হাবিবুর রহমান মিজান। ফাইল ছবি
১৫ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:০৮

সরকারি প্লটে পাগলা মিজানের ২৫ ফ্ল্যাট

মোহাম্মদপুর ও গাজীপুরে একাধিক প্লট

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের অবৈধ সম্পদের তথ্য একে একে বেরিয়ে আসছে। মোহাম্মদপুরে সরকারি জমিতে তিনি দুটি ভবন নির্মাণ করেছেন।

ভবন দুটিতে তার ২৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া নয়াপল্টনে মিজানের মালিকানাধীন ছয়তলা বাড়ি, মোহাম্মদপুরে ১০ কাঠা ও গাজীপুরে ৩৫ কাঠার প্লট রয়েছে। শুক্রবার গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব তথ্য জানান।

১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার ‘বি’ ব্লকে পাগলা মিজান সরকারি জমি দখল করে স্বপ্নপুরী হাউজিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলেন। তিনটি প্লটে নির্মিত ছয়তলা তিনটি ভবনের মধ্যে দুটির মালিক তিনি। দুটি ভবনে তার ২৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

অন্যগুলো তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। কমপ্লেক্সের অপর ভবনের মালিক লুৎফর রহমান। মিজানের কাছ থেকে প্লট কিনে তিনি ভবন নির্মাণ করেছেন।

মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় শনিবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাগলা মিজানকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। সোমবার ছিল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. গিয়াস উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, মিজানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনি অনেক তথ্য দিয়েছেন।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় পাগলা মিজান একজন দখলবাজ হিসেবে পরিচিত। স্বপ্নপুরীর হাউজিং কমপ্লেক্সের সামনের মাঠটিও তিনি দখলে নিয়েছেন।

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে ৩০ কাঠার একটি প্লট দখল করে গড়ে তুলেছেন মার্কেট। এছাড়া মোহাম্মদপুর সমবায় মার্কেট ও জেনেভা ক্যাম্পের টোল মার্কেটও তার দখলে। সিটি কর্পোরেশনের নাম করে এসব মার্কেট থেকে তিনি মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলেন।

র‌্যাব বলছে, ১৫ বছর ধরে মিজানের কোনো বৈধ আয়ের উৎস নেই। অথচ এ সময় তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসেও তিনি বাড়ি কিনেছেন। বিভিন্ন মার্কেট দখল করে চাঁদাবাজি এবং ফুটপাতে চাঁদাবাজি করতেন মিজান।

৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো নির্মাণ কাজ করতে হলে তাকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো। জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

মানি লন্ডারিং আইনের মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি বলছে, মিজান জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পদের আংশিক তথ্য দিয়েছেন। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া সম্পদের সঙ্গে তার দেয়া তথ্যের মিল নেই।

অবৈধ আয়ের উৎস সম্পর্কেও তিনি খুব বেশি তথ্য দিচ্ছেন না। তবে নানা কৌশল অবলম্বন করে তার কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে।

শুক্রবার ভোরে শ্রীমঙ্গলের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মিজানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় একটি অবৈধ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি ও দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ওইদিন মিজানকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র এবং ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।

মিজানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে শ্রীমঙ্গল থানায় এবং মানি লন্ডারিং আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে র‌্যাব।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/232141/