১২ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ২:৩৩

নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ

টেকনাফ স্থলবন্দরে অব্যবস্থাপনা

গত মাসের শেষের দিকে হঠাৎ ভারতের পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেলে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আসা শুরু করে বাজারে। সঙ্কটকালিন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয় মিয়ানমারের পেঁয়াজ। কিন্তু টেকনাফ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনায় লোকসান গুনতে হচ্ছে পেঁয়াজ আমদানি কারকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবারেও ১ হাজার ২৭৬ দশমিক ৯০৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে বন্দরে। গত দশ দিনে ৫ হাজার ৮৪৯ দশমিক ৮৮৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার আবছার উদ্দিন। কক্সবাজারের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পেঁয়াজের চেয়ে সস্তায় বিক্রি হচ্ছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ। কয়েকজন ভোক্তা জানান, মিয়ানমারের পেঁয়াজ আকারে ছোট হলেও ‘ঝাঁঝ ভালো’ এবং দামে কম। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকাকালিন সঙ্কট উত্তরণে সহায়ক হয় মিয়ানমারের পেঁয়াজ।

এদিকে টেকনাফ স্থল বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা অভিযোগ করেন, শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জেটি না থাকায় মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দরে খালাসে বিলম্ব হয়। এতে দেড় হাজার বস্তার বেশি পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, অভিযোগ করেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পঁচনশীল এ পণ্য ট্রলার থেকে খালাসে বিলম্ব হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জেটির অভাবে মিয়ানমার থেকে আনা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। বন্দরে নোঙ্গর করার দু’-তিনদিন পেরিয়ে গেলেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পণ্য খালাসে ধীরগতির কারণে ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করা যায় না। এখন শ্রমিক সংকট ও দু’টি জেটি দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসের কারনে শত শত বস্তা পেঁয়াজ ট্রলারেই পঁচে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর ফলে যেকোনো সময় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। কাস্টমস স‚ত্র জানায়, পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

আমদানিকারক এমএ হাশেম ও মোহাম্মদ সেলিম জানান, ট্রলার থেকে খালাসে বিলম্ব হওয়ায় বস্তা বস্তা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব পেঁয়াজ এখন বাছাই করতেও অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এভাবে চললে লোকসান দিয়ে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবে না। তারা আরও বলেন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে ট্রাকে খালাস করা পণ্য বিকাল ৫টার পর স্কেলে তোলে প্রতি ট্রাকে ‘নাইটচার্জ’ হিসেবে অতিরিক্ত সাড়ে ৫ হাজার টাকা আদায় করে নেন। এর সঙ্গে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ। এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, জানান ব্যবসায়ীরা।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ট্রলার বন্দরে নোঙ্গর করার সঙ্গে সঙ্গে আইজিএম জমা দেয়া হয়। কাঁচাপণ্য হিসেবে দ্রæত খালাস করার কথা থাকলেও শ্রমিক সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে গত দু’-তিনদিনে দেড় হাজার বস্তার বেশি পেঁয়াজ ট্রলারে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থলবন্দর পরিচালনাকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জেটি ও শ্রমিক সংকটের কথা সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে। বর্তমানে দু’টি জেটি দিয়ে পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে। মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে ট্রলার আসতে দু’-তিনদিন সময় লাগে। এতে করে বস্তাভর্তি কিছু পেঁয়াজে পঁচন ধরে যাওয়া অস্বাভাবিক নয় ।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/240549