১৪ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, ১১:২৮

ঢাকা দুই সিটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

উত্তরে অভিযান দক্ষিণে নীরব

ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি করপোরেশন ওয়ার্ডভিত্তিক দফায় দফায় অভিযান চালালেও এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ নিশ্চুপ রয়েছে। ফলে দখলকারীরা নিশ্চিত মনেই ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

রাজধানীতে দীর্ঘ দিন থেকেই ফুটপাথ-সড়ক দখল করে অবৈধ ব্যবসা চলে আসছে। দৃশ্যত হকাররা ছোট ছোট চকি, স্থাপনা নিয়ে ফুটপাথে ব্যবসা করলেও এর পেছনে রয়েছে রাঘববোয়ালদের হাত। লাইনম্যান নামধারীরা ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে তা পৌঁছে দেয় রাজনৈতিক নেতা-প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে। এ কারণে সিটি করপোরেশন বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও আবারো ফুটপাথ দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিককালে দুই সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ফুটপাথের উন্নয়ন করলেও তার সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। ফুটপাথজুড়ে কাপড়, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী নিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি বসে থাকায় পথচারীদের বিপাকে পড়তে হয়। এ ছাড়া রাস্তার পাশে থাকা দোকানদাররাও তাদের মালামালসহ বিভিন্ন সামগ্রী রেখে ফুটপাথ দখল করে রাখেন। অনেক দলীয় কার্যালয়ও ফুটপাথ দখল করে স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে পথচারীদের অনেকে ফুটপাথের পরিবর্তে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। ফুটপাথের এ অবস্থা নিয়ে নগরবাসীর ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। এরপর গত ২২ দিনে তারা উত্তরা, মহাখালী, মিরপুর, ভাসানটেক, গাবতলী, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে। এ সময় ফুটপাথ ও সরকারি জায়গায় থাকা ব্যাপক সংখ্যক স্থাপনা, দোকান, দলীয় কার্যালয় উচ্ছেদ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ-সংক্রান্ত এক সভায় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে কোনো প্রকার বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না। পথচারীদের জিম্মি করে দখল বাণিজ্য সহ্য করা হবে না। এ সময় তিনি জানান, ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে অভিযান চালানো হবে। অভিযানের পর আবার কেউ বসলে আবারো অভিযান চালানো হবে।

কোনোভাবেই ফুটপাথ দখল করতে দেয়া হবে না। সে অনুযায়ী গত কয়েক দিনে কাওরানবাজার ও উত্তরায় একই স্থানে কয়েক দফা অভিযানও চালানো হয়েছে। এ দিকে উত্তরের মতো দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ দখল করে অবৈধ ব্যবসা চলমান থাকলেও সেখানে কোনো প্রকার অভিযান চালানো হচ্ছে না। বিশেষ করে গুলিস্তান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম এলাকা, পল্টন, দৈনিক বাংলা এলাকায় ফুটপাথ-রাস্তা দখল করে হকাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ নগর ভবনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভা শেষে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটিতে অভিযান শুরু হয়েছে। দক্ষিণ সিটিতেও শিগগিরই অভিযান শুরু করা হবে। কিন্তু এরপর ২০ দিন চলে গেলেও এখনো দক্ষিণ সিটি এলাকায় কোনো প্রকার অভিযান চালানো হয়নি। ফলে দখলদাররা ফুটপাথ দখল করে আগের মতোই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে গতকাল দক্ষিণ সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র হাসিবুল ইসলাম মানিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে আগে অনেকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আবারো তারা বসে যাচ্ছে।

ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা সদিচ্ছা দেখালেই ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/447995