই অবস্থা। অধিকাংশ ট্রাক চালক ও হেলাপাররাও বন্দরে ট্রাক রেখে বাড়ি চলে গেছে করোনার ভয়ে।

স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, দেশে সর্বমোট অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে সচল মাত্র ১১টি। এর ৬টিতে সরকারি ও ৫টিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। অন্যান্য ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসব বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন পণ্য। রফতানি হয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন পণ্য।

বেনাপোল এসব বন্দরগুলোর মধ্যে গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। আমদানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৩০ লাখ ২ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন। একই সময়ে রফতানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন। সবচেয়ে কম আমদানি রফতানি হয়েছে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে। গত ৫ বছরে এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন পণ্য। রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬৯৯ মেট্রিক টন পণ্য।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, এক সময় বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন রফতানিকারক হিসেবেও সুনাম অর্জন করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে এ খাতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আরও বাড়বে। আর বন্দরগুলোতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুবিধা বাড়াতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

https://www.dailyinqilab.com/article/278481/