১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১২:৪৬

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আস্থা হারাচ্ছে গ্রাহক

৬ মাসে আমানত কমেছে ৯৫০ কোটি টাকা

পরিচালনা পর্ষদের অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের কারণে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএস) বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে এই খাতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন গ্রাহকরা। অনেক আমানতকারীই জমানো অর্থ সুযোগ-সুবিধা মতো তুলে নিচ্ছেন। এতে কমে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাসে আমানত কমেছে ৯৫০ কোটি টাকা। সম্প্রতি ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ এর মার্চ মাসের প্রান্তিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই চিত্র তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বরে যা ছিল ৪৮ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে আমানত কমেছে ৯৫০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, সামপ্রতিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিপলস লিজিংকে অবসায়নের সিদ্ধান্তের রায় দেন দেশের উচ্চ আদালত। মূলত পিপলস লিজিং বন্ধের খবরে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তি গ্রাহক থেকে শুরু করে ব্যাংক-বীমাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তুলে নিতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিরা পৃথকভাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ আস্থাহীনতা দূর করতে তারা সরকারের সহযোগিতা চান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে আছে। এর মধ্যে অন্তত ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সংকটে রয়েছে। আর বন্ধের উপক্রম হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও ফার্স্ট লিজ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে। এসব গ্রাহক টাকা উত্তোলন করে ব্যাংক বা অন্য কোনো উৎসে বিনিয়োগ করছে।

জানা গেছে, ব্যাংকে যখন সুদহার ছিল ৬ শতাংশেরও কম। তখন গ্রাহক টানতে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে। ইমেইল, মোবাইলে এসএমএস ও কল এবং সরাসরি দেখা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের রাজি করিয়ে আমানত সংগ্রহ করেছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানই এখন অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ ধরনের কার্যক্রমের পর গত বছর সার্কুলার জারি করে মোবাইলে এসএমএস ও কল দেয়া নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংকটের কারণে পুরো খাতে সমস্যা হচ্ছে। এক ধরনের প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোও অর্থ ফেরত নিচ্ছে। এ জন্য সংকট তৈরি হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, আমানত কমে যাওয়ায় দেনা বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। মার্চে বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ছয় মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় বেড়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাত্র তিন মাসে মূলধন কমেছে ২ হাজার ৩১০ কোটি। মার্চে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে মূলধন ছিল ১০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। এতগুলো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খারাপ হতে পারে না।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=188355