৪ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৫:৪৬

সংবাদ সম্মেলনে সিসিএসের তথ্য

চার মাসে ৩২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট

পেঁয়াজের দাম ১২২ দিনে ২৪ বার ওঠানামা করেছে। এ সময় পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪০০ গুণ। এ সময়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে ৩২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শক্তিশালী পেঁয়াজ সিন্ডিকেট। গত এক মাসে দৈনিক হাতিয়েছে ৫০০ কোটি টাকা করে। ‘পেঁয়াজের মূল্য সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এসব তথ্য তুলে ধরে ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত বেসরকারি সংস্থা কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস)। সঙ্কটের সমাধানে সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিসিএস নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন সিসিএসের গবেষণা দলের সমন্বয়ক জয়ন্ত কৃষ্ণ জয় ও শরিফুল ইসলাম।

খুচরা বাচারে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে পলাশ মাহমুদ বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। যা দেশের ইতিহাসে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম। কোথাও কোথাও পেঁয়াজ এখন ‘হালি’ দরে বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে এখন পেঁয়াজ দুর্লভ পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দুই সপ্তাহে অকল্পনীয় হারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত চার মাস আগে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ঈদুল আজহার এক মাস আগে, জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। তখন সরবরাহ ও আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও একদিনেই কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে (১২২ দিন) মোট ২৪ বার পেঁয়াজের মূল্য ওঠানামা করেছে।

পেঁয়াজের মূল্যের এই ওঠানামার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে মন্তব্য করে পলাশ মাহমুদ বলেন, গত চার মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্তত পাঁচবার স্বীকার করেছেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট কাজ করছে। চট্টগ্রামে সিন্ডিকেটের ১৩ সদস্যকে চিহ্নিত করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা ভোক্তাকে হতাশ, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরবরাহ সঙ্কট ও আমদানি খরচের যে কারণ দেখানো হচ্ছে সে বিষয়ে সিসিএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ দু’টি যুক্তিই শুধুমাত্র অজুহাত ও ভোক্তার সাথে প্রতারণার কৌশল। কারণ, ঈদুল আজহার এক মাস আগে কোথাও সরবরাহ ঘাটতি ছিল না এবং আমদানি খরচ বেশি ছিল না। শুধুমাত্র ঈদকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা অব্যাহতভাবে দাম বাড়াতে থাকে। যা এখন ভোক্তার নাভিশ্বাস পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও পরে রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার সাথে সাথে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়। একদিনেই বর্ধিত দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসা সম্ভব নয়। এর পরপরই ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে সর্বত্রই এখনো ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এতেই প্রমাণিত হয় পেঁয়াজের সরবরাহ যথেষ্ট ছিল এবং আছে। অন্য দিকে দেশী পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই উল্লেখ করে সিসিএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে বছরে ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর দুই-তৃতীয়াংশ বা ১৬ লাখ মেট্রিকটনের চাহিদা দেশী পেঁয়াজে পূরণ হয়। কোনো দেশ রফতানি বন্ধ করলে দেশী পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার বা কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতও প্রযোজ্য নয়। ফলে সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে ভোক্তার সাথে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পলাশ মাহমুদ।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/453472