২৯ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ১২:২১

বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে ৬১ লাখ মানুষ

বন্যার কবলে ২৮ জেলা

বন্যায় দেশের ২৮ জেলায় ৬১ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন বন্ধ। বন্যার পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় বেড়ে চলছে বিদ্যুৎভোগান্তি। টানা ২২ দিন ধরে বন্যাদুর্গত এলাকায় চাইলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি। বন্যাকবলিত এলাকায় পানিতে বিদ্যুতের লাইন হেলে পড়েছে। পানি না কমলে এসব এলাকার সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, চলমান বন্যায় দেশের ২৮ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ জন। এ ছাড়া ১৪ জেলায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১০ জুলাই উজান থেকে নেমে আসা পানি ও দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে ২৮ জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এখন চাইলেও এসব লাইন সংস্কার করতে পারছি না। পানি কমলে বিদ্যুতের লাইন সংস্কার করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি। পানি কমলে বিদ্যুৎ লাইনে কোনো সমস্যা না থাকলে আমরা সেসব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করব। দেশের বন্যা পরিস্থিতি বলছে, নতুন করে পানি না এলে এই পানি কমতে আরো সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন মানুষকে আরো প্রায় ১৫ দিন অন্ধকারে থাকতে হবে। এখনো দুই লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জের কিছু এলাকা এবং বগুড়া ও শেরপুরের বেশির ভাগ এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হয়েছে। কোনো কোনো জেলার অনেক জায়গায় পানির কারণে বিদ্যুতের খুঁটি কাত হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের সাত উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় এক লাখ ২০ হাজার গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতোমধ্যে পানি নেমে গেছিল। কিন্তু আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি কমার পর আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সংযোগগুলো আবার চালু করেছিলাম। এখনো ৪-৫টা গ্রামে অর্থাৎ অনেক ভেতরের দিকের গ্রামগুলোয় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। ৫০০ থেকে এক হাজার গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের খুঁটির খুব ক্ষতি হয়েছে। অনেক খুঁটি হেলে গেছে। যেসব এলাকায় পানি নামছে, সেসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটি মেরামতের কাজ শুরু করেছি। গত ১৬ জুলাই আরইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তাদের ৩১ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। আর গত ১০ দিনের ব্যবধানে এখন বলা হচ্ছে, ৪০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ বন্যায় গত ১০ দিনে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে ৯ হাজার। গত ১৬ জুলাই আরইবি রংপুর-১ ও ২, দিনাজপুর-১ ও ২, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া-১ ও ২, টাঙ্গাইলে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল। তবে এর মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলের বন্ধ থাকা বেশির ভাগ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তখন ৩৫০ কিলোমিটার লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে আরইবির ৪৫০ কিলোমিটার লাইন। অর্থাৎ পুরাতন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে গেছে পানির তোড়ে। আরইবির এক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক দিন পানি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। বাড়ছে না, কমছেও না। আর পানি না কমলে বিদ্যুৎও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গাইবান্ধা, জামালপুর ও শেরপুরের অবস্থা এখন সবচেয়ে খারাপ।

শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) জেনারেল ম্যানেজার মাসরুল হক খান ইনকিলাবকে বলেন, সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ত্রিশ হাজার। এর মধ্যে বন্যায় প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় ১৫ থেকে ১৬টি ট্রান্সফরমার আমরা বন্ধ রেখেছি। তিনি বলেন, অনেক এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি হেলে গেছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/223606