১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৭:৪৫

ভয়াবহ সব ট্রেন দুর্ঘটনায় জীবন গেছে সহস্রাধিক মানুষের

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাগুলোতে সহ¯্রাধিক যাত্রী মারা গেছেন। বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই দুর্বল সিগন্যালিং ব্যবস্থার কারণে ঘটেছে বলে মনে করছেন রেলপথ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ সোমবার মধ্যরাতে ব্রাহ্মহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ দুুর্ঘটনায় মঙ্গলবার রাত ৮টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিশুসহ মোট ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে আর উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেট থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল।

রেলভবন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টঙ্গীর কাছে মাজুখানে দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৭০ যাত্রী মারা যান। আহত হন চার শতাধিক। তবে এর আগে স্প্যান ভেঙে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৩ সালের ২২ মার্চ ঈশ্বরদীতে। সেতুর স্প্যান ভেঙে কয়েকটি বগি নিচে শুকনো জায়গায় পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় ৬০ জন যাত্রী নিহত হয়েছিলেন।

পরিসংখ্যান মোতাবেক চট্টগ্রাম রুটের রেললাইনে গত ৩০ বছরে কয়েকটি বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কাছাকাছি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৩ জন নিহত এবং দুই শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছিলেন। একই লাইনে ২০১০ সালে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘মহানগর গোধূলি’ ও ঢাকাগামী মেইল ‘চট্টলা’র মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চট্টলা ট্রেনের একটি বগি মহানগর ট্রেনের ইঞ্জিনের ওপর উঠে গিয়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় চালকসহ মোট ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।

এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গে বেশ কয়টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হিলি ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটির দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় পার্বতীপুরগামী ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস একই লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হয় ট্রেনকে। তবে এ পথেও প্রাণ যায় মানুষের। দুর্ঘটনায যারা আহত হন তারা আরো দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। তাদের খোঁজও আমরা রাখি না।’ কসবায় ১১ নভেম্বরের দুর্ঘটনাকে ভয়াবহতার দিক থেকে দ্বিতীয় উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এরচেয়ে প্রাণের ক্ষতি অন্য দুর্ঘটনায় বেশি ঘটলেও ভয়াবহতার দিক দিয়ে এটি অনেক এগিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনা বেশির ভাগই হয় লাইনচ্যুত হয়ে বা মুখোমুখি সংঘর্ষে। রেলের বিভিন্ন গাফিলতি নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কথা বললেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। রেলে অনেক বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনটা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত, সেটায় মনোযোগ তাদের নেই।’

সিগন্যাল ব্যবস্থার সমালোচনা করে রেল বিশেষজ্ঞ মো: আতিকুর রহমান একটি অনলাইন পোর্টালকে জানান ‘সিগন্যালিং ব্যবস্থায় সমস্যা রয়ে গেছে। দুর্ঘটনা ঘটলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসল কারণ আড়ালে চলে যায়। ট্রাফিকিং বিভাগ, মেকানিক্যাল, সিগন্যালিং ও মেইনটেনেন্স বিভাগ একে অপরকে দোষ দিতে থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরের যে প্রস্তুতি সেটি আমাদের একেবারেই নেই। সার্বিকভাবে আমরা রেল বিভাগের গাফিলতি দেখতে পাই।’

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/455693/