২৯ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ১২:০৯

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীর বাইরেও

*  ঢাকায় ৪ মাসে এডিস মশা বেড়েছে ৬ গুণ
* পুরো ঢাকা শহরই ডেঙ্গু ঝুঁকিতে
* ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক -মেয়র খোকন
ইবরাহীম খলিল : রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য বলছে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১,৬৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ২৯২১ জন। আর চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ৮৭২৫ জন।

ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢামেক। রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় বাড়তি রোগীদের সেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, তাদের সক্ষমতা রয়েছে ২০০ জনকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার। কিন্তু, রোগীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। ঢামেকের নবমতলায় ডেঙ্গু রোগীদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হলেও হাসপাতালটির বেশিরভাগ বিছানায় ভর্তি রয়েছেন ডেঙ্গু রোগী। সেই তলার বারান্দায় এমনকী, প্রবেশপথে শুয়ে রোগীদের ডেঙ্গু চিকিৎসার সেবা নিতে দেখা যায়।

এদিকে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গত এক মাসে ১০ জন চিকিৎসক ও ২০ জন নার্সসহ মোট ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। শনিবার হাসপাতালটির পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খান এই তথ্য জানান। ডা. আমিন আহমেদ খান বলেন, ‘গত এক মাসে আমার হাসপাতালের ১০ জন ডাক্তার ও ২০ জন নার্স চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের ভেতরে দুই চিকিৎসক এবং দুই নার্স হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।’ পরিচালক বলেন, ‘এই ৩০ জনের ভেতরে এখনো দুই নার্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁরা এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন।’ ডা. আমিন আহমেদ খান বলেন, ‘যে সব চিকিৎসক এবং নার্স ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই এখনো ছুটিতে আছেন। কয়েকজন চিকিৎসক হাসপাতালে কাজ শুরু করেছেন।’ ডা. আমিন আরো বলেন, ‘গত এক মাসে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন আর হাসপাতালের সিটই খালি নেই। ডেঙ্গু নিয়ে আমরা নিজেরাও খুব চিন্তিত। গত জুন মাসে ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বুঝেন এক মাসের ব্যবধানে কত গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

রজাধানীর ঢাকা মেডিকেল আর মুগদা মেডিকেলের মত প্রতিটি সরকারী হাসপাতালে একই অবস্থা বিরাজ করছে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে বেডের বাইরে রোগী নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু আতংক বিরাজ করছে। প্রতিদিন জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসক ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় এসেছিলেন কিংবা ঢাকায় থাকেন। তারা ঢাকা থেকেই সংক্রামিত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন। গেলো কয়েকদিনে যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

গাজীপুর সিটিতেও ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করেছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ২১ জন ডেঙ্গু রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।

গতকাল বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২৮ এ পৌঁছেছে। রংপুর মেডিকেলে গত তিন দিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর আগে আরো চারজন হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে ফিরে গেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দুই নারীসহ ৫ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী। বরগুনায় এখনও পর্যন্ত ১৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন আছেন। পাবনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কুষ্টিয়ায় ১০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অপরদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন।
জ্বরে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে এবং বেশি বেশি পানি, খাবার সেলাইনসহ রোগীকে তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোববার চিকিৎসক ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় এসেছিলেন কিংবা ঢাকায় থাকেন। তারা ঢাকা থেকেই সংক্রামিত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন। গেলো কয়েকদিনে যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। গাজীপুর সিটিতেও ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করেছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ২১ জন ডেঙ্গু রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। টেস্টের মূল্য অনধিক ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

এদিকে এক জরিপে দেখা গেছে, বর্ষা শুরু আগে প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশার সংখ্যা যা ছিলো, তা বর্ষায় বেড়ে হয়েছে ছয়গুণ। আর মূলত এ কারণেই দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত জরিপে দেখা যাচ্ছে- শুধু এডিস মশার সংখ্যাই নয়, মশার লার্ভার ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। অর্থাৎ, সেসব লার্ভা থেকে মশা বের হলে আগামী দিনগুলোতে মশার সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যাবে। গত ১৭ জুলাই ঢাকায় শুরু হওয়া এই জরিপ শেষ হয় গতকাল। জরিপ চলাকালে দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে ১ হাজার বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক বাড়িতে বয়স্ক এডিস মশার ঘনত্ব ২০৭টি। অথচ বর্ষার আগে তথা ৩ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত জরিপে সেই ঘনত্ব ছিলো ৩৬টি। একইভাবে বেড়েছে এডিস মশার লার্ভার সংখ্যাও। প্রাক-বর্ষা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশার ঘনত্ব ছিলো ২৬টি এবং উত্তর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২১টি। নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, দক্ষিণে এর ঘনত্ব ৭৯টি এবং উত্তরে ৫৭টি। গবেষণায় অধিকাংশ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত টায়ারে জমে থাকা পানিতে, প্লাস্টিকের ড্রামে, বালতি, খোলা ট্যাঙ্ক ও ফুলের টবে।

