২৮ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ৩:৪৯

ভয়ংকর রূপে ডেঙ্গু ঘণ্টায় ভর্তি ২৮

রোগীর চাপে নাভিশ্বাস হাসপাতালগুলোর * আক্রান্তের সংখ্যায় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ * অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার শঙ্কা

বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি মৌসুমের (এপ্রিল-অক্টোবর) তিন মাস বাকি থাকতেই রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসাবে শুধু শনিবারই রাজধানীসহ দেশের ছয় বিভাগের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৬৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় আক্রান্ত হচ্ছে ২৮ জন। যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। রোগীর চাপে নাভিশ্বাস উঠেছে হাসপাতালগুলোর সংশ্লিষ্টদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে যেখানে গোটা মৌসুমে আক্রান্ত হয়েছিল ১০ হাজার, সেখানে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮ জন। আর মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ৮ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।

আর মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের কয়েকগুণ বেশি হবে। কারণ প্রক্রিয়াগত কারণে এই হিসাব অন্তর্ভুক্ত করতে বেশ সময় লেগে যায়। যেমন শুক্রবার ঢাবির একজন শিক্ষার্থী ও একজন নারী চিকিৎসক এবং শনিবার জাবি শিক্ষার্থীসহ যে তিনজন মারা গেছেন তাদের সরকারি মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এদিকে মৌসুম শেষ হতে এখনও বাকি ৩ মাস। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

আরও জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৬৭২১ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ৬৫৮, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২০০, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪০, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১৯, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২০৭, বারডেমে ৩৩ জন।

এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুরে ৬১ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ১ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৩ জন। চট্টগ্রামে ৪৯ জন, ফেনীতে ৪৯ জন, কুমিল্লায় ১ জন, চাঁদপুরে ২৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৪ জন এবং নেয়াখালীতে ৫ জন।

খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪ জন, কুষ্টিয়ায় ১৯ জন, যশোরে ২০ জন, ঝিনাইদহে ৩ জন, বগুড়ায় ৪০ জন, বরিশালে ৩৫ জন এবং সিলেটে ১৩ জন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, আক্রান্তদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগী বেশি। ডেঙ্গু সংক্রমণের একটি বড় স্থান স্কুল।

বেশির ভাগ শিশুই স্কুলে থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে অনেকেরই জ্বর হলে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছে। ফলে সে ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে নিজ জেলায়, নিজ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে এবং তার মাধ্যমে সেখানেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু রোগ।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু সেবা সম্প্রসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নির্বিঘ্ন করতে অস্থায়ীভাবে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রো লিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ডেঙ্গু প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি নিজে হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করেন।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য এবং বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। কারণ মৌসুম এখনও ৩ মাস বাকি। এ সময় এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেই লাভ হবে না। আগে মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মশার বিরুদ্ধে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে।

এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অতিসত্বর এটাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম। তিনি বলেন, এটা এখন সময়ের দাবি। এই দুর্যোগ জনগণকে সঙ্গে নিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। এখানে লুকোচুরির কোনো সুযোগ নেই।

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্যার সমিুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যাদের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে তারা ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। ডেঙ্গুর রোগীদের চাপ সামাল দিতে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারিসহ সব হাসপাতাল।

ঢামেক হাসপাতাল গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। একদিনে এত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ। ঢামেক হাসপাতালের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯০ জন রোগী ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এর মধ্যে ১ হাজার ৩২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং এখনও ভর্তি আছেন ৬৫৮ জন। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন, ফেব্রুয়ারিতে একজনও ভর্তি হননি। এরপর মার্চে ৪ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ৮ জন ভর্তি হয় এবং প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে ফেরেন।

জুন মাসে এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির হার অনেক বেড়ে যায়। এ মাসে ১৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে একজন মারা যান। আর জুলাই মাসের শনিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৬৯০ জন ডেঙ্গ রোগী ভর্তি হয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বাড়ায় রোগীদের ফ্লোরিং করতে হচ্ছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালটির বিভিন্ন ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। রোগীর এতটাই চাপ যে, নবম তলার ফ্লোরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধশত রোগী।

জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে ১নং ওয়ার্ডে। সেখানে ৬০ শয্যায় ১৪০ জন রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে।

এর মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি শিশু রোগী রয়েছে। শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও স্বাচিপ সভাপতি ডা. আয়নাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে শিশু হাসপাতালে ৮৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এ পর্যন্ত ২৯০ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে উপযোগী স্থান স্কুল। সেখানে তারা দীর্ঘ সময় এক স্থানে বসে থাকে। যা মশাদের কামড়ানোর জন্য উপযোগী। তিনি বলেন, শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করা হয়েছে।

