২ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১:১১

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হয়, ভাঙা হয় না

ঢাকা মহানগরের ৩২১টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ওই সব ভবনের মধ্যে ৩৯টির অবস্থান পুরান ঢাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির পর ৯ বছর পার হলেও সেগুলো ভাঙতে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক। এরই মধ্যে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীর একটি পরিত্যক্ত ভবন ধসে নিহত হয়েছে দুজন। ধসে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা অনেক ভবনে এখনো বসবাস করছে বহু মানুষ। নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে ওই সব ভবন কম টাকায় ভাড়া দেন জেলা প্রশাসন থেকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ইজারা নেওয়া মালিকরা।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালে তালিকাটি হালনাগাদ করা হয়। তালিকায় পুরান ঢাকার ৩৯টি ভবন আছে। ওই সব ভবনের মধ্যে রাজউকের ৫ নম্বর জোনে পড়েছে ১২টি। বাকি ২৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পড়েছে ৭ নম্বর জোনে। সরকারি, ব্যক্তিগত এবং অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ইজারা নেওয়া বাড়ি আছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায়। পুরান ঢাকার ৩৯টি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন। পাড়া-মহল্লার ভেতরের অনেক বাড়ি তালিকায় আসেনি বলে দাবি তাঁদের। গত ১৭ জুলাই ধসে পড়া ভবনটিও ছিল না রাজউকের তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায়।

পাটুয়াটুলী এলাকার ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজউকের তালিকার বাইরে আরো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। পুরান ঢাকায় ২০০ বছরের পুরনো ভবনও আছে। এসব ভবন সরকার মেরামত করে না। আবার ইজারাদারদেরও মেরামত করতে দেয় না’

রাজউকের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৭ নম্বর জোনের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে সূত্রাপুরে ১৩টি; কোতোয়ালিতে আটটি; বংশাল, পাটুয়াটুলী, বাদামতলী, ফুলবাড়িয়া, সদরঘাট এবং কে জি গুপ্ত রোডে একটি করে ভবন আছে। ২৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে নারিন্দা রোডে ঢাকা ডিসি অফিস স্টাফ কোয়ার্টার এবং কে জি গুপ্ত রোডে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির রয়েছে। এ ছাড়া ওই জোনের ২৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে তিনটির মালিক খুঁজে পায়নি রাজউক। দুটি ভবন অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেওয়া। বাকি ২০টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ব্যক্তিমালিকানাধীন। একই সঙ্গে রাজউকের ৫ নম্বর জোনের ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে রাজাবাজারে পাঁচটি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দুটি, চকবাজারের মোগলটুলী ও বংশালে একটি করে ভবন আছে রাজউকের তালিকায়। বাকি তিনটি ভবনের অবস্থান নিউ এলিফ্যান্ট রোডে।

রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুরান ঢাকার ‘ভূমি পুনঃ উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত আছে। এই প্রকল্পের আওতায় পুরান ঢাকাকে বেশ কয়েকটি ব্লকে ভাগ করা হবে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে—এমন ভবন সংরক্ষণ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরান ঢাকার সমস্যা সমাধান হবে।

প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজউকের তৈরি করা তালিকায় মালিকানার ধরন দেখা হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন স্থান পেয়েছে তালিকায়। তবে ভূমি পুনঃ উন্নয়ন প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’

পুরো ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙতে আন্তঃবিভাগীয় কোনো জটিলতা নেই। শিগগিরই অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা হবে। তবে ভবনের মালিকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে একটা সমাধানে পৌঁছতে চাই আমরা।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নিয়ে ভবনগুলো ব্যবহার করছে অনেকে। প্রতিবছর নবায়ন করতে হয় ইজারা। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই সব ভবন মেরামত করার অনুমতি দেওয়া হয় না। আবার জেলা প্রশাসনও ভবনগুলো মেরামত করে না। জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিলেও মালিকরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকতে চান না। নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে ভাড়া দিয়ে ইজারাদাররা থাকেন বাইরে। রাজউক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করলেও সে বিষয়ে জানেন না খোদ জেলা প্রশাসক।

ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস গত জুলাইয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুরান ঢাকায় কতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, তা জানা নেই। এ বিষয়ে কোনো জরিপ হয়েছে কি না, খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’ ঝঁকিপূর্ণ ভবনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে শনিবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2019/11/02/834161