৩১ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:৪২

খোঁড়া রোগে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ ৪ বছরের প্রকল্প এখন ৮ বছরে

খুঁড়িয়ে চলার রোগে আক্রান্ত হয়েছে সারাদেশে বাস্তবায়নাধীন ফায়াস সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ কার্যক্রম। নির্ধারিত চার বছরে তো নয়ই, বর্ধিত আরো তিন বছরেও শেষ হলো না উপজেলা পর্যায়ে ১৫৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন। ইতোমধ্যে ৩৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প ২০২০ সালের জুনে সমাপ্তির জন্য ১৭টির কাজ অন্য প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, কিছু কিছু জমি নির্বাচন সঠিকভাবে করা হয়নি। নিচু জমি নির্বাচন করা হয়েছে। ভরাট করে নির্মাণ করা হলে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকাণ্ডে জানমাল রক্ষা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য এবং নিরাপদ দেশ গঠনে ১৫৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের প্রকল্পটি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। আর এই প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৮৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল এই প্রকল্পটি। কিন্তু সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রকল্পের ব্যয় ৬১.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে তা কমিয়ে ৩৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা থাকলেও সেই সময়েও সমাপ্ত হয়নি। এখন ২০২০ সালে কিছু কাজ অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্ত করা হচ্ছে বলে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত চার বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। আর অর্থ ব্যয় হয়েছে ১১ শতাংশ বা ৯৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রথম দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির সময় পিইসি থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, গত চার বছরে প্রকল্পের যে অবস্থা তাতে আগামী চার বছরেও প্রকল্পটির আদৌ কোনো অগ্রগতি দেখা যাবে কি না। এখন দেখা যায় পিইসির আশঙ্কাই সত্য হয়েছে।

চলতি মধ্য অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, ১৫৬টি স্টেশনের মধ্যে ৪৮টির পূর্ত কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৪৭টি চালু করা সম্ভব হয়েছে। একটি চালুর অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ৮৯টির নির্মাণকাজ চলমান আছে। অবশিষ্ট দুটির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন এবং একটির টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন, কিন্তু মামলার কারণে নির্মাণকাজ স্থগিত আছে। চারটির জমির মূল্য পরিশোধিত এবং বতর্মানে হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন। চারটির জমি অধিগ্রহণে মামলা রয়েছে। তিনটির জমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রেরণ এবং দুটি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে।

যে ১৭টি ২০২০ সালের জুনে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না এবং অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হলো : পাগলা, কাঁচপুর, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, ভুরুঙ্গামারী, নওগার ধামুইরহাট, সিরাজগঞ্জের চৌহালি, কুমিল্লার দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার তিতাস, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মানিক ছড়ি, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, সিলেটের গোয়াইঘাট, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং চাঁদপুরের উত্তর মতলব। এই ১৭টি নতুন নিয়মে ডিপিপির চেয়ে জমির মূল্য বেশি হবে এবং গণপূর্তের নতুন রেট শিডিউলে কাজ করতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, জমি অধিগ্রহণ খাতে ১৫৬টির জন্য ৮১ কোটি ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সংস্থান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫২টির জমির সেলামি মূল্য বাবদ ৫৬ কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ খাতে ২৫ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার টাকা অবশিষ্ট আছে।

প্রকল্প পরিচালক মো: রিজওয়ানুল হুদার সাথে গতকাল রাতে প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ১৭টি বাদে বাকি স্টেশন নির্মাণকাজ আগামী ২০২০ সালের জুনেই শেষ করা সম্ভব হবে। ১৫৬টির মধ্যে বর্তমানে ৫০টি চালু করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ পর্যায়ক্রমে আগামী জুনের মধ্যে শেষ করা যাবে। তবে ওই ১৭টি স্টেশন নির্মাণ অন্য কোনো প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে। প্রকল্পগুলোর এখনো কোনো টেন্ডার করা হয়নি। এখানে জমি কেনা হয়েছে। আবার কয়েকটি আছে যেগুলোর জমি নিয়ে মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, এসবের কাজ এখন যদি শুরু করা হয় তাহলে প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগবে। অন্য দিকে নতুন করে টেন্ডারের কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনেরও আপত্তি আছে। তাই এগুলো অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের উপ-প্রধান জানান, প্রকল্পের কিছু কিছু ক্ষেত্রে জমি নির্বাচন সঠিক হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় খুব নিচু জমি নির্বাচন করা হয়েছে। বর্তমানে যা ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, যেগুলোর কাজ হবে না তা অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা যেতে পারে। আর এই প্রকল্পটির কিছু কাজ অসমাপ্ত রেখেই সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/452422/