বিশেষজ্ঞদের মত, মশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মানে হলো মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিগুলো একদিকে যেমন অপর্যাপ্ত অন্যদিকে তা অপর্যাপ্তও। ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, “যদি মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত হতো তাহলে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না।”
বাংলাদেশে শনিবার পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার ৫২৮ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮২৪ জন নতুন ডেঙ্গু রোগীর খবর জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, এবছর এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। অধিদপ্তরের মতে ডেঙ্গু জ্বরে মৃতের সংখ্যা অন্তত আট। যদিও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এডিস মশার কামড়ে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সূত্র মতে, এই সংখ্যা আরো অনেক বাড়তে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে অনেক রোগীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে না।

এদিকে পুরো ঢাকা শহরই ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি জরিপ চালানো হয়েছে, এর ফল শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। গতকাল রোববার বিকেলে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে জরিপ চালানো হচ্ছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন অধিদফতরের মহাপরিচালক। সেই জরিপের ফল কীÍ জানতে চাইলে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রতিবেদন এখনো তৈরি হয়নি। হলে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে, আমাদের হিসাবে পুরো ঢাকা শহরই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।

ডা. আবুল কালাম বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বেগে আছে। তাই আমরা প্রতিদিনই মিডিয়ার মাধ্যমে সাবাইকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আপডেট জানাতে চাই। প্রতিদিনই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হবে। এছাড়া, প্রতিটি হাসপাতালও একজন করে মুখপাত্রের নাম দেবে। তার সঙ্গে কথা বলেই ওই হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগী ও চিকিৎসার সব তথ্য জানা যাবে। মহাপরিচালক জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত যাদের অবস্থা গুরুতর (ক্রিটিক্যাল), তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে জোন-২-তে যারা আছেন, অর্থাৎ যাদের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে, তাদের চিকিৎসাতেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বেসরকারি প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারদের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু পরীক্ষার খরচ বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডা. আবুল কালাম। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোকে এই পরীক্ষা বিনামূল্যেই করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য একটি ওয়েলকাম ডেস্ক বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করতে বলা হয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা আগামী সপ্তাহে আবার তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। আমরা যে গাইডলাইন অনুসরণ করছি, তা হালনাগাদ করার প্রয়োজন হলে তারা জানাবে। আমরাও সে অনুযায়ী গাইডলাইন আপডেট করব। তা না হলে বর্তমান গাইডলাইনই আমরা মেনে চলব।

সারাদেশে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, আগামী ১ আগস্ট সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার স্কুল-কলেজগুলোতে যাবেন। তারা নিজ নিজ এলাকা ও বাসাবাড়ির পরিচ্ছন্নতাসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রসঙ্গে পরামর্শ দেবেন। এছাড়া আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ১০টি মনিটরিং টিম গঠন করছি। তারা বিভিন্ন এলাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মনিটরিং করবে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ডেঙ্গুর ভয়াবহতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি খুব শিগগিরি যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’

গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে ডিএসসিসির মেয়র সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন। সাঈদ খোকন বলেন, আগামীকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে বিনামূল্যে অ্যারোসল স্প্রে বিতরণ করা শুরু হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অচিরেই আমরা নগরীকে ডেঙ্গু মুক্ত করতে সক্ষম হব।

প্রসঙ্গত, এ বছর রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার ৫২৮ জন মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর সেই সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার ১৪৮ জন। গত ১৮ বছরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হয়েছে মাত্র দুবার। এর আগে ২০০২ সালে রোগীর সংখ্যা ছিলো ৬ হাজার ২৩২ জন।
বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানানÑ

