৬ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ১২:৫১

অবসরের প্রাক্কালে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশে প্রমোদভ্রমণ

গণপূর্তের আয়োজনে সস্ত্রীক যাচ্ছেন ২ কর্মকর্তা

অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে প্রশিক্ষণ নিতে তুরস্ক যাচ্ছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন। পূর্ত মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের আরও পাঁচ কর্মকর্তাও যাচ্ছেন কথিত এই প্রশিক্ষণে। প্রকৌশলীদের জন্য এই প্রশিক্ষণ হলেও সেখানে যুক্ত করা হয়েছে আমলা ও তাদের স্ত্রীদেরও। ৯ দিনের এই ভ্রমণের জন্য সরকারের ব্যয় হবে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। রাজস্ব খাত থেকে এ অর্থ খরচ হবে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ব্যাপারে সতর্ক করার পরও গণপূর্তের এ সফর নিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তারা বলছেন, স্ত্রী-পরিজনকে সঙ্গে নিলে সেটা প্রমোদভ্রমণ হয়, প্রশিক্ষণ হয় না।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনগণের টাকায় যখন এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্র কতটা সুফল পাবে, সেটাই দেখার বিষয়। যারা প্রশিক্ষণ নেবেন, তাদের কী মাপকাঠিতে নির্বাচন করা হয়েছে, সেটাও প্রশ্ন। বর্তমানে প্রশিক্ষণকে আনন্দভ্রমণের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা প্রকল্প সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ অপচয় হচ্ছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

জানা গেছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন। তবে এর মাত্র দুই মাস আগে 'দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভবন সুরক্ষা উন্নতিকরণ' প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ নিতে গণপূর্তের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের তুরস্ক ভ্রমণের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন তিনি। সেই প্রতিনিধি দলে অবসরের মুখে থাকা তিনিও রয়েছেন।

জানা গেছে, প্রতিনিধি দলটির ভ্রমণের সময় ছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু কয়েকজনের ভিসা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রতিনিধি দলটি যেতে পারেনি। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের সব আয়োজন শেষ হয়েছে। যে কোনো দিন তারা তুরস্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। প্রতিনিধি দলে আছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উল্লা খন্দকার। তিনি স্ত্রী রোকেয়া শহীদকে সঙ্গে নেবেন। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী চিফ (প্রধান) সালাহ উদ্দীন যাচ্ছেন স্ত্রী ফারজানা ইসলাম আঁখিকে সঙ্গে নিয়ে। এই দুই কর্মকর্তার কেউই কারিগরি বিষয়ক নন। প্রতিনিধি দলে আছেন গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিজাইন বিভাগ-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসাইন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এ এন এম মাজাহারুল ইসলাম। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন শাহাদাত হোসেন।

জানা গেছে, এই ভ্রমণের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশন চাওয়া হয়। এতে ট্রেনিং অ্যান্ড টেকনোলজি ট্রান্সফার (টিটিটি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ গাইড হিসেবে কাজ পায়। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫৫ টাকা। এর মধ্যে বিমানে আসা-যাওয়া খরচ ২২ হাজার ১৯৪ ডলার, প্রতিদিনের খরচ ১২ হাজার ৩৫৬ ডলার, অনুষ্ঠান সংক্রান্ত খরচ ২৫ হাজার ৫০ ডলার এবং প্রশিক্ষণের ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৬৩ ডলার।

জানতে চাইলে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন সমকালকে বলেন, 'অবসরে যাচ্ছি বলেই যে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া যাবে না- এমন কোনো কথা নেই। অবসরের পরেও তো আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারি। তখন এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যাবে।' কারিগরি ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে আমলাদের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো সফরেই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকেন। এ জন্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্ত্রীদের সঙ্গে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্ত্রীদের ভ্রমণের খরচ তাদের স্বামীরা বহন করবেন। কাজেই তাদের জন্য সরকারের কোনো টাকা খরচ হবে না। স্ত্রীরা সঙ্গে থাকলে প্রশিক্ষণে ব্যাঘাত ঘটবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই তো আর প্রশিক্ষণ হবে না। অবসরে স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরা যাবে।

https://samakal.com/bangladesh/article/19113324/