২২ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১২:৫৩

করোনায় মৃত্যু ১১ হাজার ছাড়ালো

সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হচ্ছে। অপ্রতিরুদ্ধ এ করোনা ভাইরাস চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া এখন পর্যন্ত এ রোগের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজার ৫৭২ ছাড়িয়েছে। এ মিছিল কোথায় গিয়ে থামবে তা কেউ বলতে পারছে না। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক তৈরি করতে পারে নাই কেউ। এ নিয়ে সারা বিশ্বেই গবেষণা চলছে।

গতকাল শনিবার জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) দেয়া তথ্যানুযায়ী, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৫ জন। বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এ ভাইরাসটির সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৭২।

এবার লকডাউন করা হয়েছে নিউইর্য়ক শহর। এ নির্দেশনা স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা গুনতে হবে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে লকডাউন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর। গত এক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস থেকে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শুক্রবার (২০ মার্চ) সকালে নিউইয়র্কের গর্বনর অ্যান্ড্রু কুমো ‘লকডাউন’ এর নির্দেশ ঘোষণা দেন। এ নির্দেশনা স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা গুনতে হবে।

গর্বনর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, রাজ্যের সব কর্মীকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেবা দেয়া হবে। প্রত্যেকে বাড়িতে নিরাপদে থাকুন এবং সরকারি আইন মানুন। যদি কেউ সরকারি আইন মেনে না চলেন তাহলে তাদের জরিমানা গুনতে হবে।

তিনি জানান, নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণে আক্রান্ত রয়েছে ৭ হাজার ১০২ জন। নিউইয়র্ক শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে! ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। শুক্রবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৫।

রাজ্য গর্বনর ঘোষণা দিয়ে বলেন, পুরো রাজ্যজুড়ে গ্রোসারি স্টোর, ফার্মেসি ছাড়া একান্ত জরুরি ব্যবসা-বাণিজ্য খোলা থাকবে। সব ধরনের আউটডোর কার্যক্রম, স্পোর্টস বন্ধ থাকবে। সরকারি, বেসরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা জরুরি কাজে নিয়োজিত নয়- তাদের ঘর থেকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। রেস্টুরেন্টে শুধু ডেলিভারি, লন্ড্রেমেট, পেট্রল পাম্প এবং সীমিত গণপরিবহন চালু থাকবে।

টানা তৃতীয় দিনের মতো চীনে স্থানীয়ভাবে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি), কিন্তু তারপরও শুক্রবার দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ জন বেড়েছে, বিদেশ থেকে ফেরার পর এদের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে এনএইচসি জানিয়েছে।

এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩০৩ জনে দাঁড়িয়েছে যাদের ৭১ হাজার ৮৫৭ জন চিকিৎসার পর রোগ মুক্ত হয়েছেন।

সিএনএন জানিয়েছে, এ দিন দেশটিতে কভিড-১৯ এ আরও সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, এতে শুক্রবার দিন শেষে চীনে রোগটিতে মৃতের মোট সংখ্যা দাড়াচ্ছে তিন হাজার ২৫৫ জনে।

কভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যায় ইতোমধ্যে চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়া ইতালিতে একদিনে আরও ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩২ জনে। রোগটিতে কোনো দেশে একদিনে মৃত্যুর এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা, ব্যাপকভাবে সংক্রমণের সময়ও চীনে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫০ এর বেশি হয়নি।

ইতালির পর আক্রান্তের সংখ্যা স্পেনে ও জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ইরানে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৫৫৬ জন হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৬১০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপুর জানিয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৭৪৫ জন সুস্থ হয়েছেন।

ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ছড়ানো দেশ স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা শনিবার নাগাদ ২১ হাজার ৫৭১ জনে দাঁড়িয়েছে এবং মারা গেছেন এক হাজার ৯৩ জন।

দেশটি রাজধানীর মাদ্রিদ কনফারেন্স সেন্টারকে করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশাল একটি হাসপাতালে রূপান্তর করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৪৫০ জনের দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬২৪ এবং মৃতের সংখ্যা ২৬০।

যুক্তরাজ্যের আক্রান্ত ৪ হাজার ১৪ জন আর মৃতের সংখ্যা ১৭৮ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত ১৯ হাজার ৮৪৮ আর মৃতের সংখ্যা ৭০ জন। নেদারল্যান্ডে আক্রান্ত ৩০০৩ জন, মৃত ১০৭ জন।

এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত ৮ হাজার ৬৫২ জন আর মৃত্যুর সংখ্যা ১০২। মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত ১০৩০ জন আর মৃত্যু হয়েছে চার জনের। সৌদি আরবে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৪ জন।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ১০২, সুইজারল্যান্ড ৫৬, যুক্তরাজ্য ১৭৭, নেদারল্যান্ড ১০৬, অস্ট্রিয়া ৬, নরওয়ে ৭, সুইডেন ১৬, বেলজিয়াম ৩৭, ডেনমার্ক ৭, কানাডা ১২, মালয়েশিয়া ৩, পর্তুগাল ৬, জাপান ৩৫, ব্রাজিল ১১, ইরাক ১৭, পাকিস্তান ৩, ভারত ৫ ও বাংলাদেশে ২ জন মারা গেছেন।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং পোষা প্রাণির সংস্পর্শ এড়িয়ে যেতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

বাংলাদেশের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের হট লাইন ০১৯৪৪৩৩৩২২২ নম্বরে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রচার নজরে আসলে তথ্য অধিদপ্তরের সংবাদকক্ষের ফোন নম্বর ৯৫১২২৪৬, ৯৫১৪৯৮৮, ০১৭১৫২৫৫৭৬৫, ০১৭১৬৮০০০০৮ এবং ইমেইল: piddhaka@gmail.com/piddhaka@yahoo.com অথবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

http://dailysangram.info/post/410802