৫ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৫

তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকছে না

শিশুদের স্কুলভীতি দূর করতে নয়া উদ্যোগ; ২০২১ সাল থেকেই কার্যকর করার চিন্তা

প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে আর নিয়মতান্ত্রিক কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। এই নিয়ম চালু হচ্ছে ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকেই। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা না থাকলেও প্রত্যেক শ্রেণিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তার অগ্রগতি যাচাই করবেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার পারফরম্যান্স অনুযায়ীই ওপরের ক্লাসে উন্নয়নের জন্য বিবেচিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্লাসের নিয়মতান্ত্রিক পরীক্ষাপদ্ধতি বাতিল করা হলেও শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের পদ্ধতি অনুসারে শ্রেণিশিক্ষক প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতির মূল্যায়ন রেকর্ড করবেন এবং প্রতি চার মাস পরপর রিপোর্ট কার্ড প্রদান করবেন, যাতে অভিভাবকরা সন্তানের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতির জন্য গ্রেডিং পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক অর্থাৎ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শোনা, বলা, পড়া, কর্মদক্ষতা ও বিষয় জ্ঞান দেখা হবে। ব্যক্তিগত গুণাবলি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার এবং বিশেষ পারদর্শিতার মূল্যায়ন করা হবে।

আগামী শিক্ষাবর্ষ (২০২১ সাল) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ফলে এই স্তরের কোনো শিশুকে আর আনুষ্ঠানিক পরীক্ষায় বসতে হবে না। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন জানান, ২০২১ সালে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পাশাপাশি মাধ্যমিক সংযুক্ত সরকারি, বেসরকারি এবং এমপিওভুক্ত স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেুণী পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এর অংশ হিসেবে চলতি বছর দেশের ১০০টি স্কুলে এই কার্যক্রম পাইলটিং করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয় তা হলো সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতি। নির্দিষ্ট সময় শেষে এই মূল্যায়ন হয়। আগামী বছর থেকে সেটি ধারাবাহিক মূল্যায়নে যাবে। প্রতিদিন পাঠদানের সাথে সাথে কিছু কাজ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিশুদের মূল্যায়ন করবেন শিক্ষক, ওই পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীরা বুঝেছে কি না। সপ্তাহ শেষে শিক্ষার্থীর ‘শিখন যোগ্যতা’ মূল্যায়ন করে শিক্ষক তার ডায়রিতে লিখে রাখবেন। প্রতি চার মাস পর শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করে একটি ‘গ্রেড’ দেবেন। এভাবে বছরে তিনটি মূল্যায়নের সমন্বয় করে শিশু পরবর্তী শ্রেণীতে পদোন্নতি পাবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের ওপর চাপ কমানোর বিষয়ে নির্দেশ দেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশও দিয়েছিলেন। মূলত এরপর কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়। অবশ্য নানা কারণে সেই উদ্যোগের কাজে কিছুটা দেরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষানীতিতেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে; কিন্তু তা এত দিন বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার জন্য কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/485614/