বেড়েছে রক্তের চাহিদা : সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে রক্তের চাহিদা। ব্লাডব্যাংকগুলো বলছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় আগের চেয়ে রক্তের চাহিদা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত রক্ত ও প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয়। এক ব্যাগ প্লাটিলেটের জন্য চার ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। তাই রোগীর সংখ্যা বাড়ায় বেড়েছে রক্তের চাহিদা।

বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেল চালু : শনিবার দুপুর ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের নিচতলায় ডেঙ্গু ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় ৪০ শয্যাবিশিষ্ট ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেল চালু করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান এটি উদ্বোধন করেন। ৪০ শয্যার মধ্যে ২৫টি শয্যা কেবিন ব্লকে এবং অন্য শয্যাগুলো ডি ব্লকের মেডিসিন বিভাগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আজ চালুকৃত ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলে ৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

অধিদফতরের নতুন সিদ্ধান্ত : এদিকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা নিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন হাসপাতাল পরিচালক ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।

এ সময় তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দেন- ১. মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকরা ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কদের বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, জনপ্রিতিনিধি ও সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ, প্রতিকার ও রোগ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান।

২. ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাস্থ্যবার্তা প্রদান অব্যাহত রাখা ৩. সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ হেল্প ডেস্ক স্থাপন ৪. বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের উদ্যোগে স্ব-স্ব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ৫. জরুরি প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান ৬. সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোয় পবিত্র ঈদুল আজহার সময় উদ্ভূত ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ৭. জেলা, উপজেলা ও টারশিয়ারি পর্যায়ের সব হাসপাতালের চিকিৎসককে ন্যাশনাল ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান।

ঢাকার বাইরের চিত্র : যুগান্তরের বিভিন্ন ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে দেয়া হল-

বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এখানে চিকিৎসক, মেডিকেল স্টুডেন্ট, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার তিন নারীসহ ২৯ জন চিকিৎসাধীন। এরা সবাই ঢাকা থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে এনেছেন।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় শজিমেক হাসপাতালের দোতলায় ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ড’ খোলা হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদকে সভাপতি করে ১০ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শজিমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আরিফুর রহমান তালুকদার জানান, শুক্রবার রাত পর্যন্ত গত কয়েকদিনে এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩ নারীসহ ২৮ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শনিবার নতুন করে একজন ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের দোতলায় ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ড’ খোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ধীরে ধীরে হলেও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে। প্রতিদিন নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার তথ্য মিলছে। চলতি বছরে গত ৬ মাসে যেখানে ৫ জন রোগী ছিল; সেখানে এখন প্রতিদিনই অন্তত ছয়জন করে রোগী বাড়ছে।

শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৫ জন ও বেসরকারি সিএসসিআর হসপিটালে ১ জনসহ ছয়জন রোগী ভর্তি হয়। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫৪ ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নিশ্চিত করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।

এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশের পরও শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু কর্নার চালু করতে পারেনি চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আজ (রোববার) থেকে হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নার চালু করার কথা রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ২০ শয্যার একটি কর্নার চালু করার কথা রয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ১৫টি উপজেলা তদারকির জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলাসহ চট্টগ্রামে সম্ভব সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

রংপুর ব্যুরো জানায়, রংপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ১৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরা সবাই ঢাকা থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রংপুর ফিরেছেন। মঙ্গলবার থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে জ্বর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

শনিবার সকালেও তিনজন ভর্তি হয়েছেন। রমেক হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার একদিনে এক শিশুসহ তিনজন ভর্তি হয়েছে।

এছাড়া শনিবার সকালেও আরও একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে মানিকগঞ্জে গত এক সপ্তাহে ১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলেন। এ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নিয়ে বেশ বেকায়দায় ও চিন্তিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মানিকগঞ্জের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রক্ত পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্ট না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীরা।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবদুল আওয়াল বলেন, গত বছরও ডেঙ্গু রোগীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এ কারণে ডেঙ্গু রোগের এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্টের প্রয়োজন পড়েনি। হঠাৎ করেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তারা টেনশনে পড়েছেন। চলতি অর্থবছরের বাজেট শেষ হওয়ায় ইচ্ছে করলেই এখন ওইসব এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্ট কেনা যাচ্ছে না। তবে তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/203958/