১৬ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ১২:৫২

ফের রাস্তায় বিনিয়োগকারীরা

আইসিবি’র বিনিয়োগ বড় উত্থানে পুঁজিবাজার

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর কিছুদিন বিক্ষোভ বন্ধ থাকলেও গতকাল ফের ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’র ব্যানারে ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। দরপতনের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভের আয়োজন করা হলেও বিনিয়োগকারীরা যখন রাস্তায় নামেন ততক্ষণে বড় উত্থানের আভাস দিতে থাকে শেয়ারবাজার। বেলা ১১টার দিকে যখন বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নামেন তখন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ৮০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। দিনের লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের এ বড় উত্থান অব্যাহত থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বিনিয়োগ বাড়ানোয় গতকাল দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ফলে টানা ছয় কার্যদিবস দরপতনের পর ঊর্ধ্বমুখিতায় ফিরল শেয়ারবাজার।

এর আগে দরপতনের প্রতিবাদে দিনের পর দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করায় গত ২৭ আগস্ট ডিএসই’র পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় জিডি করা হয়।

ওই জিডিতে বলা হয়, ২৭ আগস্ট আনুমানিক দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ পুঁজিবাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ৯-১০ জন লোক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের সামনে ব্যানার ও মাইকসহ বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করে। ‘যার ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত এবং অফিসের স্বাভাবিক কর্যক্রম সম্পাদনে বিঘœ ঘটে।’

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সামনে বেশ কিছুদিন ধরে তারা এ ধরনের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে এবং পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে সম্মান হানিকর মন্তব্য করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মনে করে এ ধরনের কার্যকলাপ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছেÑবলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের প্রাচীন বৃহৎ পুঁজিবাজার। একটি জাতীয় ও জনস্বার্থমূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে দৈনিক এখানে হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটে। অতএব, বিষয়টি বিবেচনা করে পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আর্জি করে এ ব্যাপারে আপনার থানায় একটি জিডি নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়।

ডিএসই’র পক্ষ থেকে এই জিডি করা হলে বন্ধ হয়ে যায় বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ। তবে শেয়ারবাজারে চলতে থাকে দরপতন। দরপতনের ধারা সম্প্রতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে বিনিয়োগকারীদেরকোনো ধরনের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি।

এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস পাওয়া যায়। আশ্বাস অনুযায়ী বিনিয়োগও বাড়ায় আইসিবি। ফলে লেনদেনের শুরুতেই মূল্য সূচকের বড় উত্থানের আভাস দিতে থাকে।

এ পরিস্থিতিতেই গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। এই বিক্ষোভ থেকে বরাবরের মতো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, বিএসইসির এই চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে শেয়ারবাজার ভালো করা যাবে না। আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চায়। এ জন্য আজ আমরা আবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। গতকালের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে ডিএসইর লেনদেন তিন’শ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করতে পারেনি।

এদিন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১১০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৮২১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭০৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচকে বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

দিনভার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাজারটিতে ২৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা লেনদেন বেড়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক সিএএসপিআই ২৪২ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৬৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪টির। আর ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/241430