৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ২:২৯

জুনে তড়িঘড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন: নিশ্চিত হচ্ছে না তদারকি ও কাজের মান

‘অর্থবছরের শেষ সময়ে জুন মাসে একযোগে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে প্রকল্পের কাজ তদারকি করাসহ কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না’- এমন মন্তব্য করা হয়েছে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক পত্রে।

এ সংকট নিরসনে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা লিখিতভাবে ডিসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উপজেলা অধিশাখা) অভিতাভ সরকার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। যাতে প্রতিটি প্রকল্প দরপত্র সিডিউল অনুযায়ী যথাসময়ে শতভাগ মান নিশ্চিত করে বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়টির প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। এ জন্য শুধু নির্দেশনা দিয়ে আমরা বসে থাকছি না, নানাভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ‘এ ক্ষেত্রে কারও কোনো গাফিলতি প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সূত্র জানায়, প্রতি অর্র্থবছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পরিষদে যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার বেশিরভাগ কাজ অর্থবছরের শেষদিকে জোড়াতালি দিয়ে খরচ করা হয়। এমনকি কাজ না করেও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে অহরহ। তদন্তে এ ধরনের অনেক অভিযোগ ইতঃপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে।

এমন চিত্র শুধু উপজেলা পরিষদের ক্ষেত্রে নয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কাজ সংশ্লিষ্ট এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রেও কমবেশি একই অভিযোগ। ‘জুন ফাইনালের মহোৎসব’ বলেও নেতিবাচক কথা সমাজে প্রচলিত আছে বহুদিন থেকে। এ ছাড়া অর্থবছরের শেষদিকে তড়িঘড়ি অর্থ ছাড় করার সংস্কৃতি বিদ্যমান।

এতে করে শত চেষ্টা করেও স্থানীয় সরকার বিভাগের অনেক প্রতিষ্ঠান সব টাকা খরচ করতে পারে না। খরচ করতে না পারলে যথারীতি ৩০ জুনের পর অব্যয়িত অর্থ ফেরত চলে যায়। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এডিপির কাজের অগ্রগতি যথাযথভাবে মনিটরিং করতে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বর্তমান সচিব হেলালউদ্দীন গত ৩০ মে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেন। এরপর তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা রোধকল্পে নিজেই ক্লোজ মনিটরিং শুরু করেন।

এদিকে এমন সংকট নিরসনে সচিবের নির্দেশে ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ডিসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো হয়। ওই পত্রের এক স্থানে বলা হয়, ‘অর্থবছরের শেষ সময়ে জুন মাসে একযোগে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে প্রকল্পের কাজ তদারকি করাসহ কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।’

এতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর জারিকৃত ‘উপজেলা উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা’ জারি করা হয়। এতে এডিপির অর্থায়নে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রকল্প গ্রহণের শেষ সময় ৩১ মার্চ। এ ছাড়া গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের শেষ সময় ৩১ মে।

কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, কতিপয় উপজেলা পরিষদ বিদ্যমান নির্দেশিকা অনুসরণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করায় এডিপির বরাদ্দকৃত অর্থের অংশবিশেষ অব্যয়িত থাকছে। এই অর্থ নিয়মানুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমর্পণ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির উন্নয়ন সহায়তা খাতে বরাদ্দকৃত ৫৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা অব্যয়িত অবস্থায় ফেরত কিংবা সমর্পণ হয়েছে।

এ অবস্থায় বরাদ্দকৃত অর্থ যথাসময়ে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো হল : অর্থবছরের ৩১ মার্চের মধ্যে উপজেলা পরিষদের প্রকল্প গ্রহণ ও চূড়ান্ত তালিকা করতে হবে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে গৃহীত ও চূড়ান্ত প্রকল্প তালিকা ডিডিএলজির কাছে পাঠাতে হবে।

প্রথম কিস্তিতে প্রাপ্ত অর্থের ৪ গুণ+১০%-এর অধিক অর্থের মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের দরপত্র কার্যক্রম শেষ করতে হবে। গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে ২য় কিস্তি পর্যন্ত প্রাপ্ত অর্থের ব্যয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিডিএলজি বরাবর পাঠাতে হবে। যেসব উপজেলা পরিষদ ২য় কিস্তি পর্যন্ত প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হবে না, সেসব উপজেলাকে ৪র্থ কিস্তির বরাদ্দ কর্তন করা হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব উপজেলায় কাজের গতি আশাব্যঞ্জক তাদের কোনো বিশেষ প্রকল্পে এই কর্তন করা অর্থ বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে প্রদান করা হবে।

সবশেষে প্রতিটি প্রকল্পের কাজ অর্থবছরের ৩১ মে’র মধ্যে শেষ করতে হবে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারের অনুকূলে কোনো কার্যাদেশ দেয়া যাবে না। যেসব উপজেলা পরিষদ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিধি মোতাবেক এডিপির অর্থ বরাদ্দ শেষ করতে পারবে না, সেসব উপজেলা পরিষদকে ভবিষ্যতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের অপারগতা ও ব্যর্থতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।

jugantor.com/todays-paper/last-page/218425/