২ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১:০৫

ইলিশ ছাড়া সব পণ্যের দামই বাড়তি

দীর্ঘ ২২ দিন পর ইলিশ ধরার অনুমতি পেয়েছেন জেলেরা। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। তা ছাড়া নিষিদ্ধ থাকার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ধরা ইলিশ বেপারিদের কাছে আগে থেকেই মজুদ ছিল। ফলে বাজারে এখন ইলিশের সরবরাহ প্রচুর। কিছুটা সহনীয় দামে মিলছে মুখরোচক এ মাছ। তবে ইলিশ ছাড়া সব নিত্যপণ্যের দামই আকাশছোঁয়া। বাজারে থরো থরো সাজানো থাকলেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে তিন দফা। খুচরা বাজারে গতকাল পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিদরে।

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বাজারে যে ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা পিস দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। বড় ইলিশের পাশাপাশি দাম কমেছে ছোট ইলিশেরও। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে, যা আগে ছিল ৫০০ টাকার উপরে। মা ইলিশ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণ বন্ধ রাখে সরকার। ২২ দিনের সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীর বাজারে ইলিশ কেনাবেচা শুরু হয়।

গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম কমে যাওয়ায় মাছের বাজারে প্রিয় মাছ ইলিশ কিনতে ভিড় করছেন বেশির ভাগ ক্রেতা। এ কারণেই রুই, পাবদা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাশের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, জালে এখন পর্যাপ্ত ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। তবে এ ধরা বেশি দিন থাকবে না। কিছুদিন পরেই ইলিশ মাছ ধরা পড়ার পরিমাণ কমে যাবে। তাদের ধারণা, এক সপ্তাহ পরেই ইলিশের দাম বেড়ে যাবে।

এ দিকে নানামুখী আয়োজন সত্ত্বেও রাজধানীর বাজারে অনেকটা পাগলা ঘোড়ার মতোই দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহে যেসব বাজারে দেশী পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেই বাজারগুলোতে এখন দেশী পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজিদরে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে বরাবরের মতোই সরবরাহ ঘাটতির কথা বলছেন পাইকাররা।

এ দিকে শীতের আগমনী বার্তা সত্ত্বেও বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। আগাম সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না। উল্টো সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম বেড়েছে। নতুন করে দাম বেড়ে বেগুনের কেজি কিছু কিছু বাজারে ১০০ টাকায় উঠেছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। তবে এখনো কিছু কিছু বাজারে বেগুনের কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের সাথে নতুন করে দাম বেড়েছে গাজর ও পাকা টমেটোর। মানভেদে গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আর গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।

নতুন করে দাম না বাড়লেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের আগাম সবজি শিম, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি। শিমের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা পিস। ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, করলা, ঝিঙে, বরবটি, পটল, ঢেঁড়স, উসি, ধুন্দুলসহ সব ধরনের সবজি। গত সপ্তাহের মতো ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস। করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বরবটি, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/452927/