রাজাপুরে যুবতীর মৃত্যু
রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা : ঝালকাঠির রাজাপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নিগার সুলতানা (২৮) নামে এক যুবতীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিগার সুলতানা উপজেলা সদরের জেলেপাড়া এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন খানের স্ত্রী ও উপজেলার দক্ষিন তারাবুনিয়া এলাকার সুলতান মৃধার মেয়ে এবং দুই সন্তানের জননী। নিগার সুলতানা ন্যাশনাল সার্ভিস এর আওতায় উপজেলা প্রাণীসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিগার সুলতানার স্বামী ঢাকায় থাকায় কয়েকদিন আগে তিনি ঢাকায় বেরাতে যান। সেখানে গিয়েই জ্বরে আক্রান্ত হন নিগার সুলতানা। এরপর বাড়ি আসলে তার জ্বর বৃদ্ধি পাওয়ায় পাশ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শুক্রবার তাকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানে অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিমে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোসনা করেন।

বাগেরহাটে চারজন সনাক্ত
বাগেরহাট সংবাদদাতা : বাগেরহাটে ডেঙ্গু আক্রান্ত চারজনকে সনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত চার রোগীই বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ডেঙ্গু আক্রন্তরা হলেন, বাগেরহাট শহরের নাগের বাজার এলাকার নরুজ্জামানের ছেলে শিপন (২৫), দেপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আর ইমরান (২১), বাদোখালি এলাকার আবু বকরের ছেলে কায়কোবাদ (২৩) এবং সায়রা এলাকার শেখ মোস্তাফার ছেলে ইব্রাহিম শেখ (২৪)। এর মধ্যে শিপন ছাড়া অন্য তিনজন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে গেছেন।রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. জি কে এম সামসুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বাগেরহাট সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে তিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে গিয়েছে। শিপন নামের এক রোগী পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সর্ব প্রথম নিজেকে মশার কামড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মশার বংশ বিস্তার রোধে বাড়ির আঙ্গিনা, ড্রেন, নালা-ডোবাসিহ সকল প্রকার জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে পানি জমতে না পারে। এছাড়া নারকেল ও ডাবের খোলস বাইরে থাকলেও পানি জমতে পারে। তাই নারকেল ও ডাবের খোলসের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া জ্বর হয়ে কারও যদি রক্ত চাপ কমে যায়, শরীর, মাথা ব্যাথা ও বমি হয় তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ করেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।

১৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত বরগুনায়

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা : ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেন। পুরুষ ১২ জন মহিলা ৪ জন্য এর মধ্যে ৫ জনকে বরিশাল রেফার করা হয়েছে। অধিকাংশই রোগীই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি ঢাকা থেকে ফিরেছেন তারা।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জান গেছে, গত ৮ জুন বরগুনার ক্রোক এলাকার সাদেক, ২২ জুন পিটিআই এলাকার সাইফুল্লাহ এবং ২৩ জুন হেউলিবুনিয়া এলাকার রাব্বি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও প্রতিদিন ২/৩ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে আসতেছে।

এদিকে মশা নিধন করতে তৎপর রয়েছে বরগুনা পৌরসভা। ইতি মধ্যে বিভিন্ন বাগান, জলাশয়, বাড়ির আঙ্গিনা, ড্রেনসহ সব যায়গায় মশা নিধন ওষুধ প্রয়োগ করছেন।

মশা নিধন বিষয় বরগুনা পৌর মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের কথা শুনেই ঢাকা থেকে মশা নিধনের ওষুধসহ মেশিন নিয়ে এসেছি। এদ্বারা বিভিন্ন জলাশয় বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় ও ড্রেনে মশা নিধনের ওষুধ প্রেয়োগ করছি আশা করি ডেঙ্গু জ্বর থেকে বরগুনার মানুষ মুক্তি পাবে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাফ হোসেন বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১৬ জনকে আমরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেছি। এদের মধ্যে ৮ জনডেঙ্গু জ্বরে আক্রাš হয়ে অতি সম্প্রতি ঢাকা থেকে বরগুনা ফিরেছেন। তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। ৫ জনের অবস্থা গুরুত্বর দেখে বরিশাল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

https://www.dailysangram.com/post/384513